ঢাকা: ঐ রাজাকারের বাচ্চারা, এখনো কিন্তু জীবিত আছে মুক্তিযোদ্ধারা: ফজলুর রহমান।
জুলাই জঙ্গী রাজাকারদের বিরুদ্ধে কথা বলে, আঙুল উঁচিয়ে মুক্তিযোদ্ধা শাস্তির মুখে পড়লেন।
বিএনপি তাদের প্রবীণ নেতা ফজলুর রহমানকে আপাতত দল থেকে তাড়িয়েই দিল। দলীয় পদই শুধু নয়, কেড়ে নেওয়া হয়েছে দলের প্রাথমিক সদস্য পদও।
সোমবার রাতে প্রবীণ নেতাকে মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিল দল। মঙ্গলবার বহিষ্কারের চিঠি ধরানো হয়েছে তাঁর হাতে।
তিন মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে ফজলুর রহমানকে। বলা হয়েছে তিনি মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রবীণ নেতা হওয়ায় শোধরানোর সুযোগ দেওয়া হল। সেই সঙ্গে টিভি টক শো’তে তাঁকে সংযত আচরণ করতে বলা হয়েছে।
কী অদ্ভুত নির্দেশ! জন্মের থেকেই তার রক্তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, তাঁকে কিনা বলা হচ্ছে শোধরাতে!
বিএনপি তার অবস্থান পুরোপুরি পরিষ্কার করে দিলো। এরা যে রাজাকারের দল সেটা আবার, বারবার প্রমাণ করে দিলো।
বিএনপির প্রথমসারির এই নেতা খালেজা জিয়ার উপদেষ্টা হলেও ফজলুর রহমান বরাবর শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি একমাত্র বিএনপি নেতা যিনি প্রকাশ্যে বলে থাকেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক শেখ মুজিবুর রহমান।
উল্লেখযোগ্য যে, তাঁর বার্তাই রেডিওতে পাঠ করেছিলেন জিয়াউর রহমান।
একসময় ছাত্রলীগ, আওয়ামী লিগের সঙ্গে থাকা ফজলুর রহমান কিশোর বয়সে অস্ত্রহাতে মুক্তিযুদ্ধে শামিল হন।
একটি টেলিভিশন শো-তে তিনি বলেছেন, ‘যারা ৫ অগস্ট ঘটাইছে, সেই কালো শক্তির নাম হল জামায়াতে ইসলাম। তাদের যে অগ্রগামী শক্তি তার নাম হইল ইসলামী ছাত্রশিবির। সারজিস আলমরা, যারা ওই এইটার (অভ্যুত্থানের) অভিনয় করছে, ৫ অগস্টের অভিনেতা যারা, আমি তাদেরকে নেতা বলতে চাই না।
তাদের আমি অভিনেতা বলব। সেই আলবদর, আল শামস, জামায়াতে ইসলাম আমরা মনে করেছিলাম ৫৪ বছর পর পূর্বপুরুষের পরাজয়ের গ্লানি তারা ভুলে গেছে। কিন্তু না, সেই পরাজয়ের গ্লানি দ্বিগুণ আকারে তাদের মধ্যে এসেছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘ছেলেরা বা ছাত্ররা যদি মনে করে, অন্য দলের লোকেরা যদি মনে করে, আমি জামায়াত–শিবির মুক্তিযুদ্ধবিরোধী লোকজনের বিরুদ্ধে আমি কথা বলেছি, এটা আমি বলবো। এতে যদি কোনো ধরনের আমার কথার মধ্যে কারো প্রতি অসম্মান করে থাকি, আঘাত করে থাকি, তারা মনে করে, তাহলে তারা রাজনৈতিকভাবে এটার জবাব দেবে৷
আমি তাদের জবাব দেবো। এটার জন্য তো পরস্পরকে হত্যা করার ব্যাপার নাই। বাসার সামনে মব করার তো দরকার নাই।”
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘আজকে (সোমবার) হঠাৎ করে যেটি দুর্ভাগ্যজনক, আমার বাসার সামনে কিছু মিছিলের শব্দ পাইলাম। সেই শব্দগুলো বলাটাও আমার কাছে মনে হইলো, কিছু ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে আমার সন্তানের সমান, এরা কারা, আমি চিনিও না।
এরা স্লোগান আমার নামে দিলো, ফজু পাগলাকে গ্রপ্তার করো…ইত্যাদি ইত্যাদি। ফজু পাগলা মানে আমি বাংলাদেশে এখন ফজু পাগলা হয়ে গেছি। এই নামটা আমাকে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতে ইসলামী—আমি নাকি ফজু পাগলা। প্রথম এই কথাটা বলেছে, মুফতি আমির হামজা নামে একজন লোক।…এই ছেলেপেলেরাও আমার নামে ফজু পাগলা স্লোগান দিয়েছে, আমি বাংলাদেশের একজন পাগলা।
কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, তারা আমাকে হত্যা করতে চায়। আমাকে মারতে চায়, তারা আমার বাসার সামনে যেভাবে গিয়ে মব সৃষ্টি করেছে… আমি দেখছি, গত এক বছর যাবৎ ৫ই আগস্টের পর থেকে আমাদের কিছু সন্তান মব সৃষ্টি করে তাদের দাবি-দাওয়া বলেন, আর যা–ই বলেন, আদায় করতে চায়।…কিন্তু আমার মতো একজন সিনিয়র মানুষ, যে দেশটার জন্য যুদ্ধ করেছি, আমি যুদ্ধ না করলে বা মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ না করলে এই সন্তানেরা তো বাংলাদেশের সন্তান হইতো না, এরা হইতো পাকিস্তানের সন্তান। আমাদেরকে হত্যা করা বা আমাদের নামে বিশ্রী স্লোগান দেওয়া বা আমি একটা ভাড়া বাসায় (সেগুনবাগিচাস্থ কনকর্ড টাওয়ার) থাকি, এটা নিজের কোনো বাসা না।”
ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘আমি মনে করতাছি, আমি যে ভাড়া বাসায় আছি, যেভাবে গিয়ে আমার সঙ্গে মব সৃষ্টি করা হইছে, বাসায় আমাকে থাকতে দেবে কি না…মালিক বলতে পারে, ভাই, আপনাকে বাসা ভাড়া দিলে আমার বাড়ি-ঘর পুইড়া ফেলবে, যেইটা করতাছে মব।
আমি আমার জীবন নিয়ে চিন্তিত যতটা, তার চেয়ে আমার স্ত্রী দেখেন বসে আছে। আমার সন্তানেরাও ওখানে থাকে। দুই সন্তান আমার সাথে থাকে। তাদের তো কোনো অপরাধ নাই। একজনের বাসা পর্যন্ত গিয়া মব সৃষ্টি করা, যেটি বাংলাদেশে হচ্ছে, সেটি ন্যায়ভিত্তিক মনে করেন কি না?”