লন্ডনের বাতাসে হালকা ঠান্ডা, কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির গন্ধে যেন হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে টেমসের পাড়। আর সেই গন্ধ ছড়াচ্ছেন—ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

অর্থনীতির নোবেলজয়ী, এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করতে চাওয়া একজন ব্যক্তি। কিন্তু প্রশ্ন একটাই: তিনি কেন ব্রিটেন গেলেন? কী উদ্দেশ্যে? এবং—এই সফরের পেছনের গোপন গল্পটাই বা কী?

চিঠি ও চায়ের নিমন্ত্রণ—টিউলিপের টানাপোড়েন-

সফরের শুরুর আগেই চমক। ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক (যিনি আবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয়া), একটি চিঠি লেখেন ইউনূস সাহেবকে—প্রধান উপদেষ্টাকে নয়!

চিঠিতে একরকম খোঁচা: সত্য জানতে চাইলে হাউজ অব কমন্সে এসে চা খেয়ে যেতে পারেন, চাইলে দুপুরের খাবারও আছে।

চিঠির ভাষা শিষ্ট, কিন্তু সুর বিদ্রুপপূর্ণ। প্রশ্ন জাগে: ইউনূস সাহেব কি সত্যিই যাচ্ছেন চা খেতে, নাকি অন্য কোনো ‘গরম পানীয়’ ঢালতে?

তারেক-ইউনূস বৈঠক: বিএনপির ‘লন্ডন ক্যান্টনমেন্টে’ সিগন্যাল বদল-

প্রথমে গুজব, পরে সত্যে পরিণত।

ইউনূস সাহেবের পক্ষ থেকে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ যায়। বিএনপির প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল দ্বিধান্বিত।

অবশেষে স্থায়ী কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেয়—হ্যাঁ, দেখা হবে। অদ্ভুত ব্যাপার, তারেককে দেয়া হয় সর্বময় ক্ষমতা!

যেন এই সফরেই তৈরি হচ্ছে কোনো বড় ধরনের সমঝোতার নীল নকশা! সেই নীলনকশায় কি কেবল রাজনীতি, নাকি আসছে কোন অন্তর্বর্তী সরকার, কোন ‘নিরপেক্ষ চেহারা’র মুখোশ?

এয়ারবাস, কমিশন, এবং ‘উড়ন্ত’ স্বপ্ন
সফরের প্রথম দিনেই ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে এয়ারবাস ও আরেক এভিয়েশন কোম্পানি।

এয়ারবাস দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বাজারে ঢুকতে চাইছে। আওয়ামী লীগ ঝুলিয়ে রেখেছিল।

এখন ইউনূসের সঙ্গে কথা—এর মানে কি তিনি অন্য দরজায় লবিং খুলে ফেলেছেন?

সরকার যদি হয় তাঁর পকেটে, বন্দর আর আকাশ দুটোই কি যায় তাঁর হাতের মুঠোয়? প্রশ্নটা গুরুতর: কমিশনের গন্ধ কি আগে থেকেই বাতাসে?

স্টারমার অপমান, না ধোঁয়া তুলে ফাঁকা মাঠে গোল?

বলা হচ্ছিল, ইউনূস সাহেবের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে নাকি সাক্ষাৎ হবে। কিন্তু হঠাৎ জানা গেল, স্টারমার তো কানাডায়! সাক্ষাৎ বাতিল?

নাকি আসলে কখনোই ঠিক হয়নি? ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এক এমপি এমন তথ্য দিয়ে গেছেন প্রেস উইংকে।

ব্যাপারটা কেমন একটা ‘জাতে না ওঠা’ অপমানের মত। একজন বিশ্বখ্যাত ‘শান্তির নোবেল প্রাপ্ত’ ব্যাক্তি, কিন্তু তাঁকে সময় দেন না নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী? বুঝে নিতে পারেন: গ্লোবাল রাজনীতিতে কার কদর আসলে কতটুকু।

খলিলুর রহমান: দুইদিন আগেই ‘নাগরিকত্ব’ গালি, এখন একসঙ্গে বসে চা?

এই সফরে আছেন তথাকথিত মানবিক করিডরের স্থপতি খলিলুর রহমান। এই সেই ব্যক্তি যিনি দুই দিন আগেই তারেক রহমানকে নিয়ে নাগরিকত্ব ইস্যুতে বিষোদগার করেছেন।

এখন তারেকের সঙ্গে কি তিনি টেবিলে বসবেন? অথবা, তিনি কি ক্ষমা চাইবেন? নাকি এসবই সাজানো নাটক, যার মঞ্চ তৈরি হচ্ছে একটি নতুন ‘পাওয়ার শিফট’-এর জন্য?

পুরস্কার, না পুরাতন কৌশল?

বলা হচ্ছিল—ইউনূস সাহেবকে ব্রিটেনের রাজা নাকি পুরস্কার দেবেন! সোশ্যাল মিডিয়ায় গুঞ্জন উঠেছিলো অনেক আগে থেকেই।

কিন্তু এখন খবরে, তাঁর নামই নাকি নাই পুরস্কারের তালিকায়! তাঁর বাচাল প্রেস সচিব কিছু বলছেন না!

এত সোশ্যাল মিডিয়া স্যাভি একজন মানুষ—একটা স্ক্রিনশট, একটা বিবৃতি—কিছুই নাই? পুরস্কার না থাকলে সফরের অজুহাত কী? সফরের আসল উদ্দেশ্যটাই বা কী?

প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত একটাই: সফরের খরচ কার পকেট থেকে?

প্রশ্নের কেন্দ্রে ফিরে আসা যাক। এই সফর রাষ্ট্রীয় সফর না ব্যক্তিগত সফর? জনগণের করের টাকায় বিশাল বহর, বিমানবন্দরে ভিআইপি রিসেপশন, হোটেল, মিটিং, নিরাপত্তা—সব কি দেশের স্বার্থে?

নাকি কিছু অদৃশ্য বোর্ডরুমে তৈরি হচ্ছে এমন কোনো চুক্তি, যার খেসারত দিতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে?

জাতির জানার অধিকার আছে
দেশের রাজনীতি যখন বিক্ষুব্ধ, তখন এমন সফর শুধু ‘ভদ্রলোকের বেড়ানো’ হতে পারে না।

ইউনূস সাহেব, আপনি যদি সত্যিই গণতন্ত্র ফেরাতে চান—তাহলে আপনার সফরের প্রতিটি খুঁটিনাটি জানান জাতিকে।

চা, চিঠি, তারেক, স্টারমার, এয়ারবাস—সবই যদি সৎ উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে লুকোচুরির কী দরকার?

নইলে সবাই বলবে—চা না, এই সফর ছিল চক্রান্তের আগুনে ধোঁয়া ছাড়ার খেলা।

#চিররঞ্জন সরকার

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *