চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ভিসির সাথে মিটিং করেছেন । যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা তাদের দাবি নিয়ে ভিসির সাথে কথা বলতেই পারেন ।

তবে এটা মিটিং ছিল না। রীতিমতো ছিলো হুমকি।

এক পর্যায়ে এই ছাত্র নামধারী মৌলবাদী গোষ্ঠী ভিসিকে বলেছেন ‘আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেননি আমরা আপনাকে বসিয়েছি’।

যে দেশের ছাত্ররা ভিসি বানায়, সেই দেশে বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে চলছে তা স্পষ্ট।

ঘটনা কুশল বরণ চক্রবর্তীকে ঘিরে। মব অ্যাটাকের শিকার বাংলাদেশের সনাতনী সমাজের তরুণ প্রতিবাদি নেতা কুশল বরণ চক্রবর্তী।

প্রকাশ্যে তাঁকে প্রাণে মারার হুমকি দেয়া হয়েছে।

প্রশাসনিক ভবনে আটকে থাকেন তিনি। এবং এই অবস্থায় সরকার ও প্রশাসনের নিরব ভূমিকা দেখা গেলো আবারো।

বাংলাদেশে হিন্দুদের হয়ে কথা বলার আর কেউ নেই। মব বাহিনীর ইচ্ছে পূর্ণ হলো।

আগেই বিনা দোষে আসামি করা হয়েছে চিন্ময় প্রভুকে। এবার টার্গেট অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তী।

যেহেতু কুশল বরণ চক্রবর্তী একজন হিন্দু অধ্যাপক, তাই তাঁর পদোন্নতি কেন হবে? ছাত্রনেতাদের বিক্ষোভ এই কারণেই।

জামাতের পদোন্নতি, পদ দিলে কোনো সমস্যা থাকতো না।

পদোন্নতি বোর্ডে কুশল চক্রবর্তীর উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতারের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ কয়েকজন তথাকথিত শিক্ষার্থীর বাদানুবাদের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী উপাচার্য ইয়াহিয়া আখতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি নিজ যোগ্যতায় আসেননি, আপনাকে আমরা বসিয়েছি।”

কী সাংঘাতিক! ভিসিকে চেয়ারে বসাচ্ছে ছাত্রনেতারা!

অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তী বলেছেন তিনি ‘মবের শিকার’ হয়েছেন।

উপাচার্যের সামনে ও পাশে বসা কয়েকজন একযোগে বলতে থাকেন যোগ্যতার কথা। জবাবে উপাচার্য বলেন, “আমাদের কার্যক্রম দেখ আগে।”

উত্তরে উপাচার্যের পাশে বসা এক শিক্ষার্থী বলেন, “আপনি বলেছিলেন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করবেন। ছাত্রদের জন্য কাজ করব। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করব। একটা কথা রেখেছেন? একটা কথা রাখেননি স্যার।”

সামনে দাঁড়ানো এক শিক্ষার্থী আবার বলেন, “আপনাকে আমরা বসাইছি, আপনি নিজের যোগ্যতায় আসেননি স্যার।” উপাচার্য তখন পাল্টা প্রশ্ন করেন, “কি করেছি আমি?”

তখন সামনে দাঁড়ানো ওই শিক্ষার্থী বলেন, “আপনারা কেন কুশল বরণকে প্রমোশন দিচ্ছেন? আমাদের রক্তের সাথে এবং আমাদের বিপ্লবের সাথে বেঈমানি করে।”

উপাচার্যের সামনে বসা এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেন, “যারা আহত করেছে আমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন?”

উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার বলেন, “শোন আগে। মাঝখানে কথা বল কেন। আচ্ছা তুমি বল, তুমি বল।”

অন্য এক শিক্ষার্থী এসময় বলেন, “আমরা প্রতিদান চাচ্ছি না। কি ব্যবস্থা নিয়েছেন। জুলাই পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের নিয়ে কাজ করবেন…।”

জবাবে উপাচার্য বলেন, “ইউনিভার্সিটি বোর্ড না, ইটস আ কোআসি-জুডিশিয়াল বডি। ইউনিভার্সিটি হাই কোর্ট সুপ্রিম কোর্ট না। আমরা জেল জরিমানা দিতে পারি না। শাস্তি দিতে পারি।”

এক শিক্ষার্থী বলেন, “এই প্রশাসন একজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়নি।”

তখন উপাচার্য বলেন, “বলতে থাকো।”

এক শিক্ষার্থী বলেন, “এই প্রশাসন দেশে সবচেয়ে বড় সুশীল প্রশাসন। অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, “জুলাইয়ের পরে একজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের ভাইদের যারা হত্যা করছে তাদের কত জনকে আপনি শাস্তি দিছেন বলেন।”

উত্তরে উপাচার্য বলেন, “শাস্তি আমি একা পকেট থেকে বের করে দিতে পারি না।”

“স্যার, একাডেমিক শাস্তি কয়জনের হয়েছে? প্রায় এক বছর হয়েছে। ডিমোশন না হয়ে আরো প্রমোশন হচ্ছে। আপনারা তাদের প্রমোশন দিচ্ছেন।”

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *