বিষের খেলা চলছে বাংলাদেশে। মুহাম্মদ ইউনূস গদিতে বসার পর থেকেই শুরু হয়েছে অশান্তি। দেশটাকে হাতের তালুতে রেখে ছিনিমিনি খেলছেন মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতে দেশের শাসনভার হস্তান্তর করা।জনগণের ম্যান্ডেট না থাকায় কোন রূপ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার থাকে না সাংবিধানিকভাবে।

নিউইয়র্ক অঞ্চলে বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিনন্দিত করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বললেন, বাংলাদেশের এই ক্রান্তিকালে আপনারা আবারো ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন-এটা গোটা জাতির জন্যে খুবই বড় ধরনের একটি সুখবর।

৪ মে রোববার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে নবান্ন পার্টি হলে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে টেলিফোনে যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা আরো বলেন, সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে গত জুলাই-আগস্টের কথিত আন্দোলনের নামে বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সকল স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। জেলা-উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স-সহ অনেক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুঠতরাজ শেষে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে।

জাতির পিতার বাসভবন, বঙ্গবন্ধু ভবন-যেটিকে আমরা স্মৃতি জাদুঘরে পরিণত করেছিলাম, সেটি প্রথমে লুঠতরাজের পর আগুন দিয়েছিল, পরবর্তীতে বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিলো। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর গড়ে দিয়েছিলাম, সেখানে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সকল ইতিহাস-সংগ্রামের ধারাবিবরণী সংরক্ষণ করেছিলাম। সেটিও ধ্বংস করা হয়েছে। কারণ, সুদখোর ইউনূস মুক্তিযুদ্ধের কোন চিহ্নই রাখবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাগণ ইন্তেকাল করলে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান জানানোর মধ্যদিয়ে দাফনের যে ব্যবস্থা করেছিলাম, সেটি পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। আপনারা দেখেছেন এরইমধ্যে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারি আওয়ামী লীগের অনেক নেতার লাশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের সুযোগ দেয়া হয়নি। এমন চরমভাবে আজ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, কেন অবজ্ঞা করছে-সেটি আমার প্রশ্ন। আজ সে (ইউনুস) যুদ্ধাপরাধী জামাত-জঙ্গি-সন্ত্রাসী ,এদের নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। মুক্তিযুদ্ধে যাদেরকে পরাজিত করেছিলাম, সেই পরাজিত শক্তির সাথেই এদের দহরম-মহরম। আমরা দেখতে পাচ্ছি একে একে মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিচিহ্ন তারা মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আপনারা সবাই এক হয়েছেন, এজন্যে আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদেরকে আবার সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনতে হবে। সারাজীবনই মুক্তিযোদ্ধারা আত্মত্যাগ করেছেন, সেই তরুণ বয়সে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন দেশকে শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করবার জন্য। এই যে অবদান-সেই অবদানকে অস্বীকার করে কীভাবে?

শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ তারা ক্ষমতায় বসেছেন, যদিও তাদের কোন ম্যান্ডেট নেই, কোন সাংবিধানিক বৈধতা নেই, ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছে ইউনূস, এভাবে ক্ষমতায় বসে তার এতো সাহস হয় কী করে যে সে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অবজ্ঞা করবে। এতো সাহস হয় কী করে যে সে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলবে? এটা তো কক্ষনোই মেনে নেয়া যায় না। আজ স্বাধীনতা বিরোধী সেই আলবদর, রাজাকার, আল শামস বাহিনী নিয়ে যারা বুুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়েছে, মা-বোনদের তুলে নিয়ে যারা পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে দিয়েছে-আজকে তাদের রাজত্ব বাংলাদেশে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু হয় না।

শেখ হাসিনা বলেন, যে বাংলাদেশটাকে এতো উন্নত করেছিলাম, সেই বাংলাদেশটাকে আজ ধ্বংস করে দিচ্ছে। আর এখন দেখা যাচ্ছে- আমাদের মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, সাংবাদিক, আইনজীবী, পেশাজীবী কাউকেই ছাড়ছে না। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া, হয়রানি করা, এতবেশী হত্যা মামলা, কারণ হত্যা মামলা দিলে জামিন পাবে না। কারাগার থেকে জঙ্গি, সন্তুাসী, কুখ্যাত দাগী আসামীর সকলকে আগেই মুক্তি দিয়েছে। খালি সেই কারাগার আজ ভরে ফেলেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, চৌদ্দ দলের নেতা-কর্মী দ্বারা। এই ধরনের একটা অরাজক পরিস্থিতি সারাদেশে। আমি আপনাদের অনুরোধ করবো, এই মুক্তিযোদ্ধাগণের আত্মত্যাগেই আমাদের এই বাংলাদেশ। আমাদের লক্ষ্য আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলবো। আর সেই লক্ষ্যেই কিন্তু আমরা অনেক অগ্রগামী ছিলাম। অনেক অর্জন আমরা করেছিলাম।

বাংলাদেশকে ২০২১ সালে, যখন আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি এবং জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করেছি তখোনই কিন্তু বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছিল। আজকে অর্থনীতিকে এমনভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে, আমি জানিনা এই লক্ষ্যটা ধরে রাখতে পারবে কিনা। দেশটাকে ইচ্ছাকৃতভাবে একেবারে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গিয়ে গিয়ে এখোন যেটা ঘটছে-তা আরো জঘন্য, আপনারা কিছুদিন আগে শুনলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের লাইখনছড়ি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এলাকায় নাকি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ নেই। কেন নিয়ন্ত্রণ থাকলো না-এটা আমার প্রশ্ন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল, সেখানে তো মিয়ানমার থেকে প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। মানবতার খাতিরে তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। আমরা তো কারো সাথে ঝগড়া করতে যাইনি। ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব-কারো সাথে বৈরিতা নয়’-এই পররাষ্ট্র নীতি নিয়েই আমরা চলেছিলাম। হ্যাঁ, মিয়ানমারের মধ্যে তাদের নিজেদের মধ্যে সংঘাত ছিল, সেই সংঘাতে আমরা কেন কোনকিছু যোগ করবো বা তাদের জোগানদার হবো?

শেখ হাসিনা বলেন, অন্যের ঘরে আগুন দিলে নিজের ঘরওতো পুড়ে। আজ সুদখোর, খুনী জঙ্গিবাদি ইউনূসের কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন। মুক্তিযোদ্ধাসহ সকলে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, প্রতিহত করতে হবে এবং জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চে যে ভাষণ দিয়েছেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। আজ সময় এসেছে, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে এই খুনী ইউনূসের এই দু:শাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। দেশের মানুষের শান্তি নেন-নিরাপত্তা নেই, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই প্রতিনিয়ত ঘটছে। তাই দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ ডিজিটালি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলে জাতিরপিতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার যে কর্মসূচি আমরা দিয়েছিলাম-সেটা যেন আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, সেজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *