রাজনীতি নিয়ে লিখতে গিয়েও আটকে গেলাম মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র ( আসক) এর প্রকাশিত একটি রিপোর্ট দেখে। তারা বলেছে এবছর অর্থাৎ ২০২৫ এর জানুয়ারি থেকে গত ১০ আগষ্ট পর্যন্ত ‘মব সন্ত্রাসে’ নিহত ১১১ জন।
যতদূর জানি আসক সাধারণত সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টগুলোর ওপর ভিত্তি করেই এ রিপোর্ট তৈরী করে থাকে।কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে সব ঘটনা কি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় ? হয় না। নানা ভয়ভীতির কারণেই।
গত ২০২৪ এর জুলাই-আগষ্টে ‘জঙ্গী ক্যু’ এর ঘটনার পর খুন ও খুনের চেষ্টার মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৬৬ জন সাংবাদিককে। তাদের মধ্যে ১৩ জন ধুঁকছেন মানবেতরভাবে কারাগারে।
গত ৪ মে মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের আলোচনায় সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, ‘‘বর্তমানে ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা অথবা সহিংসতা সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে মামলা চলছে।
অবশ্য এই স্বনামধন্য সম্পাদক ‘ জুলাই জঙ্গী ক্যু’ এর ঘোরতর সমর্থক। তারপরও তিনি এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন।
তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্নভাবে খবর নিয়ে জেনেছি সারাদেশে অন্তত: ৫ শতাধিক সাংবাদিকের নামে খুন, খুনের প্রচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, দাঙ্গা হাঙ্গামা, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুধু তাই নয় একেকজন সাংবাদিকের নামে ১০ থেকে ১৫ টি মামলাও করা হয়েছে। এদের মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়।
আদালতে চলছে নজিরবিহীন ‘আইন-মব’ সন্ত্রাস। ‘আইন-মব’ বলছি এ কারণে যে আদালত মানেইতো আইন। আর সেখানে কালো কোট বা গাউন গায়ে চাপিয়ে যা করা হবে তা “আইন” এর অধীনে চলে আসে (!), তাইনা ? (আদালত ও পেশাদার-সৎ আইনজীবীদের কাছে করজোরে ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক বলছি)।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে গত ২৪ জুলাই গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
সেদিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে তাঁকে প্রেপ্তার করা হয়। এরপর সাবেক প্রধান বিচারপতিকে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে এনে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জে মোট তিনটি মামলা রয়েছে।এরমধ্যে খুনের মামলাও রয়েছে ! এমনকি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি কোর্ট ৭ দিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করেছেন। এ কেমন আদালত আর কেমন সেই আদালতের বিচারক ! ভাবতেও পারছিনা কোন অসভ্য-বর্বর শাসনের মধ্যে রয়েছি আমরা দেশবাসী।
প্রসঙ্গত আপিল বিভাগে থাকাকালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল এবং ফতোয়া অবৈধ ঘোষণার রায় দেন খায়রুল হক।
হাইকোর্ট বিভাগে থাকাকালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ও সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায় দিয়েছিলেন খায়রুল হক।
এসব কারণে এ জঙ্গী সরকার তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে একজন প্রবীণ বিজ্ঞ- সাবেক প্রধান বিচারপতির প্রতি এমন অবমাননা-অত্যাচার-নির্যাতন ? এত অন্যায়-পাপ সইবেতো কপালে আপনাদের হে ইন্টারিম ইউনুস সরকার ?
আইন ও সালিশ কেন্দ্র আসক মব সন্ত্রাসের ব্যাপারে বলেছে- “এ ধরনের নির্মম ঘটনা মানবাধিকারের ভিত্তিকে সরাসরি আঘাত করে। তারা তাদের রিপোর্টে বলছে-‘মব সন্ত্রাসের’ শিকার হয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে ১০ অগাস্ট পর্যন্ত ১১১ জন নিহত হয়েছে।
এর মধ্যে গত ৯ আগষ্ট শনিবার চোর সন্দেহে রংপুরের তারাগঞ্জে দুই হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি বলেছে, এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি সামাজিক সম্প্রীতি ও আইনের শাসনের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তারাগঞ্জে নিহতরা হলেন- ঘনিরামপুর এলাকার বাসিন্দা রুপলাল দাস (৪০) ও মিঠাপুকুর উপজেলার প্রদীপ দাস (৩৫)। রুপলালের ভাগনি জামাই হচ্ছেন রুপলাল।
সংবাদমাধ্যমের বরাতে ঘটনার বর্ণনায় আসক বলেছে, রুপলাল দাস জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন, আর প্রদীপ দাস ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
রুপলালের মেয়ের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার জন্য তাদের বাড়ির উদ্দেশে নিজের ভ্যান যোগে রওনা হয়েছিলেন প্রদীপ। কিন্তু গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা না চেনায় তিনি ফোন করলে রুপলাল বাড়ি থেকে এগিয়ে যান।
এরপর তারা দুজনে ভ্যানে চড়ে রুপলালের বাড়ি ঘনিরামপুর গ্রামের দিকে রওনা হন। রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছলে ভ্যান চোর সন্দেহে তাদের দুজনকে থামান স্থানীয়রা। এরপর সেখানে জড়ো হওয়া ব্যক্তিরা পিটিয়ে তাদের দুজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এ ধরনের ঘটনা প্রচলিত আইন, সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদন্ডের দৃষ্টিতে অত্যন্ত বিপদজনক ও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করে আসক বলছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি সামাজিক সম্প্রীতি ও আইনের শাসনের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তারাগঞ্জের ঘটনায় রোববার রাতে চারজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
আসক বলেছে, “যেকোনো সংঘবদ্ধ প্ররোচনামূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত গোষ্ঠী বা ব্যক্তি বিশেষকে দায়মুক্তি না দিয়ে তাদের শনাক্ত করে কঠোরভাবে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কেননা এ ধরনের নির্মম ঘটনা মানবাধিকারের ভিত্তিকে সরাসরি আঘাত করে।”
** কি চলছে বিচারাঙ্গনে ? দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকগণ বিবেকের কাছে কি জবাব দেবেন ?
বিচারালয়ে কি চলছে তা বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠক মনজিল মোরশেদ এর জবানিতেই জেনে নেই।
একটি আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন-আপনার উপরে যদি আমার ক্ষোভ হয়, আপনার রায় যদি পছন্দ না হয় তাহলে আপনাকে ধরে হাতকড়া পড়িয়ে জেলখানায় প্রধান বিচারপতি কে আপনি হাজির করে দিবেন এটা আইন কোথাও বলে নাই।
কিন্তু আমাদের দেশে এটা করেছে। আপনি কি বলেন যে একজন বিচারপতিকে যখন এই রায় পছন্দ হোক বা না হোক তাকে যখন গ্রেফতার করা হলো ডেমরার কেইছে, সে তো হত্যা করতে যাই নাই।
কিন্তু একজন প্রধান বিচারপতিকে আপনি সাত দিনের রিমান্ড দিয়ে দিলেন ! আপনি এর চেয়ে বিচার বিভাগের দুরবস্থা দিয়ে কি করবেন ?
আজকে এই যে সাত দিনের রিমান্ড দিলেন এই দিন রিমান্ডের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রধান বিচারপতি যারা আছেন তাদের মনেও কিন্তু একটি আশঙ্কা সৃষ্টি করে দিলেন । এর মাধ্যমে আপনি কি কাজ করলেন ?
এর মাধ্যমে আপনি বিচার বিভাগের গলা টিপে ধরলেন অর্থাৎ তোমরাও সাবধান হও, ভবিষ্যতে কিন্তু তোমাদেরও এই রকম হতে পারে।
জনস্বার্থে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে রীট করা এই আইনজীবী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- “ আজকে কোর্টে যেতে পারেন না সারাদেশে শত শত আইনজীবী।
বিভিন্ন পাহারা আর সিচুয়েশনের জন্য তারা আদালতে যেতে পারেন না হামলার শিকার হবে। কিন্তু আমার অধিকার আছে মানুষকে লিগ্যাল প্রটেকশন দেয়ার।
আমিতো আইনজীবী আমি তো কোর্ট অফিসার আমি যদি কোর্টে না থাকি আমি কিভাবে আমার মক্কেলকে প্রটেকশন দিবো ? কিভাবে তার পক্ষে কথা বলবো ?
সে অধিকার আইনজীবীর নাই। আইনজীবীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কারা এ অবস্থা সৃষ্টি করেছেন ? এটা কি মানবাধিকার রক্ষা হচ্ছে নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে আপনারাই বলুন!
অধিকাংশ মানুষ, অধিকাংশ সাংবাদিক তারা কথা বলতে পারেন না। বিশেষ করে যারা লেখার ক্ষেত্রে ফিল্ড লেভেলে কাজ করেছেন তারা হয়তো অনেক রিপোর্ট দেন, কিন্তু মিডিয়া হাউজ গুলো সে গুলো দিতে পারেন না কারণ দিতে গেলে সন্ধ্যায় হয়তো আক্রমণ হবে নয়তো অফিসের সামনে গরু জবাই করে তাদের খাওয়া-দাওয়া হবে এবং সেখানে সম্পাদকদের কে মারধর করা হবে অথবা হত্যা মামলায় তাদেরকে পরের দিন কারাগারে নিয়ে যাবে এই হলো পরিস্থিতি।”
পাঠক , আপনাদেরকে নিশ্চয় আর নতুন করে কিছু বুঝিয়ে দিতে হবেনা আইনি-আদালত-প্রশাসন সম্পর্কে।
কারণ এই প্রতিবাদী আইনজীবী কিন্তু বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষাসহ বিভিন্ন মানবাধিকার রক্ষায় বিগত সরকারের আমলেও প্রচুর মামলায় লড়েছেন।
সম্প্রতি হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিস ( এইচ আর সি বি এম ) এর একটি সেমিনারে গিয়েও বেশ জোড়ালো-প্রতিবাদী বক্তব্য রেখেছেন।
** বিপন্ন-অবরুদ্ধ সাংবাদিক- সংবাদমাধ্যম।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন এক অজানা ভয়ের মধ্যে দিনপার করছে বলে অভিযোগ সাংবাদিকদের। এখন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আর নতুন করে ঢালাও মামলা হচ্ছেনা ঠিক , কিন্তু গত ২০২৪ সালের জুলাই-আগষ্টের পরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে গনহারে মামলা দেয়া হয়েছে সে মামলাগুলোর কোন সমাধানও হয়নি।
কারাগারে থাকা সাংবাদিকরা জামিনও পাচ্ছেন না।
এই এক বছরে গণমাধ্যমে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে ? জানতে চাইলে দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এক অজানা ভয় পেয়ে বসেছে গণমাধ্যমকর্মীদের মনে।
অনেকে চাকরি হারাচ্ছেন বা আগে হারিয়েছেন। কারণ দৃশ্যমান নয়। এজেন্সির দাপট নেই, অন্যদের খবরদারি আছে অতি কৌশলে। আর মব সন্ত্রাসের ভয়ে অনেক কিছুই লেখা যাচ্ছে না, বলা যাচ্ছে না।
এই হচ্ছে পরিবর্তনের অবস্থা। তবে এই মুহূর্তে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে মামলা হচ্ছে না। শুরুতে অনেক মামলা হয়েছে, অনেকে কারাগারেও আছেন।
খুব যে পরিবর্তন হয়েছে, সেটাও বলা যাবে না। ” প্রসঙ্গত: এই মতিউর রহমান চৌধুরী কিন্তু গত জুলাই-আগষ্টে ‘ জঙ্গী ক্যু’ এর ঘোর সমর্থক।
তিনি কিন্তু গত আওয়ামীলীগ আমলে টিভি টকশো’তে সরকারের তীব্র সমালোচক ছিলেন বরাবরই। কই তাঁকে তো হেনস্থার শিকার হতে হয়নি যতদূর জানি।
এখন কোন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হচ্ছে না বলে মনে করেন সিনিয়র সাংবাদিক আনিস আলমগীর। এই সাংবাদিক ভদ্রলোকও কিন্তু শেখ হাসিনা-আওয়ামী বিরোধী হিসেবে পরিচিত।
প্রচন্ড সমর্থক ছিলেন ‘জঙ্গী ক্যু’ এর। তিনিও সম্প্রতি জার্মান বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন- ‘‘আমি মনে করি, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আরও বেশি খর্ব হয়েছে।
