পটুয়াখালী: নিজ ভূমে পরবাসী হয়ে গেছেন রাখাইনরা। পটুয়াখালীর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়ের শ্মশানের জমি ক্রমশ বেহাত হয়ে যাচ্ছে।

বেদখল হচ্ছে শ্মশান, দেবালয়। তাদের নিজেদের শেষ সম্বলটুকু তাঁরা হারাতে বসেছেন।

তাদের জীবিকার প্রধান উৎস কৃষি জমি তো বেহাত হয়েছে অনেক আগেই। এখন বাড়ির পাশের শ্মশান, পুকুর আর প্রার্থনাস্থল-বৌদ্ধবিহারের জমিও বেদখল হয়ে যাচ্ছে।

দখলদাররা সব নিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই। দেখা গেছে,কোথাও তাদের কাছ থেকে দুই শতক জমি কিনে ভোগ-দখল করছে চার শতক। কোথাও আবার কোনো রাখঢাক ছাড়াই বেড়া দিয়ে নেওয়া হয়েছে দখল। যা ইচ্ছে তাই করা হচ্ছে।

রাখাইনরা বলছেন, প্রায় আড়াইশ বছর আগে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, কলাপাড়া এবং বরগুনার তালতলী এলাকায় আবাস গড়ে তোলেন তাদের পূর্বপুরুষরা।

তারাই জায়গাগুলোকে চাষের যোগ্য করে তোলেন। অথচ আজ তাদের এই দশা।

কারিতাসের হিসাব অনুযায়ী, পটুয়াখালী ও বরগুনায় এখন ৪০টি রাখাইন পল্লি রয়েছে। এসব পল্লিতে শ্মশান আছে ২২টি।

আগে আরো ছিলো, কিন্তু সেগুলো দখল করে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে ১২টি গ্রামে কোনো শ্মশান নেই; আর ২০টিতে কেবল মন্দির রয়েছে।

শুধু তাই নয়, হুমকির মুখে বৌদ্ধবিহার।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ঘেঁষে হোটেল সি কুইনের উল্টো দিকে রাখাইনদের আড়াইশ বছর পুরনো কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহারের অবস্থান।

চারদিক থেকে কমতে-কমতে প্রায় আড়াই একরের (২৫০ শতক) এই বিহার এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬৫ শতাংশে।

বিশাল বিশাল শ্মশানের জমি কমতেই আছে দিনে দিনে।

পাড়ার বাসিন্দা অং তেন রাখাইন বলেন, “নথিতে ৭৪ শতাংশের এই বিশাল শ্মশান এখন এসে ঠেকেছে ১৫ শতাংশে। বলতে গেলে পুরো শ্মশানই বেহাত হয়েছে। মাটি কেটে কেটে এক-দুই হাত করে প্রত্যেক বছর দখল নেয় তারা।”

কালাচান পাড়ার মাদবর অংচাচুং জানান, তাদের শ্মশানটিতে ৭০ শতাংশ জমি ছিল। তবে স্থানীয়রা জোর করে তাদের শ্মশানের জমি নানাভাবে দখল করে নেয়ায় বর্তমানে মাত্র ৩০ শতাংশ অবশিষ্ট আছে।

তিনি আরও জানান, অনেক সময় শ্মশানের পাশে খালের তীর ভরাট হয়ে খাসজমি জেগে ওঠে। তখন জায়গার অভাবে সেই জমিই শ্মশানের কাজে ব্যবহার করেন তারা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *