ভিত নড়ে গেছে ‘মার্কিন ডিপস্টেট ফর্মুলা‘র বাস্তবায়নকারি ‘মেটিকুলাস ডিজাইন‘ এর মূল ক্রীড়ানক জঙ্গী-প্রতারক-বাংলাদেশদ্রোহী ড. ইউনুসের।

বিদেশের মাটিতে যেখানেই ইউনুস বা তার উপদেষ্টা পরিষেদের যেসব সদস্যই যাচ্ছেন সেখানেই বিক্ষুব্ধ দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদেরকে। তা নোবেল লরিয়েট উচ্চহারে সুদখোর ইউনুসই হোক বা তাঁর ঘোষিত ‘ মেটিকুলাস ডিজাইনে ‘ এর মাষ্টারমাইন্ড নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী জঙ্গী সংগঠনের নেতা মাহফুজই হন।

সেই সাথে বাংলাদেশের জনগণের ওপর জগদ্দল পাথরের মত জোর করে চেপে বসে থাকা ইন্টেরিম সরকারের অপশাসন-অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশের প্রায় সব জায়গাতেই মানুষ ফুঁসে উঠছে।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে হেন কোন জেলা নেই যেখানে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল হচ্ছেনা। আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগসহ আওয়ামী সমর্থিত জনগণ জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানে প্রকম্পিত করছে ঝটিকা মিছিল নিয়ে।

এসব করতে গিয়ে পুলিশসহ সেনাবাহিনীর হাতে মার খাচ্ছে, গ্রেপ্তারও হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু সব অত্যাচার-হামলা-মামলাকে উপেক্ষা করেই মানুষ রাজপথে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে।

যে মার্কিনীদের জোরে ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করে যাচ্ছে জামায়াত-হিযবুত- হেফাজত নিয়ন্ত্রিত জঙ্গী ইউনুস সরকার সশস্ত্র বাহিনীর মদদে সেখানেও ফাটল দেখা দিয়েছে। কথিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এরই মধ্যে জনগণের কাছে ঘৃণিত হয়েছে।

আর সেই ছাত্র সংগঠনের অভিনেতা বা নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ‘কিংস পার্টি’ জাতীয় নাগরিক পার্টি ( এনসিপি)’র মধ্যেও তীব্র বিরোধ-বিষোদ্গার-দলাদলি চরমে উঠেছে। এর মধ্যে হঠাৎ করে নিকটবর্তী দেশ নেপালে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান পরবর্তী একটি শান্ত গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ঘোষণাটিও ব্যাপক আলোচনার ঝড় তুলছে।

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে ( আমি ব্যক্তিগতভাবে গণমাধ্যম বলিনা, কারণ সে চরিত্র নেই তাদের) খুব বেশি কিছু বিশ্লেষণধর্মী প্রচার না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠতে শুরু করেছে।

অনেকেই বলছেন- নেপালে এতবড় গণঅভ্যুত্থানের পরে তারা কোন ধরনের তালবাহানা না করেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দিতে পারলো। কিন্তু সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ কেন পারছেনা ? এ নিয়ে নানাজন নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এবং সেটাই স্বাভাবিক।

প্রবীণ সম্পাদক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও যিনি একসময়ে প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন এর প্রতিক্রিয়া বেশ ক্ষুরধার মনে হয়েছে আমার কাছে। তিনি অল্প কথাতেই মন্তব্য করেছেন এভাবে- “ দুটি বড় কারণ:

১. নেপালে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি।
২. নেপালে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কেউ নেই।

বিক্ষুব্ধ জেন-জি তরুণদের আন্দোলনে সরকার পতনের পর নেপালে প্রধানত উপরোক্ত দুই কারণে দেশে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্তে বিলম্ব হলো না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি শপথ গ্রহণ করেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন, ঠিক ছয় মাস পর আগামী বছর ২০২৬ এর ৫ মার্চ নিয়মিত সরকার গঠনের জন্য সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেলের দপ্তর থেকে তা ঘোষণা করা হয়েছে। ভাগ্যিস নেপালে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। তাই বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাঁধে রিসেট বাটন টিপে ওই বিরাট ইতিহাস মুছে ফেলার যে গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তেমনটা কার্কির ক্ষেত্রে হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের মত গৌরবজনক ইতিহাস মুছে ফেলতে তো অনেক বছর সময় লাগে; তার আগে নির্বাচন কিভাবে হবে?

আর নেপাল ইউনূসের মতো নোবেলবিজয়ী পাবে কোথায়? ইতিহাসে একজনও নেপালি নোবেল বিজয়ী নেই। দেশে ‘মব’ সন্ত্রাস চালিয়ে দিয়ে ছোট সংস্কার, বড় সংস্কার, ঐকমত্য ইত্যাদি নির্বাচন না করার নানা টালবাহানা উপস্থাপনের মতো ক্ষুরধার বুদ্ধির মানুষ কোথায় পাবে? নেপালি নেত্রী তাই জনগণের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেওয়ার সহজ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাঙালি তো সহজ নয়। কী বলেন?

দুই প্রধান কারণ ছাড়া আরেকটি গৌণ কারণ মনে পড়লো। তা হলো, নেপালে জামায়াতে ইসলামীর মতো ধুরন্ধর দল নেই যারা ক্ষুরধার বুদ্ধিধর নোবেলবিজয়ীকেও বুদ্ধি ধার দিতে পারে। এই আর কি!”

সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, খুনী, লুটপাটকারি,মা-বোনদের ধর্ষণকারি রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের গত বছরখানেকের কিছু খতিয়ান তুলে ধরলে পাঠক উপকৃত হতো বলেই মনে হয়।

নেপালের সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে এক নাগরিকের মন্তব্য এমন- আসুন ভালোটা গ্রহণ করি। তিনি বলেছেন,

১। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশিলা কার্কি নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হলেন। মাত্র তিন জন ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালন করবেন। এখানে কোন এনজিও প্রতিনিধি নেই যদিও এই আন্দোলনের নেপথ্যে ছিল হামি নেপাল নামের একটি এনজিও। আগামী ৫ মার্চ নেপালের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

২। সেখানে আন্দোলনকারী ছাত্ররা মন্ত্রীত্ব চায়নি, কোনো দলও করেনি। তারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গেছে। যাওয়ার আগে দেশেজুড়ে যে ভাঙচুর, জ্বালাওপোড়াও, মারপিট হয়েছে তার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছে, ক্ষমা চেয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা যে সব রাস্তাঘাট, এলাকা নষ্ট, নোংরা হয়েছে তা নিজেরা মেরামত-পরিষ্কার করেছে।

৩। জেন-জি বিপ্লবীরা সংস্কার-সংস্কার করে চিৎকার করেনি, সংবিধান ছুঁড়ে ফেলতে বলেনি, নতুন সংবিধান লিখতে বলেনি। সেখানে কোন বিপ্লবের সনদ-ইস্তাহার লাগেনি, ঐক্যমত কমিশন লাগেনি।

৪। কোন দলকে নিষিদ্ধ করতে বলেনি, শুধু কয়েকজন নেতাকে রাজনীতি থেকে অবসরে যেতে বলেছে।

৫। ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে সেনাবাহিনীকে রাস্তায় নামতে হয়নি। ৯ তারিখে অভ্যুত্থান হলেও ১২ তারিখেই সব ঠান্ডা। এখন কোন মব, দুর্নীতি-চাঁদাবাজি নেই।

*এনসিপি-বৈষম্যবিরোধীরা প্রচন্ড সংকটে।

মূলত গত চব্বিশের কথিত ছাত্রগণআন্দোলন ( বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) এর সঙ্গে জড়িত ও নেপথ্যের কারিগরদের নিয়েই গঠিত হয় কিংস পার্টি” এনসিপি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি নিয়ে-ভাগবাটোয়ারা-চাঁদাবাজি নিয়ে যেমন এখনো নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি এনসিপিতেও চলছে নানা মেরুকরণ। নানা ফন্দি-ফিকিরের আশায় শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নাগরিকগণ যোগ দিয়েছিলেন এই পার্টিতে। সাবেক সেনা অফিসাররাও যোগ দেন এতে। কিন্তু সেখানেও শান্তি নেই। নানা গ্রুপিং-কোন্দল চলছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে গঠিত এনসিপি’র কমিটি বা নানা সমাজবিরোধী কাজে এত বেশি জড়িত হয়ে গেছে যে এই দলটিও অদূর ভবিষ্যতে এতিম হয়ে যেতে পারে দলটি।

এরই মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও কেন্দ্রীয় সদস্য মেজর (অব.) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

গত ১০ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তারা এ তথ্য জানান।পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। তিনি গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও গাজীপুরের একাংশ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আমি মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক পদ থেকে অবিলম্বে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি। একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা হিসেবে আমি কখনোই এমন একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে থাকতে পারি না, যেখানে শীর্ষ নেতৃত্বের কিছু সদস্য নিয়মিতভাবে সেনাবাহিনী ও প্রাক্তন সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেন এবং শত্রুভাবাপন্ন অবস্থান নেন। আমি এ বিষয়ে একাধিকবার নেতৃত্বকে অবহিত করলেও কোনো সংশোধনীমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

বরং আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার ও বিভিন্ন মামলার সাথে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।’

রাজনীতি ও নির্বাচনের বিষয়ে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আমি (আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ) এনসিপির পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি গাজীপুর-৩ আসনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি, যেখানে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে আমার নাম উঠে এসেছে। আসন্ন নির্বাচনে আমার ভূমিকা নিয়ে আমি যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

*মাহফুজের ওপর হামলায় নাহিদ ইসলামের ক্ষোভ সরকারের উপরেই।

এরই মধ্যে লন্ডনে গিয়েছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। কিন্তু সেখানে গিয়েও রেহাই নেই।

সেখানে বিক্ষুব্ধ বাংলাদেশের নাগরিকবৃন্দের রোষানলে পড়তে হয়েছে। লন্ডনে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক ও সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদের ভেতরেও মাহফুজ আলমকে অপদস্থ ও হত্যার মৌন সম্মতি তৈরি করা হয়েছে। এই সরকার ও উপদেষ্টারা মাহফুজদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে এখন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।’

লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (সোয়াস) ক্যাম্পাসে আয়োজিত একটি সেমিনার থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টা করেছেন সেখানকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

লন্ডনের কেন্দ্রস্থলের ব্লুমসবারি এলাকায় সোয়াস ক্যাম্পাসে ওই সেমিনার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ হাইকমিশন।

লন্ডনের স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় সোয়াস ক্যাম্পাসের পেছনের রাস্তা দিয়ে হাইকমিশনের গাড়ি বের হলে গাড়ির ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় হাইকমিশনের কালো রঙের বিএমডব্লিউ গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ার চেষ্টা করেন তাঁদের কয়েকজন। কিন্তু পুলিশের হস্তক্ষেপে তাঁদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হলেও তাঁরা গাড়ির ওপর ডিম নিক্ষেপ করেন।

এ বিষয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন নাহিদ ইসলাম। তাতে তিনি লিখেছেন,

‘গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর লন্ডনে হামলার চেষ্টা হয়েছে। এর আগে আমেরিকায় হামলা ও অপদস্থ করার চেষ্টা করা হয়েছে। বারবার মাহফুজ আলমের ওপর আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের হামলা। কারণ, মাহফুজ আলমই টার্গেট। পরবর্তী ধাপে আমরা প্রত্যেকেই টার্গেট হব। আমরা জানি, আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে। গোপালগঞ্জে ফ্যাসিস্টদের নৃশংসতা আমরা দেখে আসছি।’

নাহিদ ইসলাম লেখেন, ‘মাহফুজ আলমের ওপর হামলার মৌন সম্মতি যারা তৈরি করছে, তারাও ভুগবে। ফ্যাসিবাদ বিভাজনের রাজনীতি করে। মাহফুজ আলম গণ-অভ্যুত্থানের পরে অন্তর্ভুক্তি এবং দায় ও দরদের রাজনীতির কথা বলছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সেই পথে হাঁটে নাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাইছি, ফ্যাসিবাদ বিরোধিতার নাম করে প্রতিক্রিয়াশীল ও প্রতিশোধের রাজনীতি শুরু করছে বিভিন্ন গ্রুপ, যা অবশ্যম্ভাবীভাবে ফ্যাসিবাদকে ফিরায়ে আনবে। সময় প্রমাণ করবে, মাহফুজ আলমই সঠিক ছিল, যদি তত দিন উনি বেঁচে থাকার সুযোগ পান।’

নাহিদ ইসলাম আরও লেখেন, ‘মাহফুজ আলমের ওপর হামলার ঘটনায় কোনোবারই অন্তর্বর্তী সরকার কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেয়নি। কোনো শক্ত বার্তা দেয়নি। কোনো উপদেষ্টা বা প্রেস সচিব একটা মন্তব্যও কখনো করেনি। সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদের ভেতরেও মাহফুজ আলমকে অপদস্থ ও হত্যার মৌন সম্মতি তৈরি করা হয়েছে। এই সরকার ও উপদেষ্টারা মাহফুজদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে এখন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।’

তিনি লেখেন, ‘আমরা এগুলা মনে রাখছি। রাজনৈতিকভাবে এর জবাব দেওয়া হবে।’

*সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তারের পর কারাগারে তিনজন

রাজধানীর উত্তরায় সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এ এইচ এম নোমান রেজা, তানজিল হোসেন ও ফারিয়া আক্তার তমা নামের ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই তমা হচ্ছে প্রতিবাদী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে অকথ্য ভাষায় স্লোগান তোলা মেয়েটি।

পুলিশ জানিয়েছে, গত শুক্রবার চাঁদাবাজির মামলায় ওই তিনজনকে আদালতে তোলা হয়েছিল। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তাদের কাছ থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, মামলা থেকে অব্যাহতি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে চাঁদাবাজি করছিলেন নোমান, তানজিল ও ফারিয়া। বৃহস্পতিবার রাতে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে তাঁরা উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর সড়কের একটি বাসায় ঢোকেন।

দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে মামলা থেকে অব্যাহতির কথা বলে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তাঁরা। এর মধ্যে সাড়ে ৫ লাখ টাকা আদায়ও করেন। বাকি টাকার জন্য সময় বেঁধে দিয়ে চলে যান।

পুলিশের ভাষ্য, ওই তিনজন দেলোয়ার হোসেনের পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিলেন। পরে পরিবারটি উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে। ঘটনার দিন রাতে বিমানবন্দর থেকে প্রথমে নোমান রেজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরার জসীম উদ্দিন এলাকা থেকে অপর দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

* কথিত জুলাই বিপ্লবের ঘোরতর সাহায্যকারি সম্পাদক মাহফুজ আনামও ক্ষুব্ধ।

ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম ড.ইউনুসের নেতৃত্বকাধীন সরকারের সমালোচনা করেছেন গত ১৩ সেপ্টেম্বর শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে।

ইংরেজি মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় সার্কুলেডটড পত্রিকার এই সম্পাদক বলেছেন, মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘এই সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তাদের দুটো দায়িত্ব ছিল। এক সুশাসন; দুই সংস্কার। কারণ, আপনি সংস্কার যা–ই করেন, আপনি যদি সরকারের গদিতে বসেন, তাহলে প্রতিনিয়ত আপনাকে দেশ চালাতে হবে। বাজারে কী এল না এল, কোথায় কী হলো, গন্ডগোল কী হলো, এটার দায় আপনাকে নিতেই হবে। কারণ, আপনিই চালকের আসনে আছেন।

সেখানে আমি মনে করি, এই সরকার ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।আইনশৃঙ্খলার যে পরিবেশ, তাতে নাগরিকেরা একটা অস্থিরতার মধ্যে বাস করছে।’

হত্যা মামলা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশে রাজনৈতিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, এমনকি সাবেক প্রধান বিচারপতি—সবাই মার্ডার চার্জে অভিযুক্ত। মানে একটা জাতির জন্য কী কলঙ্ক, আমার চিফ জাস্টিস যিনি, হ্যাঁ তিনি ভুল রায় দিয়েছেন, তাঁকে আপনি সাজা দেন। কিন্তু তিনি তো খুন করেন নাই। অথচ তিনি খুনের মামলার আসামি। আজকে এই মুহূর্তে প্রায় ২২৬ জন সাংবাদিক খুনের মামলার আসামি। দুর্নীতির মামলা দেন, সাংবাদিকতার অপব্যবহারের জন্য দায় দেন। কিন্তু খুনের মামলা দিয়ে সরকার নিজেদের হাস্যকর করে ফেলেছেন।’

তিনি বলেন-‘রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ঐকমত্যে আসতে পারছে না, নিজেদের মধ্যে স্ববিরোধিতা আছে, ভিন্নতা আছে। তো আপনাদের ভিন্নতার জন্য জনগণ কেন ভুক্তভোগী হবে?’ এই প্রশ্ন রেখে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম অনুরোধ করে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যত মতপার্থক্যই থাকুক, ভবিষ্যতের জন্য ছাড় দিয়ে জনগণকে একটা স্বস্তির জায়গায় নিয়ে যান।

নেপালের অভ্যুত্থান থেকে রাজনৈতিক দলের অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে উল্লেখ করে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, সেখানে রাজাকে সরিয়ে পাঁচ বছর সময় নিয়েছে নতুন সংবিধান করতে।

এরপর খালি সরকার বদলেছে, স্থিতিশীলতা আসেনি। জনগণ রাজনীতিবিদদের ওপর ঘৃণা প্রকাশ করছে। তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কার যদি অসম্পূর্ণ থাকে, থাকুক। ১০০টার জায়গায় হয়তো ১০টা হয়েছে। তারপরও একটা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন।

*নির্বাচনের জন্য কেন মরিয়া হয়ে উঠেছে ইউনুস সরকার ?

এ সরকার ক্ষমতা নিয়েই প্রথমে বলেছিল- আগে সংস্কার, তারপরে নির্বাচন । কিন্তু এর মধ্যে ড. ইউনুস বলেছেন আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই সংসদ নির্বাচন হবে ।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর এই সংস্কার কমিশনের মূখ্য সমন্বয়ক মার্কিন নাগরিক ড. আরী রিয়াজ বলেছেন- ফেব্রয়ারিতে নির্বাচন না হলে দেশ ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়বে। অপরদিকে প্রধান উপদষ্টা ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলমও একই সুরে কথা বলেছেন। তার মানে কি তারা কোন কিছুর ভয় করছেন ?

তাদের কি সিংহাসনে কাঁপুনি দেখা দিয়েছে ? তার মানে কোনভাবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনটি দিয়ে নোবেল লরিয়েট ইউনুস ও তার সহযোগীরা দেশ থেকে “সেইফ এক্সিট” চাইছে। কিন্তু সে সময়-সুযোগ কি তারা পাবেন সেটিই দেখার বিষয়।

# রাকীব হুসেইন, লেখক, প্রাবন্ধিক।

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *