ঢাকা: এন্ড্রু কিশোরকে বকেয়া কর পরিশোধের চিঠি পাঠানো হয়েছে। মৃত ব্যক্তিকে কর পরিশোধের চিঠি।
আবার যথাসময়ে কর পরিশোধ না করলে খেলাপী করদাতা হিসাবে গণ্য হবেন এবং বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যেমন জরিমানা ধার্য, সার্টিফিকেট মামলা, ব্যাংক জব্দ, মালামাল ক্রোক, জেল ও অন্যান্য।
এটা কিভাবে? ২০০৫-২০০৬ এর সরল সুদ? তারপর ২০০৬-২০১২ কি হলো? আবার ২০১২-২০১৩ এর কর+সুদ বাকী। তাহলে ২০১৩-২০১৯ কি হলো?
মাঝে মাঝে বাকী রেখে অন্যবছরগুলো পরিশোধিত? এটা কি ধরনের কাজ? এন্ড্রু কিশোর কি একজন অতি সাধারণ জনগণ?
তাঁর নাম কি উপ-কর কমিশনারের কার্যালয় কখনও শোনেননি? মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে কেউ কী জানেন?
এই দেশের কাছে এন্ড্রু কিশোরের কি এটাই পাওনা? এন্ড্রু কিশোরকে কতটুকু সন্মান দিচ্ছে বর্তমানের এই বাংলাদেশ?
বাংলা গানের জনপ্রিয় ও কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ৬ জুলাই ৬৪ বছর বয়সে মারা গিয়েছেন প্লেব্যাক সম্রাটখ্যাত এই শিল্পী।
মৃত্যুর পাঁচ বছর পর তাঁর নামে পাঠানো হয়েছে বকেয়া কর পরিশোধের নোটিশ। অদ্ভুত না?
উপ-কর কমিশনারের কার্যালয় কর সার্কেল ২৫৩, কর অঞ্চল ১২, ঠিকানা ৩/৪ পুরানা পল্টন, মদিনা টাওয়ার থেকে নোটিশটি পাঠিয়েছেন সহকারী কর কমিশনার কাজী রেহমান সাজিদ মন।
এটি পাঠানো হয়েছে শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের রাজধানীর মিরপুরস্থ সেনপাড়া পর্বতার বাসার ঠিকানায়।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৫-২০০৬ কর বছরে এন্ড্রু কিশোরের সরল সুদ হয়েছে ২২ হাজার ৪২৩ টাকা এবং ২০১২-২০১৩ কর বছরে শিল্পীর কাছে আয়কর বাবদ পাওনা রয়েছে ৪২ হাজার ৮৯১ টাকা এবং এর সরল সুদ ৭ হাজার ৪৮৯ টাকা।
সব মিলিয়ে শিল্পীর কাছে ৭২ হাজার ৮০৩ টাকা পাওনা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
নোটিশটি ইস্যু করা হয়েছে চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর। ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিল্পীকে বকেয়া পরিশোধের কথা বলা হয়েছে, অন্যথায় তাঁকে খেলাপি করদাতা হিসেবে গণ্য করা হবে।
উল্লেখ করা হয়েছে, বকেয়া কর অনাদায়ে প্রয়াত শিল্পীর বিরুদ্ধে জরিমানা ধার্য, সার্টিফিকেট মামলা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দকরণ, মালামাল ক্রোক, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও অন্যান্য সেবা বিচ্ছিন্নকরণ, জেল এবং অন্যান্য বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক্ল্যাপ সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়রুল হাসান বলেন, ‘এন্ড্রু কিশোর দেশের একজন কিংবদন্তি শিল্পী। তাঁকে ২০ বছর আগের বকেয়া পরিশোধের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে; অথচ তিনি পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন, এটা সবার জানা।
এমনকি নোটিশে তাঁর নামের পাশে মৃতও উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি মারা গেছেন, এটা যদি অফিস জানে, যদি ২০ বছর আগের বকেয়া থেকে থাকে, তাহলে শিল্পী মারা যাওয়ার পাঁচ বছর পর কীভাবে নোটিশ পাঠানো হলো?
কেন তাঁকে জেল-জরিমানা করা হবে উল্লেখ করা হলো? বকেয়া থাকলেও সেটা তো তাঁর পরিবারের সদস্যদের পরিশোধ করার কথা বলা যেতে পারে, প্রয়াত শিল্পীকে নয়। আমি মনে করি, এটা শিল্পী, শিল্পীর পরিবার ও সংগীতজগৎকে বিব্রত করে।’
এ বিষয়ে কর অঞ্চল ১২, কর সার্কেল ২৫৩-এর সহকারী কর কমিশনার কাজী রেহমান সাজিদ বলেন, ‘আইনের চোখে সবাই সমান। এন্ড্রু কিশোরের নামে যেহেতু কর বকেয়া রয়েছে, তাই তাঁর নামে অফিশিয়ালি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাঁর আয় করা অর্থ বা সম্পত্তি যাঁরা ভোগ করছেন অর্থাৎ পরিবারের সদস্যরা এখন বকেয়া পরিশোধ করবেন।
এ ধরনের চিঠি প্রয়াত নায়করাজ রাজ্জাকের নামেও পাঠানো হয়েছিল। তাঁর পরিবারের সদস্যরা কর বকেয়ার বিষয়টি জানতেন না। জানার পর তাঁরা নায়করাজের বকেয়া পরিশোধ করছেন।’
কিন্তু মৃত ব্যক্তিকে কীভাবে জেল-জরিমানা করা হবে? আর বকেয়া কর যদি থাকেই তা পরিশোধের জন্য পরিবারের সদস্য বা তাঁর ওয়ারিশদের কথা উল্লেখ করা যেত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা ঠিক; চিঠির ভাষা একটু ভিন্ন হতে পারত।
পরিশোধের জন্য পরিবারের সদস্যদের বলা যেতে পারত। আসলে এটা আমাদের কমন ফরমেট চিঠি। যাঁদের কর বকেয়া আছে, তাঁদের কাছে এমন চিঠি পাঠাতে হয়।’