গ্লোবাল অ্যাসোসিয়েশন ফর ইনডিজেনাস পিপলস অফ দ্য চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস (GAIP-CHT) আজ জানিয়েছে যে, বাংলাদেশের সাজেক ইউনিয়নে একটি বেসরকারি কলেজ নির্মাণে উদ্যত চাকমা আদিবাসী নেতারা ষষ্ঠ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর মাসুদ রানার কাছ থেকে মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন।

এই ঘটনার বিরুদ্ধে সংগঠনটি অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।

GAIP-CHT বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানকে আহ্বান জানিয়েছে, ১৯৫২ সালের সেনাবাহিনী আইনের আওতায় মেজর মাসুদ রানার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে।

প্রস্তাবিত অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে: “২৭ ধারা অনুযায়ী দেশের জনগণ ও সম্পত্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, ২৯ ধারা অনুযায়ী ঘরবাড়ি ধ্বংস ও মিথ্যা সতর্কতা প্রদান, ৪১ ধারা অনুযায়ী অপমানজনক আচরণ।”

সংগঠনটি উল্লেখ করেছে, একই এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বনভূমিতে “দারুস সালাম জামে মসজিদ” নির্মাণ করেছে, যা ১৯২৭ সালের বন আইনের লঙ্ঘন।

সাজেক ইউনিয়ন পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি অত্যন্ত দুর্গম ও প্রান্তিক এলাকা, যেখানে প্রায় ৩৩,০০০ আদিবাসী বসবাস করে।

২০২৫ সালে আদিবাসীরা নিজেদের সীমিত সম্পদ দিয়ে একটি কলেজ স্থাপনের সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করে।

কিন্তু বাঘাইহাট সেনা জোনের কমান্ডার মেজর মাসুদ রানা কলেজ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়ে চাকমা নেতাদের হত্যার হুমকি দেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে সাজেককে একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করেছে।

হোটেল-মোটেল মালিকদের মতে, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে প্রায় ৪৫টি রিসোর্ট, ৪০টি রেস্তোঁরা এবং ৬০টি ঘর আগুনে পুড়ে যায়।

এর আগে, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, সেনাবাহিনী এবং অবৈধ মুসলিম বসতি স্থাপনকারীরা সাজেকে অভিযান চালিয়ে ছয়জন চাকমা আদিবাসীকে হত্যা করে এবং শতাধিক বাড়ি, একটি বৌদ্ধ মন্দির ও একটি গির্জা জ্বালিয়ে দেয়।

যদিও এই অঞ্চলে কোনো মুসলিম বসতি নেই, তবুও সেনাবাহিনী ৩,১৬,০০০ মার্কিন ডলার ব্যয়ে সাজেক পাহাড়ের চূড়ায় “দারুস সালাম জামে মসজিদ” নির্মাণ করে।

মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন ২৪তম পদাতিক চট্টগ্রাম ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এসএম মতিউর রহমান।

GAIP-CHT’র সুইজারল্যান্ড প্রতিনিধি সঞ্চয় চাকমা বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অবৈধভাবে বনভূমিতে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে, অথচ এখন তারাই ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে আদিবাসীদের তাদের নিজস্ব জমিতে একটি কলেজ নির্মাণের জন্য মৃত্যুর হুমকি দিচ্ছে।”

একই বিবৃতিতে GAIP-CHT, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস ও শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার’র প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে আদিবাসীরা কলেজ নির্মাণে কোনো বাধার সম্মুখীন না হয়।

এছাড়া, সংগঠনটি জাতিসংঘের শিক্ষার অধিকার সংক্রান্ত বিশেষ দূত, আদিবাসীদের অধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত এবং কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছে – বাংলাদেশ সরকারের এই বৈষম্যমূলক ও বর্ণবাদী নীতির বিরুদ্ধে তারা যেন হস্তক্ষেপ করে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *