বরিশাল: একজন নারীকে প্রকাশ্যে লাথি মেরে জামিনে বেরিয়ে আসার পর যখন তাকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয় তখন বুঝতে বাকি থাকে না, আমাদের সমাজ কোন পথে হাঁটছে।
একটা সমাজ কতটা বিকৃত হলে, একজন নারী নির্যাতনকারীর গলায় ফুলের মালা পরানো হয়!
নারীর মর্যাদা কি এতোই তুচ্ছ? নারীর প্রতি সহিংসতা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এমন অপরাধের পরেও যদি কোনো ব্যক্তিকে ‘নায়ক’ বানানো হয়, তবে তা কেবল অপরাধীকেই নয়, পুরো সমাজকে উৎসাহিত করে ভুল বার্তা দেয়। সে দেশে স্ত্রী নির্যাতন হবে এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে নারী নির্যাতনকারী সামাজিকভাবে রিওয়ার্ড পায়, ফুলের মালা দিয়ে জেল গেট থেকে বরণ করা হয়।
ঘরের স্ত্রীদের উপর প্রতিদিন অত্যাচার হচ্ছে।
সঙ্গী বা স্বামীর হাতে নারীদের সহিংসতার শিকার হওয়ার হার দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় তুলনামূলকভাবে বেশি।
সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে বরিশাল ও খুলনায়। এবং সবচেয়ে কম ঘটছে সিলেটে।
তবে কম বলে কিছু নেই। সেখানেও হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশের ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ প্রতিবেদন ২০২৪’–এ উঠে এসেছে এই তথ্য।
এ বছরের মার্চে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করে বিবিএস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সঙ্গী বা স্বামীর হাতে জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও শারীরিক, যৌন, মানসিক ও অর্থনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন—এমন নারীর হার বরিশালে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮২ শতাংশ।
উচ্চহার রয়েছে খুলনাতেও, ৮১ শতাংশ।
সবচেয়ে কম সিলেটে, প্রায় ৭৩ শতাংশ।
ঢাকায় এ হার ৭৩ শতাংশ।
চট্টগ্রামে প্রায় ৭৬ শতাংশ,
ময়মনসিংহে ৭৫ শতাংশ,
রাজশাহীতে প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং
রংপুরে ৭৪ শতাংশ নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
তবে জরিপে অনেক কিছুই উঠে আসে না। অনেক নারী নির্যাতিত হয়েও মুখে প্রকাশ করেন না। সয়ে যান সংসারের জন্য। এইসব দুঃখ অনেক আছে।
তাছাড়া বহু উচ্চবিত্ত বাড়ি আছে যেখানে নারী নির্যাতনগুলো ধামাচাপা করা থাকে সম্মানের জন্য। এইরকম প্রচুর ঘটনা আছে। ফলে সেই ঘরের নারীরা মুখ খোলেন না সম্মান যাবে এই ভয়ে।