সিলেট: কোনো ঐতিহ্যই কী রাখতে দেবে না জুলাই জঙ্গীরা?

সিলেট শহরে কি জায়গার এতোই অভাব পড়েছে যে ঐতিহ্যের প্রতীক আলী আমজদের ঘড়ি আড়াল করে নির্মাণ করতে হচ্ছে জুলাই স্মৃতি স্তম্ভ?

সুরমা নদীর তীর ঘেঁষে বাংলাদেশের সিলেট শহরে ঊনবিংশ শতকের একটি দৃষ্টিনন্দন ও প্রাচীন স্থাপনা আলী আমজদের ঘড়িঘর। মূলত এটি একটি ঘরের চূড়ায় বিরাট আকৃতির ঘড়ি।

এটির নকশা করেছেন নওয়াব আলী আহমদ।টিনের তৈরি ঘরটি দেখতে অনেকটা টাওয়ারের মতো।
যখন ঘড়ির অবাধ প্রচলন ছিল না,সেসময় স্থাপিত হয় এই ঘড়ি।

১৮৭৪ খৃষ্টাব্দে সিলেট মহানগরীর প্রবেশ-দ্বার ক্বীনব্রীজের ডান পাশে সুরমা নদীর তীরে এই ঐতিহাসিক ঘড়িঘরটি নির্মিত হয়।

লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির স্থাপত‍্যশৈলীর ঘড়িঘরটি তখন থেকে আলী আমজদের ঘড়িঘর নামে পরিচিত।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হানাদার বাহিনীর গোলার আঘাতে প্রাচীন ঘড়িঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে যায়।

তবে স্বাধীনতার পর সিলেট পৌরসভার উদ্যোগে ঘড়িঘরটি মেরামত করে সচল করা হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ঘড়ির কাঁটা বন্ধ হয়ে যায়।১৯৮৭ খৃষ্টাব্দে ফের চালু করা হয়।

এসময় ঢাকার একটি কোম্পানির কারিগররা ঘড়িটি চালু রাখার জন্য রিমোট কন্ট্রোলের ব্যবস্থা করে দেন। পৌর চেয়ারম্যানের অফিসকক্ষ থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ঘড়ির কাঁটা ঘুরতো।

কিন্তু এক বছরের মধ্যেই আবারও বন্ধ হয়ে যায়।২০১১ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন ঘড়িটিকে পুনরায় মেরামত করলে তা আবার দৈনিক ২৪ ঘন্টাব্যাপী সচল রয়েছে।

দেখা গেছে, জুলাইতে যারা মারা গিয়েছে তাদের স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সিলেট সিটি করপোরেশন।

এ কেমন কথা? জুলাই হয়েছে একটা ম্যাটিকুলাস ডিজাইন। তার জন্যে সারা দেশের স্থাপনা ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার যুক্তি কি?

এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। অবশেষে জুলাই স্মৃতিফলক নির্মাণকাজ স্থগিত করার ঘোষণা এল।

আলী আমজদের ঘড়ি সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ উল্লেখ করে নবাব আলী আমজদ খানের নাতি ও মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নবাব আলী আব্বাস খান বলেছেন, এই ঘড়িটি শুধু আমাদের পারিবারিক বিষয় নয়, এটি সমগ্র সিলেটবাসীর গর্ব ও ঐতিহ্যের প্রতীক।

সম্প্রতি ঘড়িঘরের পাশে একটি স্থাপনা নির্মাণ শুরু হওয়ায় এ নিয়ে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

তিনি বলেন, “যে কোনো অবৈধ বা অনাকাঙ্ক্ষিত স্থাপনা এই ঐতিহ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং সিলেটবাসীর অনুভূতিতে আঘাত হানে। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন এবং ঐতিহ্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।”

অবশেষে সমালোচনার মুখে সিলেটে আলী আমজদের ঘড়িঘরের সীমানায় নির্মাণাধীন জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে ‘আপাতত নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে’ লেখা সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।

তবে আপাতত বিষয়টি এখনো খটকা লাগছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *