ঢাকা: এই দেশে শিক্ষকদের যেভাবে অপমানিত করা হচ্ছে তা কোনো সভ্য দেশে হয় না। শিক্ষকদের উপর জলকামান পর্যন্ত নিক্ষেপ করা হয়েছে।

বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ৩৮১ জন শিক্ষক।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেফতারকৃত শিক্ষকদের নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতি/ বহিষ্কার/ সাময়িক বহিষ্কার এবং একাডেমিক ও প্রশাসনিক যেকোনো ধরনের শাস্তি বাতিলের দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন ৩৮১ জন শিক্ষক।

১৫ সেপ্টেম্বর, সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর মাহবুব আলম প্ৰদীপ কর্তৃক গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শিক্ষকবৃন্দ বলেছেন, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকবৃন্দ আজ চরম উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছি।

জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষক সমাজ আজ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও নানা ধরনের হয়রানির শিকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী, অভিজ্ঞ তরুণ প্রভাষক থেকে শুরু করে বর্ষীয়ান অধ্যাপকবৃন্দকে যে প্রক্রিয়ায় একাডেমিক, প্রশাসনিক ও গবেষণা কর্ম থেকে বিরত রাখা হচ্ছে, বহিষ্কার করা হচ্ছে এবং গ্রেফতারের মাধ্যমে জেলে প্রেরণ করা হচ্ছে তা অকল্পনীয়।

আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে ইতোমধ্যে অসংখ্য শিক্ষককে একাডেমিক শাস্তি, বয়কট, ট্যাগিং ও মানসিকভাবে নিপীড়ন করা হচ্ছে। এটি শুধুমাত্র শিক্ষক সমাজের জন্য অপমানজনক ও সামাজিকভাবে মর্যাদাহানিকরই নয় বরং সমগ্র জাতির জন্য লজ্জাকর।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় একটি মুক্তচিন্তার ক্ষেত্র যেখানে ভিন্নমত প্রকাশ, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার।

আমরা পর্যবেক্ষণ করছি যে, সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাসমূহে আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে অপপ্রয়োগ করে ভিন্ন মত দমনের এক ভয়ঙ্কর ও অনভিপ্রেত দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে।

বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, আজ জাতির বিবেক শিক্ষকদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে ‘মব’ নামক অপসংস্কৃতি সৃষ্টির মাধ্যমে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা, নির্লিপ্ততা ও পুরোপুরি পক্ষপাতমূলক আচরণ এ পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।

স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের ওপর দমনপীড়নের এই প্রক্রিয়া বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীন একটি ঘটনা।

এটি কেবল ব্যক্তি-অধিকার লঙ্ঘনই নয় বরং এটি সামগ্রিকভাবে দেশের শিক্ষা, চিন্তা ও গবেষণার পরিবেশকে ধ্বংস করছে। হাত কড়া হাতে জাতির জ্ঞানযোদ্ধা শিক্ষক আজ জেলখানায়; খুনের মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি আজ জাতির বিবেক।

এতে বলা হয়, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শিক্ষকরা শুধু রক্তই দেননি, তারা কলম, কণ্ঠ ও জ্ঞান দিয়ে লড়াই করেছেন।

শিক্ষকদের রক্তে স্বাধীনতার দাম, বুদ্ধিবৃত্তির স্বাধীনতা, চিন্তার সাহস এবং মানবতার জয় লুকিয়ে আছে। সুতরাং চিন্তাশীল এই বুদ্ধিজীবী সমাজকে ধ্বংস করার কোন সুযোগ নেই।

আমরা মনে করি, একটি জাতির বিবেক ও শিক্ষাঙ্গনকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও তাদের মর্যাদা রক্ষা অতীব জরুরি।

অন্যথায় এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল আমাদের প্রজন্ম ও জাতির ভবিষ্যতের জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *