নোবেলে শান্তিপুরস্কার পাওয়া বাংলাদেশের অগণতান্ত্রিক অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান প্রফেসর ড. ইউনুস আবারো তাঁর সেই পুরনো কথারই পুনরাবৃত্তি করলেন। তা হলো ‘ দারিদ্রকে জাদুঘরে পাঠানো।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দানকালে বুধবার ১৪ মে তিনি তাঁর গ্রামীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ইতিহাস টেনে বললেন, তখন বলেছিলাম- আমরা দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাবো। বলে- ‘আপনি কে জাদুঘরে পাঠাবেন।’ আমি বললাম- আমি আপনার মতোই একজন মানুষ। তখন বলল- ‘এটা আপনার কাজ না, এটা সরকারের কাজ।’ আমি বললাম- আমি আমার কাজ করি, সরকার আমাকে বাধা দিলে দেখা যাবে।’’
কিন্তু এত বছরেও কি তিনি দারিদ্র্য দূর করতে পেরেছেন বাংলাদেশের? বাংলাদেশের দারিদ্র্যের কথা না হয় বাদই দিলাম, যেই জোবরা গ্রাম থেকে তিনি তাঁর কথিত গবেষণা/ লোন ব্যবসা শুরু করেছিলেন সেই জোবরা গ্রামের মানুষদের আয়-রোজগারে কোন উন্নতি কি তিনি বা তাঁর প্রতিষ্ঠান করতে পেরেছেন ? দারিদ্র্য দূর করতে পেরেছেন? এসব প্রশ্ন কিন্তু কেউ করেনা এই মহামতি শান্তির নোবেল লরিয়েটকে।
অথচ চবি’র হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের সামনে এই কথিত শান্তির পায়রা (!) ড. ইউনুস দাবি করেন-ব্যবসাকেন্দ্রিক নয়, অর্থনীতি হতে হবে মানুষের জন্য। এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে হাটহাজারি উপজেলার জোবরার মহিলাদের কাছ থেকে নতুন অর্থনীতি শিখলাম। জোবরা গ্রাম আমার জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দাঁড়িয়ে গেল। আজ পর্যন্ত যা করে যাচ্ছি, তা জোবরা থেকে যা শিখেছি তার বহিঃপ্রকাশ। আজ অর্থনীতি যা পড়াচ্ছি, সেটা ব্যবসার অর্থনীতি, মানুষের অর্থনীতি না। আমাদের মানুষের অর্থনীতি গড়তে হবে। আমাদের অর্থনীতি যদি শুরু করতে হয়, মানুষকে দিয়ে শুরু করতে হবে, ব্যবসাকে দিয়ে নয়। অথচ আমরা ব্যবসাকেন্দ্রিক সভ্যতা গড়ে তুললাম, এটা আত্মঘাতী সভ্যতা, এটা টিকবে না।’
অথচ তিনি নিজে তাঁর গ্রামীন ব্যাংকের মাধ্যমে যে কোটি কোটি টাকা ব্যবসা করেছেন ও করছেন তা কিন্তু এই ব্যবসাকেন্দ্রিক সভ্যতার অন্যতম উদাহরণ। অথচ তিনি তা বললেন- কি সুন্দর করে ঘুরিয়ে! আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তাবৎ শিক্ষক-গবেষক, নতুন সনদধারীরা সবাই তা গোগ্রাসে গিললেন ও বাহবা দিলেন। তাঁর গ্রামীন ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তা শোধ করতে না পেরে কত মানুষ যে নি:স্ব হয়েছেন, ঘরর টিনের চালও খুলে নেয়া হয়েছে, কতজন আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন তা নিয়ে বাংলাদেশের একজন কিছু বলছেন না। সবাই দেখছেন তাঁর নোবেল পুরস্কার।
বুধবার চবি’র কনভোকেশনে চতুর এই উচ্চহারের সুদব্যবসায়ী ড. ইউনুস বললেন- ‘ওই যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি লেখাপড়া শুরু করলাম, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ই আমাকে বলল- এই বিদ্যায় পৃথিবী ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, এর থেকে রেহাই পাবার কোনো উপায় নেই। তখন আরও বড় আকারের জিনিসের মধ্যে ঢুকলাম। বললাম আমাদের নতুন সভ্যতা গড়তে হবে। আমার সহকর্মী যারা আছেন, অর্থনীতির পাঠদান করেন, লেখালেখি করেন তারা তো আগেই আমাকে ত্যাজ্য করেছেন, তারা এটা নিয়ে কথা বললে একেবারেই শেষ করে দেবেন কথাবার্তা।’
সুদখোর মহাজন ড. ইউনুস তাঁর এই গ্রামীন ব্যাংকের যাত্রাসহ নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরে চবি’র সমাবেশে বলেন, ‘কিন্তু আমার মাথায় সেটা রয়ে গেল যে আমাদের আবার নতুন সূত্রে যাত্রা শুরু করতে হবে, যে অর্থনীতির ভিত্তি হবে মানুষ, তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, কিভাবে নিজেকে আবিষ্কার করার প্রবণতা এবং যেদিকে তাকে ছুটিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে বের করে আনা। এগুলো সবকিছুর বীজ বপন হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে, পাশের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে (জোবরা)। এজন্য আমি চবি ও জোবরার কাছে কৃতজ্ঞ। এটা করে যে কোনোদিন একটা নোবেল পুরস্কার পাওয়া যাবে, কখনও মনে আসেনি। তবে লোকজন বলাবলি করেছিল মাঝে মাঝে।’
চবি’র সমাবর্তীদের উদ্দেশ্যে ইউনূস বলেন, ‘সমাবর্তন একজন মানুষের জীবনে একটি মস্তবড় ঘটনা। সনদ নেবে, ছবিটি সংরক্ষণ করবে, সেটা সবাইকে দেখায়, সেই বিশেষ দিনটি আজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টা কত তাড়াতাড়ি চলে যায়, কেটে যায় বোঝা যায় না। যখন শেষ হয়ে যায়, তখন মনে বড় কষ্ট লাগে। জীবনের একটা বড় অধ্যায় শেষ হল, নতুন অধ্যায়ের শুরু।’
সমাবর্তী-শিক্ষার্থী তারুণ্যকে বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখার তাগিদ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, স্বপ্ন না দেখে গর্তের মধ্যে ঢুকে থাকলে, যা আছে তা-ই মেনে নিলে কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়।
শিক্ষা-গবেষণায় নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখার তাগিদ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যে ধরনের বিশ্ব গড়তে চাই, সেই বিশ্ব গড়ার ক্ষমতা আমাদের আছে, সকল মানুষেরই আছে। কিন্তু আমরা গৎবাঁধা পথে চলে যাই বলে নতুন পৃথিবীর কথা চিন্তা করি না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যেন সবসময় এটা স্মরণ রেখেই তার পাঠদান কর্মসূচি, তার গবেষণা শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্য চালু রাখে যে আমরা শুধু খণ্ডিত বিষয়ের গবেষণা করার জন্য নিয়োজিত নই। আমরা প্রত্যেকটি বিষয়ের পেছনে একটিই উদ্দেশ্য, সমস্ত বিশ্বকে আমাদের মনের মতো করে সাজানোর জন্য, মনের মতো করে বানানোর জন্য। আমাদের যদি সেই লক্ষ্য না থাকে, তাহলে গন্তব্যবিহীন গবেষণা, গন্তব্যবিহীন শিক্ষায় পরিণত হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ পৃথিবীর ভবিষ্যত আমাদের প্রত্যেকের হাতে। আমরা যেভাবে বিশ্বকে গড়তে চাই সেভাবেই বিশ্ব গড়তে পারি। আমি যেভাবে বলেছি সেভাবে গড়তে হবে এমন কোনো কথা নেই। আমি আমার কথাটা বলে যাচ্ছি। অন্যরা তাদেরটা বলবে। কিন্তু নিজের মনের একটা স্বপ্ন থাকতে হবে এটাই আমার আবেদন। আমি কী ধরনের বিশ্ব চাই, কী ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চাই, কী ধরনের সমাজ চাই, কী ধরনের দেশ চাই- সবকিছু নিয়ে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে একটা স্বপ্ন থাকতে হবে। কিন্তু স্বপ্ন না দেখে গর্তের মধ্যে ঢুকে গেলাম, যা আছে মেনে নিলাম, তাহলে কিছুই পালটাবে না, কিছুই পরিবর্তন হবে না।’
শান্তিতে নোবেল লরিয়েট এই ড. ইউনুস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভব্যিষ্যৎ প্রজন্মকে যে স্বপ্ন দেখার কথা শোনালেন- সে কি তাঁর সেই ‘ মেটিকুলাস ডিজাইন’ ? যে মেটিকুলাস ডিজাইনের মধ্য দিয়ে তিনি এদেশের তরুণ সমাজকে প্রগতির পথে না নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায় না নিয়ে বরং অন্ধকারের পথে ঠেলে দিলেন, ঠেলে দিলেন বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি সেই একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তানী মনোভাবের দিকে।যে স্বপ্ন তিনি দেখিয়েছেন তার মেটিকুলাস ডিজাইনের মধ্য দিয়ে তা কি মেট্রোরেলে আগুন দেয়ার জন্য ? সে স্বপ্ন কি প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন থেকে সবকিছু লুটপাট করার জন্য ? সে স্বপ্ন কি বাংলাদেশের থানাগুলোতে একযোগে আগুন দেয়ার জন্য ? তার স্বপ্ন কি পুড়িয়ে পুলিশ হত্যা করার জন্য ? তার স্বপ্ন কি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বাঙ্গালী জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এমনকি বাংলাদেশ জন্দের সূতিকার সেই বাড়িতে উন্মত্ত হামলা আর আগুন দিয়ে-বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়ার স্বপ্ন ? তার স্বপ্নে কি এমন ছিল এদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হত্যা, হামলা, অগ্নিসংযোগ করার জন্য তরুণদেরকে উৎসাহিত করার ? আমাদের এই নোবেল লরিয়েট এমন আরো স্বপ্নই দেখাতে চান হয়তো !
দুটি নোবেল পুরস্কার পাবার জন্য চবি গর্ববোধ করতে পারে উল্লেখ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষক ড. ইউনূস বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যখন নিজের পরিচয় দেয়, হয়তো নোবেলের জন্য গৌরববোধ করে। কিন্তু চবির গৌরববোধ করার কারণ দুইটা আছে। পুরো কর্মসূচি, যার জন্য নোবেল পুরস্কার, এর গোড়াপত্তন হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটি তো আমি ব্যক্তিগতভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছি।তারপর যে গ্রামীণ ব্যাংক সৃষ্টি হলো, এই ব্যাংকের গোড়াতেও চবি।’
#রাকীব হুসেইন, লেখক, গবেষক।