আমরা প্রবাসী সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক-গবেষক, সংস্কৃতি ও অধিকার কর্মীরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি, প্রিয় স্বদেশে আমাদের দীর্ঘদিনের সহকর্মী সাংবাদিক ভাই-বোনদের উপরে নেমে এসেছে অবর্ণনীয় নির্যাতন।

একই সাথে আজকের বাংলাদেশে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমেও মতপ্রকাশের নানারকম লিখিত ও অলিখিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে, যা আমাদের কাছে অত্যন্ত লজ্জাজনক ও ঘৃণ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।

আমরা প্রবাসে বসবাস করলেও বরাবরের মতোই দেশের ভালোমন্দ নিয়ে উৎকণ্ঠিত থাকি।

সে কারণে দেশের অমঙ্গলের সমালোচনা ও প্রতিবাদ করা নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি।

শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ১১ মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে ও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিক সাংবাদিক নির্যাতন চলছে।

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে, বিগত ১১ মাসে অন্তত ৪১২ জন সাংবাদিককে হত্যা মামলাসহ হয়রানিমূলক নানারকম মামলায় আসামি করা হয়েছে।

৩৯ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তিন শতাধিক সাংবাদিকের ওপর। শতাধিক সাংবাদিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ।

হেনস্তামূলক দুর্নীতির মামলা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমশিনে।

ঢাকাসহ সারা দেশের সহস্রাধিক সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি, ১৬৮ সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল, জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ সারা দেশের প্রেসক্লাবগুলো থেকে ১০১ জন সাংবাদিকের সদস্যপদ স্থগিত, বাতিল ও বহিষ্কার এবং মিডিয়া দখলের মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে ১০ জন সাংবাদিক নিহত এবং অগণিত সাংবাদিক আহত হলেও সরকারের তরফ থেকে আক্রান্ত সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের প্রতি কোনো সহযোগিতার হাত প্রসারিত হয়নি, বরং নির্যাতনের কালো হাতের সম্প্রসারণ ঘটেছে।

পত্রিকা অফিসের সামনে মব সৃষ্টি করে ‘জেয়াফত’-এর মতো বে-নজির ঘটনাও দেখেছে দেশবাসী।

যা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেও সম্ভবত বিরল ঘটনা।

এসব নির্যাতন ও নিপীড়নের ফলে অনেক সাংবাদিক ও তাদের পরিবার অবর্ণনীয় মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কষ্ট ভোগ করছে এবং মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

বলাবাহুল্য, উল্লেখিত সংখ্যাগুলো প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমরা মনে করি এসব নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড মূলত বাক্‌স্বাধীনতাকে হরণ করছে, যার ফলে সর্বত্র দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

এমনকি, এসব ঢালাও মামলা ও চাকরিচ্যুতিসহ অন্যান্য নির্যাতনমূলক ঘটনার প্রতিকারে সরকারের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি, বরং উল্টোটাই দেখা গেছে।

এতে আমাদের সন্দেহ জেগেছে যে, খোদ সরকারই নির্যাতন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত।

বাংলাদেশে এখন একটি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এবং শান্তিতে নোবেল বিজয়ী একজন ব্যক্তি সরকারপ্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন।

তা ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাও অতীতে সাংবাদিকদের অধিকার সুরক্ষায় সোচ্চার ছিলেন।

অথচ আজকে তাদের হাতেই সাংবাদিক নির্যাতন ও বাক্‌স্বাধীনতা হরণের ঘটনা ঘটছে, যা আমাদেরকে হতাশ ও আহত করেছে।

আমাদের ভূখণ্ডের ইতিহাসে সাংবাদিকদের ওপরে এমন নির্যাতন-নিপীড়ন, চাকরিচ্যুতি ও গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ ও কলম থামিয়ে দেবার ঘটনা অতীতে ঘটেনি।

গণতান্ত্রিক বিশ্বের কোথাও ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা সাংবাদিকদের ওপর নজিরবিহীন নির্যাতন ও বাক্‌স্বাধীনতা হরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে সম্মতি প্রদানকারী প্রবাসী সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিক্ষক-গবেষক, সংস্কৃতি ও অধিকার কর্মীবৃন্দ হলেন, যথাক্রমেঃ

*সৈয়দ বদরুল আহসান, সিনিয়র সাংবাদিক, গবেষক ও লেখক, ইউকে

*ড. মুকিদ চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক, ইউকে

*সুজাত মনসুর, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, ইউকে

*আশেকুন নবী চৌধুরী, সাংবাদিক, ইউকে

*সৈয়দ আনাস পাশা, সাংবাদিক ও সম্পাদক, সত‍্যবাণী, ইউকে

*মোহাম্মদ মকিস মনসুর, সাংবাদিক ও চেয়ারম্যান, ইউকে বিডি টিভি, ইউকে

*সৈয়দ এনামুল ইসলাম, সাবেক সম্পাদক, সাপ্তাহিক সিলেটের ডাক, ইউকে

*টি এম আহমদ কায়সার, কবি ও প্রতিষ্ঠাতা, সৌধ, ইউকে

*জেসমিন চৌধুরী, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার অ্যাক্টিভিস্ট, ইউকে

*সফিয়া জাহির, কবি, ইউকে

*সৈয়দ হিলাল সাইফ, সাংবাদিক ও ছড়াকার, ইউকে

*ড. রায়হান রশিদ, আইনজীবী ও অধিকার কর্মী, ইউকে

*ড. নওরীন তামান্না, আইনজীবী, অধিকার কর্মী ও শিক্ষক, ইউনিভার্সিটি অব রিডিং, ইউকে প্রমুখ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *