ঢাকা: বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় সংখ্যালঘু নিধন চলছে অবাধে।
হিন্দু পরিবারগুলো আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ — কারো রক্ষা নেই।
মন্দির ভাঙা, ঘর পোড়ানো, লুটপাট — এসব চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষ্ক্রিয়, যেন সবকিছুই সরকারের ছত্রছায়ায় হচ্ছে।
এটাই কি সেই বাংলাদেশ, যেখানে সংখ্যালঘুরা স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করবে? নাকি এটা সেই বাংলাদেশ যেখানে তাদের ঘর, মন্দির, জীবন — সবকিছু ধ্বংস করে দেওয়া হবে?
বাংলাদেশে ঘটনাটি ঘটেছে ৯ আগস্ট, মানে রাখি বন্ধনের দিন। রূপলাল দাস এবং প্রদীপ দাসকে (একজনের বয়স ৪০, আরেকজনের ৩৫) পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশের রংপুরের তারাগঞ্জের ঘনিরামপুর গ্রামে। রূপলাল পেশায় মুচি। প্রদীপ পেশায় ভ্যানচালক।
কী দোষ ছিলো তাঁদের? কিছুই না। তাঁরা হিন্দু এটাই দোষের।
রূপলালের মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ করার জন্য প্রদীপ দাস সেখানে এসেছিলেন। রূপলাল প্রদীপের বাড়ি চিনতো না। তাই প্রদীপ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন তাঁকে রাস্তা দেখিয়ে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্যে।
তখন তাদের রাস্তা আটকে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। হাতজোড় করে তারা বাঁচার জন্যে অনেক কাকুতি মিনতি করেছিলো। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
জীবনটা রক্ষা করা গেলো না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৫ মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও তাঁদের বাঁচাতে পারেনি।
ভিডিওতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে একটি ভ্যানের ওপর রাখা হয়েছে রূপলাল ও প্রদীপকে। চারপাশে কয়েক শ মানুষ, প্রথম সারিতে তরুণ-যুবকেরা।
রূপলাল দাঁড়াতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শোয়া অবস্থায় খুলে যাওয়া লুঙ্গি ঠিক করছিলেন তিনি।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ চলে যাওয়ার পর রূপলাল মাথা তুলতেই কালো গেঞ্জি পরা এক যুবক তাঁকে ঘুষি মারেন। এতে আবার লুটিয়ে পড়েন রূপলাল।
এরপর ভ্যানের ওপর শোয়া অবস্থায় থাকা দুজনকে তরুণ-যুবকেরা যে যেভাবে পারেন কিল, ঘুষি, লাথি, লাঠি ও রড দিয়ে মারতে থাকেন। একপর্যায়ে ভ্যানের ওপর থেকে মাটিতে পড়ে যান প্রদীপ লাল। এ দৃশ্য মুঠোফোনের আলো জ্বালিয়ে ভিডিও করছিলেন অনেকেই।
আহারে! এইভাবে মানুষ মানুষকে মারতে পারে?
পুলিশের সামনেই লোকটিকে পিটিয়ে হত্যা করলো আর পুলিশ নীরব দর্শকের মতো দেখেই গেলো। তাদের কি কিছুই করার ছিল না?কতটা নিষ্ঠুর, নির্দয়, নির্মম সেই আঘাত ছিল।
ঘাতকরা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত মেরেছে, মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল তারপরও তাদের মায়া কিংবা সহানুভূতি জাগ্রত হয় নাই!
রুপলাল দাসের স্ত্রী, মা এবং সন্তান যতদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে তাদের প্রিয় মানুষটার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর শোক তাদের চিবিয়ে চিবিয়ে ক্ষত- বিক্ষত করবে। হায়রে বাংলাদেশের জীবন!