ঢাকা: বাংলাদেশে নারীদের প্রতি সহিংসতা তুমুল হারে বাড়ছে। পুরুষরা নারীদের খোলাখুলি রাস্তাঘাটে মারধর করছে। অথচ প্রতিবাদ করলেই তাদের নারীবাদী ট্যাগ দিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে।
শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন এবার মুখ খুলেছেন। এর আগে তিনি বলেছেন,জুলাইয়ে আমাদের যে এত বড় গণঅভ্যুত্থান হলো সেটির মূল লক্ষ্য ছিল সমতা, প্রাপ্যতা। সমাজ গঠনে, রাষ্ট্র পরিচালনায় এগুলোর অন্তর্ভুক্তি থাকার কথা ছিল।
কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এখন একটি গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। ফলে নারী ও সংখ্যালঘু নির্যাতন ও মুক্তিযোদ্ধাদের অপদস্ত করার ঘটনা ঘটেছে। এসব বিষয়ে আমাদের সবার সোচ্চার হওয়া জরুরি।
৫ আগস্টের পরই দেশে প্রকাশ্যে কয়েকজন যুবক মিলে এক যৌনকর্মীকে মারধর করেছে। কক্সবাজারে নারীকে কান ধরে উঠবস করাতে দেখা গেছে। এসব কারণে একজন যৌনকর্মী আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিল।
রংপুর, গাইবান্ধায় নারীর ফুটবল খেলায় বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। কয়েকজন নায়িকার শোরুম উদ্বোধনে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।
আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীকে হিজাব পরে মিছিল করতে দেখা গেছে। সর্বোপরি এখানে খারাপ ও ভালো নারী বলে পার্থক্য তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠী উস্কানি দিচ্ছে। সরকার তাদের মদদ দিচ্ছে।
দেশে ধর্ষণের ঘটনায় আসামি জামিন পেয়ে যায়। এতে নারী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
ধর্ষণের পরে কাউন্সেলিং করা হয় না। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করায় ধর্ষক ভিকটিম ও পরিবারকে হেনস্তা করার চেষ্টা করে।
জোবাইদা নাসরিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
নাসরিন বলেন, তিনি একটি চিঠি পেয়েছেন যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে তাঁকে মাথা ঢেকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জার্মানি থেকে ‘নিউজ১৮’ -এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে অনেক কথাই বলেছেন। এবং ডঃ নাসরিন বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিকে “করুণ” বলে বর্ণনা করেছেন।
নারীরা তাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলার জন্য হুমকি এবং সামাজিক ভয় ভীতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
বাংলাদেশে নারীদের অবস্থা ভীষণ শোচনীয়। তিনি বলেন, দেশে নারীদের অবস্থা উন্নত করার উদ্দেশ্যে মহিলা কমিশন যে সুপারিশগুলি পেশ করেছিল, তা মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলি দ্বারা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
আরও খারাপ বিষয় হল, কমিটিতে যারা কাজ করেছিলেন তাদের এখন প্রকাশ্যে হুমকি এবং মানহানি করা হচ্ছে, অনেককে “যৌনকর্মী” হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে যাতে তাদের চুপ করানো যায় এবং তাদের অসম্মান করা যায়।
হেফাজতে ইসলাম এবং জামায়াতে ইসলামীর মতো গোষ্ঠীগুলি কমিশনের পরামর্শের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য সমাবেশও করেছে, সরকারকে সেগুলি কার্যকর না করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
এবং অন্তর্বর্তী সরকার এই গোষ্ঠীগুলির দ্বারা প্রভাবিত বলে মনে হচ্ছে।
জোবাইদা নাসরিনকে প্রশ্ন করা হয়, ‘গত বছরের প্রতিবাদ আন্দোলনে নারীরা বেশ প্রকাশ্যে ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাহলে তাদের প্রতি হঠাৎ এই মনোভাবের পরিবর্তন কেন’?
উত্তরে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের সাফল্যকে বিপরীতমুখী করার একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ।
জুলাই আগস্টের বিক্ষোভের সময় বিপুল সংখ্যক মহিলা অংশগ্রহণ করেছিলেন- মধ্যরাতেও তারা গিয়েছিলেন, এবং নিজেদের ইচ্ছেমতো পোশাক পরেই।
কিন্তু সেই সময় কেউ আপত্তি জানায়নি। কিন্তু এখন, সেই একই মহিলাদের অশ্লীল ভাষা এবং হয়রানির লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।
তিনি এর জন্য এনসিপি- কে দায়ী করেন।
বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এনসিপি এতে জড়িত।
‘বাংলাদেশের নারীদের বর্তমান পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন’? জিগাসা করা হয় জোবাইদা নাসরিনকে!
তিনি পরিষ্কার বলেন, নারীরা ভীত। অনেকেই তাদের পোশাকের ধরণ পরিবর্তন করতে শুরু করেছেন—কোন আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে নয়, বরং ক্রমবর্ধমান সামাজিক চাপের কারণে। মানসিক এবং সামাজিক চাপ অপরিসীমভাবে আসছে নারীদের উপর।
নাসরিন আরো বলেন সাক্ষাৎকারে, ‘আমাকে সরাসরি কিছু বলা হয়নি, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে মাথা ঢেকে আসার পরামর্শ দিয়ে একটি চিঠি পেয়েছি।
আমি আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম এবং শেখ হাসিনার শাসনের বিরোধিতা করেছিলাম – তখনও আমি হয়রানির সম্মুখীন হয়েছিলাম। এখন যা ঘটছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে যারাই কথা বলার সাহস করে, তাঁদেরই টার্গেট করা হচ্ছে’।
এর আগে শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেছিলেন, ‘নারী অধিকারের আন্দোলনকে মৌলিকভাবে পুরুষের আন্দোলনে পরিণত করা না গেলে বাস্তবে নারীর অধিকার রক্ষা করা কঠিন।
কারণ সংশোধনটা দরকার প্রথমে পুরুষের। আর সেখানে আরও বেশি কাজ করা উচিত’।