ঢাকা: ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেট তো দেওয়া হল, কিন্তু জনগণের জীবনমান পরিবর্তনে এই বাজেট কতটুকু কার্যকর হবে?
এবারের বাজেট মরার উপর খাড়ার ঘা।২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট এক ভয়াবহ বাস্তবতার নাম। জনগণ যখন জিনিসপত্রের দামের চাপে জর্জরিত, আয়-ব্যয়ের অসমতায় দিশেহারা, তখন এই বাজেট সেই দুঃখে আরও লবণ ঢেলেছে।
মধ্যবিত্তের শ্বাসরোধ হয়েই আছে, এখন আরো হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও ভর্তুকি হ্রাসের মাধ্যমে জীবনযাত্রা ব্যয় আরও বাড়বে।
কোনো দুর্নীতি নিরোধক প্রস্তাব নেই, তাহলে এই বাজেট কার জন্য? জনগণের বাজেট তো নয়।
প্রান্তিক জনগণ, বেকার তরুণ, কৃষক, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা—কারো জন্যই বাজেটে কিছু নেই।
যা দেখা গেলো, এই বাজেট কিছু ভোগবাদী ধনী শ্রেণীর জন্য প্রণীত একটি দলিল। দেশের জনগণের অধিকার এই বাজেটে নেই।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি খাতে এডিপি বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
শিক্ষা খাতের উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশনে এবং গবেষণায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে এই বাজেট কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়।
অবৈধ সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের কোন রাজনৈতিক বৈধতা নেই।
জনগণের চাহিদাকে পুরোপুরি হেলাফেলা করে এই বাজেট তৈরি হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সাফল্যকে দোষারোপ করতে অসত্য বক্তব্যের ফুলঝুরি ছোটানো হয়েছে।
অসাংবিধানিক সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেটের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
লীগ বলছে এটি জনতার নয়, ক্ষমতার বাজেট।
অবৈধ দখলদার সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের কোন রাজনৈতিক বৈধতা নেই। অনির্বাচিত কোন সরকার জনগণের ওপর করারোপের কোন আইনি ক্ষমতা রাখে না।
সরকার অন্তবর্তী হলে দৈনন্দিন আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখাই কেবল তাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। রাজনৈতিক দর্শন সম্বলিত বাৎসরিক আর্থিক বিবরণী বা বাজেট প্রদান করা তাদের কাজ না।
কিন্তু ড. ইউনূসের দখলদার সরকার অন্য সব এখতিয়ারবহির্ভূত কাজের মতো বাজেট প্রণয়নের কাজও করেছে। বাজেট কেবল সংখ্যার সমষ্টি নয়; এটি একটি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়বদ্ধতা, ইউনূস সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সেই দায়বদ্ধতা থেকে পুরোপুরি বিচ্যুত।
এটি যেমন জনগণের চাহিদাকে উপেক্ষা করে তৈরি হয়েছে, তেমনি সংবিধান আদিষ্ট রাজনৈতিক নৈতিকতাও এতে অনুপস্থিত।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বাজেট হলো জন-প্রতিনিধিদের মাধ্যমে অনুমোদিত একটি রাজনৈতিক চুক্তি। কিন্তু বর্তমান সরকার একটি প্রশাসনিক কাঠামো—যেখানে সংসদীয় বিরোধী দল, সংসদীয় বিতর্ক কিংবা জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ অনুপস্থিত।
অংশগ্রহণহীনতা ও গণতান্ত্রিক ঘাটতি
এই বাজেট তৈরি হয়েছে নাগরিক সমাজ, অর্থনীতিবিদ, পেশাজীবী সংগঠন, বিরোধী দল, কিংবা শ্রমজীবী মানুষের মতামত ছাড়াই।
জনমত যাচাই বা জনসাধারণের প্রস্তাব গ্রহণের কোনো প্ল্যাটফর্মই চালু করা হয়নি। এটি একটি ক্লোজড-ডোর টেকনোক্রেটিক প্রক্রিয়া—যা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ধারণার পরিপন্থী।
দায় এড়ানোর কথামালা
আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্য বাংলাদেশের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি, জীবনমানের উন্নতি, অবকাঠামো উন্নয়নের অভাবিত অগ্রগতির সাক্ষী দেশের মানুষ।
বিশ্ববাসী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশকে ‘গ্রোথ মিরাকল’ হিসেবে অভিহিত করতেন।
কিন্তু ড. ইউনূসের মাত্র দশ মাসের শাসনে তার সমর্থক পত্রিকাও লিখতে বাধ্য হচ্ছে দেশে বিনিয়োগে স্থবিরতা, অর্থনীতির গতিহীনতা, অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কার কথা।
সবমিলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। এই অবৈধ সরকার এহেন প্রেক্ষাপটে বাজেট বক্তৃতায় সমস্ত দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ সরকারের উপর।
একদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের উপর দোষ চাপিয়েছে, অন্যদিকে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েশনের লক্ষ্যে কাজ করার কথাও বলেছে।
এক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যদি অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে থাকে এবং ইউনূস সরকারের দোষ মাসে প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশের নিচে নেমে আসে, তাহলে পরের বছর এলডিসি থেকে উত্তরণের বাস্তবতা থাকে কি?
যদি থাকে তাহলে তা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের শক্ত অর্থনৈতিক অবস্থার কারণেই সম্ভব হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের অবস্থায় দেশ পৌঁছালো কীভাবে? খুব সাধারণ যুক্তিতেই সরকারের এই মিথ্যা প্রচারণা খারিজ হয়ে যায়।
প্রস্তাবিত বাজেটের শুরুতেই বলা হয়েছে, তারা প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রিক বাজেট দেবে না। এটা একটি প্রতারণামূলক বক্তব্য।
প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ না করে বাজেট প্রণয়ন করা হলো- লক্ষবিহীন গন্তব্যের উদ্দেশে পথচলার মতো। কমিটমেন্ট বা অঙ্গীকারহীনতাই এই সরকারের বড় একটি বৈশিষ্ট্য।
বাজেট বক্তৃতাতেও তা দৃশ্যমান স্বাক্ষর রেখেছে তারা। একথা বলে সরকার ৫ দশমিক ৫ শতাংশের একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যা আওয়ামী লীগ আমলে অর্জিত গড় প্রবৃদ্ধি থেকে অনেক কম।
অথচ এবার প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, অথচ স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হলে প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি হবার কথা। লক্ষ্য কম ধরেও তা অর্জনের অঙ্গীকার না থাকায় প্রবৃদ্ধিকেই আক্রমণ করে বসেছে সরকার।
অবশ্য সমালোচকেরা বলছেন যে, বড় বড় লুটপাট ও দুর্নীতিকে আড়াল করতে প্রবৃদ্ধির অংক কমিয়ে দেখাতে চায় তারা। কেননা, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের শ্রমে-ঘামে গড়া চলমান অর্থনীতিতে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি আরও বেশি হবার কথা।
মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি
সংকটের সময়ে সাহসহীন বাজেট
বাংলাদেশে বর্তমানে ডলার সংকট, রেমিট্যান্সের হ্রাস, বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি, বেকারত্ব এবং জলবায়ু ঝুঁকির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছিল একটি সাহসী, পুনর্বিন্যাসকৃত এবং বৈষম্যহ্রাসক বাজেট। কিন্তু এই বাজেট নতুন কোনো দিগন্ত উন্মোচন করেনি।