এখানে মব ভায়লেন্সের কারণে সংবাদমাধ্যমের উপর এক ধরনের কর্তৃত্ব আরোপ করা হচ্ছে। এরা সরকারেরই সমর্থন একটা গোষ্ঠী। তারা উগ্র ডানপন্থি। এরা প্রতিটি সেক্টরে স্বৈরাচারের দোসর খুঁজছে।
যারা সরকারকে প্রশ্ন করছে, তাদেরকে স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ দিয়ে চাকরিচ্যুতির হুমকি দিচ্ছে, তাদের চাকরিও যাচ্ছে।
উপদেষ্টা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকীকে প্রশ্ন করার কারণে ৩-৪ জন সাংবাদিকের চাকরিও গেছে৷ মব এর আগে বিভিন্ন হাউজের সামনে গিয়ে গরু জবাই করেছে। তারা জিয়াফত করে প্রেশার তৈরি করছে।
ফলে প্রকৃত সাংবাদিকতা হচ্ছে না। যেটা হচ্ছে সেটা দৈনন্দিন রিপোর্ট হচ্ছে। বড় ধরনের কোন ইনভেস্টিগেশন (অনুসন্ধান) হচ্ছে না। গোপালগঞ্জে ৫ জন মারা গেল, তাদের নিয়ে মিডিয়া কোন মানবিক রিপোর্ট করল না।
পোস্টমর্টেম ছাড়া তাদের লাশ দাফন করা হয়েছে, পরে তোলা হল। কয়েকদিন কারফিউ রাখা হলো মিডিয়া তো প্রশ্ন করল না ?”
** মব সন্ত্রাস’কে যত ভয়
গত এপ্রিলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার পর তিন সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন।
তিন প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সে সময় ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, মূলত মব-সহিংসতার ভয়েই তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নিয়েছেন তারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান ( প্রচন্ড সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গী ক্যু এর তীব্য সমর্থক)ও ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কেউ একজন হুমকি দিলো আর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়ে ফেললো – সেটা তো ঠিক না। এভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা হবে না বরং ওই আগের মতো তোষণের সাংবাদিকতা হবে।”
গত ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতা (বর্তমানে এনসিপি নেতা) হাসনাত আব্দুল্লাহর চাপে অন্তত: ৫ সাংবাদিকের চাকরি চলে যায়।
কয়েকদিন আগে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরি করায় দৈনিক যুগান্তরের একজন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ দিপু ( তিনিও আওয়ামী বিরোধী ও জঙ্গী ক্যু এর সমর্থক)ও বললেন, ‘‘আসলে সেই অর্থে গণমাধ্যম স্বাধীন হয়নি। মুখে মুখে স্বাধীন।
বাস্তবে কাঠামোটা যদি পরাধীন থাকে বা আগের নিয়মে থাকে তাহলে আমি যে স্বাধীন তার নিশ্চয়তা কোথায়? মিডিয়া সংকুচিত।
বিদ্যমান যে চ্যানেলগুলো আছে, সেখানে সবাই একই মতাদর্শের কথা বলছেন। সেখানে ভিন্নমতের কেউ নেই।
পরিবর্তনের পর চ্যানেলগুলো যেভাবে আক্রান্ত হয়েছে, সংবাদপত্রের সামনে গরু জবাই হয়েছে ফলে সবাই সংকুচিত। এখনও মব সংস্কৃতি বন্ধ করা যায়নি।
** কারাপ্রকোষ্টে অমানবিকভাবে ধুঁকছেন এখনও ১৩ সাংবাদিক।
এ বছর ৪ মে মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের আলোচনায় সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘‘বর্তমানে ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা অথবা সহিংসতা সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে মামলা চলছে। এটা কীভাবে সম্ভব?
এটা আমাদের জন্য অসম্মানের। এটার অর্থ এই নয় যে, কেউ দোষ করেননি। দোষ করে থাকলে সঠিকভাবে মামলা করে শাস্তি দেন এবং আমরা কোনোভাবেই তার পাশে দাঁড়াবো না, যদি সত্যিকার অর্থে সমাজের বিরুদ্ধে বা জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের বিরুদ্ধে তার অবস্থান সেরকম থাকে।
কিন্তু আজকে ছয় থেকে সাত মাস হয়েছে, তারা এসব মামলায় পড়েছেন। একটি কদমও এগোয়নি তদন্তের ব্যাপারে।” এই সম্পাদক মাহফুজ আনাম সাহেব যে ‘ জঙ্গী ক্যু’ এর পক্ষে তা কিন্তু তিনি সগর্বেই স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে তিনিও এখন ‘ত্যক্ত-বিরক্ত-আতংকিত’- বোঝাই যায়।
যে ১৩ জন সাংবাদিক কারাগারে আছেন তাদের মধ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টেলিভিশনের তিন সাংবাদিক- সাবেক সিইও মোজাম্মেল হক বাবু, সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ ও সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ও উপস্থাপক ফারজানা রুপা অন্যতম। এদের মধ্যে মোজাম্মেল হক বাবু ক্যান্সারে আক্রান্ত।
শ্যামল দত্ত স্লিপ অ্যাপনিয়া’য় (ঘুমের সময় সাময়িকভাবে দম বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ জটিল শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ) ভুগছেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
এছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরলসহ একাধিক দীর্ঘস্থায়ী রোগেও ভুগছেন তিনি। যতদূর জানতে পেরেছি এরই মধ্যে জন্মদিন ছিল শ্যামল দত্তের।
কিন্তু জানা হয়নি সেদিন তার পরিবারের কেউ তার সাথে কারাগারে দেখা করতে পেরেছিলেন কী না। তার ছোট মেয়েটি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে এই বুঝি বাবা কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে আসবে !
কিন্তু তার সে আশা আর পুরন হয়না। অপরদিকে সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপাও অসুস্থ বলে জানিয়েছেন তাদের পরিবার।
তাদের ছোট সন্তানটিও দীর্ঘদিন মা-বাবাকে ছাড়া কতই না কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এরই মধ্যে রূপা তার মা’কে হারিয়ে সেই মমতাময়ী মাকে দেখার জন্য সম্ভবত মাত্র দুই ঘন্টা সময় পেয়েছিলেন।
আচ্ছা বলুনতো এসব সাংবাদিক কি খুন করেছিলেন ? খুনের মামলার আসামীরওতো জামিন হতে দেখেছি আমরা। আর এই সাংবাদিকদের জামিন দিয়ে প্রয়োজনে নজরবন্দী করে রাখলেইতো হয়।
** এই সেনাবাহিনী কি পাহারা দেবে নির্বাচনে ?
জঙ্গী-প্রতারক গোষ্ঠীর পালের গোদা ড. ইউনুস। আর তার যোগ্য শিষ্য হলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে: জে: মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি সোমবার মানে ১১ আগষ্ট জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ৮০ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন করা হবে।
এ ছাড়া পুলিশ, র্যাব ও বিজিবিসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরাও মোতায়েন থাকবে বলেও জানান তিনি। সোমবার (১১ আগস্ট) ঢাকা-৩ সংসদীয় আসনের তেঘরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এই উপদেষ্টা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো- এই বিতর্কিত সেনাসদস্যরা কি পাহাড়া দেবেন নির্বাচনে ? জঙ্গী ইউনুস সরকার নির্দেশিত প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে যাতে কেউ কোন বাধা দিতে না পারে তা পাহারা দেবে ?
কারণ সেনাবাহিনী বা সশস্ত্র বাহিনীর ওপর যে আস্থা ছিল তা আর দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে নেই।
কারণ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য , মুক্তিযুদ্ধের ভাষ্কর্য-মুর্যাল, স্বাধীন বাংলাদেশের সুতিকাগার হিসেবে পরিচিত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু যাদুঘর নির্মমভাবে প্রচন্ড আক্রোশে বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া-আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার দায় থেকেতো তাদের রেহাই দেয়নি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাঙ্গালি জাতি।
সর্বোপরি ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে সাধারণ-নিরস্ত্র জনগণের ওপর পাকিবাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানিয়ে যে খুন-নির্যাতন-ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করেছে তাতে আর তাদেরকে বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই।
তবে বাংলার নির্যাতিত মানুষ মুক্তির উপায় খুঁজছে। একাত্তরের মত মুক্তির পথ নিশ্চয়ই বের হবে। সে দিনের অপেক্ষায় বাংলার জনগণ।
# নুরুল ইসলাম আনসারি, প্রাবন্ধিক, লেখক।