ঢাকা: পরনে হিজাব, পুরুষদের দাড়ি, টুপি লাগানো। অথচ এরাই যদি জঙ্গী কাজকর্মে লিপ্ত হয় তখন এই বিষয়টা তো নিশ্চয়ই ইসলাম সমর্থিত নয়!?
ইসলাম মানে শান্তি! অথচ আজ সারা বিশ্বে যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, মাদ্রাসায় হুজুররা টাখনুর উপরে পাজামা, পাঞ্জাবি পরে, দাড়ি রেখে টুপি পরে হাতে কোরান নিয়ে কী করছেন?
মাদ্রাসায় মাদ্রাসায় প্রতিদিন এইসব হুজুরদের দাঁড়া ধর্ষিত হচ্ছে শিশুরা! এটা নিশ্চয়ই ইসলাম সমর্থন করবে না! তবুও তো লেবাসধারীরা প্রতিদিন এইসব কুকীর্তি করে বেড়াচ্ছে। প্রতিবাদ নেই, প্রতিবাদ করলে ইসলামবিরোধী ট্যাগ লাগিয়ে দেবে!
ব্যানারে লেখা ‘টিনের চালে কাউয়া ফজু আমার শা…’। মেয়েটা শা…. অর্থ নিশ্চয়ই জানে!
দাড়ি-টুপি আর সুন্নতী পোশাক পরা সম্ভবত মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মোল্লারাও এই অশ্লীল শব্দ বলেই যাচ্ছে!
একজন নারীর মুখ দিয়ে এমন শ্লোগান! রাজনীতিতে প্রবেশের আগেই এইরকম অশ্লীল শব্দ জনসম্মুখে বলতে তার মুখে কোনো জড়তা নেই। যদি রাজনৈতিক দলে দায়িত্বশীল সুযোগ পায় তখন বক্তৃতায় কত জঘন্য অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করবে!
কী বলা যাবে এদের? তাই দাড়ি টুপি, হিজাব পরলেই ইসলাম মেনে চলছে এই ধারণাটাই পাল্টানোর সময় এসেছে।
আসলে ইসলামের সাথে দাড়ি, টুপি, পাগড়ী, জুব্বার সম্পর্ক কোথায়? ইসলাম নির্ভর করে মানবজীবনের শান্তি-অশান্তির উপর। আল্লাহ প্রেরিত দীনুল হক্ব হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ।
অর্থাৎ রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, বিচারব্যবস্থা ইত্যাদি সব কিছুই এই জীবন-ব্যবস্থার এক একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এসব কিছু মিলেই দীনুল হক্ব নামক বৃক্ষ পূর্ণতা পায়, আর এই পূর্ণাঙ্গ বৃক্ষের শান্তি নামক ফল হচ্ছে ইসলাম।
সুতরাং যারা শরীরে ইসলাম নাই এই প্রশ্ন করেন তাদের কাছে, শান্তি কি শরীরে ধারণ করা যায়, নাকি সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে হয়? একটি দেশের সব মানুষ যদি দাড়ি রাখে, টুপি পরে, জোব্বা গায়ে দেয় কিন্তু তাদের অর্থনীতি যদি পুজিবাদী হয়, বিচারব্যবস্থা ন্যায়ভিত্তিক না হয়ে ভারসাম্যহীন, জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরজবরদস্তিমূলক আইন দ্বারা হয় তাহলে কি সেই দেশে শান্তি এসে যাবে? সাধারণ জ্ঞান কী বলে?
অনেকের ধারণা এই যে, দাড়ি ছাড়া ইসলামই হয় না, সেই দাড়ি তো আল্লাহর রসুলের বিরোধিতাকারী আবু জেহেল, আবু লাহাব, ওতবা, শায়েবার মুখেও ছিল। তারাও জুব্বা পরত, রসুল (সা.) যে জুব্বা পরতেন ঠিক একই ধরনের জুব্বা।
প্রকৃতপক্ষে দাড়ি, টুপি, পাগড়ি, জুব্বার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই, প্রকৃতির আবহাওয়া, ভৌগোলিক অবস্থার সাথে এগুলোর সম্পর্ক রয়েছে।
টুপি তো ইহুদিরা, শিখরা বা অন্যান্য ধর্মের ধর্মগুরুরাও পরেন, তাদেরও দাড়ি আছে, তারাও জুব্বা পরেন, তাদের অনেকেই পাগড়ী পরেন।
আল্লাহর অস্তিত্বে সম্পূর্ণ অবিশ্বাসী হিসাবে পরিচিত অনেকেরই দাড়ি ছিল যেমন কার্ল মার্কস, চার্লস ডারউইন, আব্রাহাম লিঙ্কন প্রমুখ যাদেরকে আপনারা নাস্তিক বলেন।
দাড়ি-টুপিই যদি ইসলামের পরিচায়ক হতো তাহলে এরাও তো ইসলামেরই ধারক হবার যোগ্য! আসলে দাড়ি-টুপি-পাগড়ী-পাজামা-জোব্বার সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই। এগুলো নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা বোকামী।
ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মতবিরোধে গিয়ে মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়া মূর্খতা।
আর ধর্মের লেবাস ধরেই আছে হেফাজত, জামায়াত।
এরা কর্ম ভালো করার উপদেশ দেয় না, দাড়ি টুপি পরার উপর জোর দেয়।
সম্প্রতি ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ধর্মপ্রাণ হিজাবি ছাত্রীদের ‘জঙ্গি’ অপবাদ দিয়ে ক্লাস থেকে বের করে দেয়া এবং হবিগঞ্জে দাড়ি রাখায় তিন কনস্টেবলকে শাস্তি দেয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
সোমবার (২৫ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো সংগঠনটির আমির আল্লামা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমানের সই করা বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে তারা বলেন, সম্প্রতি ভিকারুননিসা নূন স্কুলে একজন নারী শিক্ষিকা ধর্মপ্রাণ বাইশ হিজাবি ছাত্রীকে ‘জঙ্গি’ অপবাদ দিয়ে ক্লাস থেকে বের করে দেয়া এবং হবিগঞ্জে দাড়ি রাখায় ধর্মপ্রাণ তিন কনস্টেবলকে শাস্তি প্রদান করা ধর্মীয় স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন।
আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষ রোধ করার স্বার্থে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে গ্রেফতার করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
তারা আরও বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেও কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষ যে দূর হয়নি, উপরোক্ত ঘটনা দুটো তার প্রমাণ।