কুমিল্লার মুরাদনগরে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে এক নারীকে ‘ধর্ষণ’ ও তাঁর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে উল্লেখ করে দ্রুত দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামে সনাতন সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রী ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠনের নেতা–কর্মীরা।

রোববার বিকেলে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এ দাবি জানান।

কুমিল্লার মুরাদনগরে নারী ধর্ষণ ও খিলক্ষেতে দুর্গামন্দির ভাঙচুরসহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সনাতন সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

তবে এর মধ্যে নির্যাতনের শিকার ওই নারী প্রাননাশসহ তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় মামলা তুলে নেয়ার কথা বলেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

যদিও তার মুখ দিয়ে বলানো হচ্ছে তিনি স্বেচ্ছায় মামলা তুলে নিতে চাইছেন। কিন্তু নানাভাবেই তার পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ঢাকায় উচ্চতর আদালত এক আদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ওই বিবস্র নারীর ভিডিও সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ‘আমি কে তুমি কে, সনাতনী সনাতনী,’ ‘প্রশাসন তুমি কার, ধর্ষক না ধর্ষিতার,’ ‘আমার মন্দির ভাঙল কেন, প্রশাসন জবাব চাই,’ বলে ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। পরে এ সমাবেশ থেকে মিছিল বের করা হয়।

পুলিশের ধরপাকড় ও হয়রানির ভয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতি কম ছিল। তবে যারাই উপস্থিত ছিলেন তারা সবাই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অবিরাম নির্যাতনের।

কুমিল্লার ঘটনার প্রতিবাদে সর্বস্তরের ছাত্রছাত্রীরা এ কর্মসূচির ডাক দেন। এখানে কারও একক ব্যানার নেই।

তবে সমাবেশে বাংলাদেশ হিন্দু ছাত্র পরিষদ ও বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ছাত্র মহাজোটের ব্যানার দেখা গেছে।

সমাবেশে বক্তব্য দেন সীমান্ত দত্ত, অভিজিৎ দেব, মিনু রানী দেবী, জনি দত্ত, রুবেল দে প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় এ দেশের হিন্দুরা প্রাণ দিয়েছেন। সম্ভ্রম হারিয়েছেন সনাতনী নারীরাও।

কিন্তু এখনো যেন সেই স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছেন না। প্রতিবার সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ দেশে হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষজন নির্যাতনের শিকার হন।

এখনো হামলা–নির্যাতন চলছে। মুরাদনগরের ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। এর আগে ঢাকায় মন্দির ভাঙচুর করা হয়।

লালমনিরহাটে কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাবা–ছেলেকে মারধর করে গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা এসব ঘটনার বিচার চাই।’

প্রসঙ্গত, কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় গত শুক্রবার দুপুরে মুরাদনগর থানায় মামলা করেছেন ওই নারী। ওই নারী বলেন, প্রায় ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে আসেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ফজর আলী (৩৮) নামের এক ব্যক্তি তাঁর বাবার বাড়ি গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। এ সময় তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান।

একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় ২৯ জুন সকালে অভিযুক্ত ফজর আলীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান জানান।

মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে আজ ভোর পাঁচটার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে। তাঁরা হলেন মো. সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিক। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বাড়ি মুরাদনগর উপজেলায়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *