ঢাকা: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ওরফে রজার রহমানের স্ত্রী নূরুন নাহার রহমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট পার্টির একজন নিবন্ধিত সদস্য এবং ভোটার। বর্তমানে তাঁকে নিয়ে হুলুস্থুল সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে কত কী যে ঘটে চলেছে! সব ষড়যন্ত্র, ভুয়া কারবার।

উল্লেখযোগ্য যে, শুধুমাত্র মার্কিন নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে এবং কোন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধিত সদস্য হতে পারে। অর্থাৎ মিসেস রহমান একজন মার্কিন নাগরিক। যদিও এর মাধ্যমে রজার রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে নিশ্চিত ভাবে বলা কঠিন, তবে একজন বিদেশী পত্নী সহ জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান হবার নজির মনে হয় বাংলাদেশে এই প্রথম।

প্রসঙ্গত, করিডোর ও নাগরিকত্ব ইস্যুতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য এবং তথ্য গোপন করার ঘটনায় তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে তিনি মানবিক করিডোর নিয়ে আলোচনা অস্বীকার করছেন, অন্যদিকে তাঁর মার্কিন নাগরিকত্ব গোপন করে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদে বসে দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।দেশ বিক্রি করার ছলচাতুরি চলছে দেশের চারদিকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষ করে খলিলুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও কূটনীতিতে এমএ এবং অর্থনীতিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। জাতিসংঘে দীর্ঘদিনের পেশাগত অভিজ্ঞতা এবং ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে খ্যাত এই কর্মকর্তা বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে সম্প্রতি দুটি ইস্যুতে তাঁর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমত, রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যকে তিনি সরাসরি অস্বীকার করেছেন। দ্বিতীয়ত, তাঁর মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সূত্র বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছে। বিএনপি খলিলুরের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।

২১ মে দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান বলেন, “মানবিক করিডোর নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো কথা হয়নি এবং হবেও না। এটি আমাদের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত। আরাকানের যে অবস্থা, তাতে করিডোরের কোনো প্রয়োজন নেই। করিডোর সৃষ্টি করে লোকজনের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কোনো প্রয়োজনীয়তা এখন নেই। যেটা প্রয়োজন আছে, সেটা হলো ত্রাণ সরবরাহ করা।

এর আগে খলিলুর রহমান বলেছিলেন, করিডর নয়, বাংলাদেশ আসলে প্যাসেস দিচ্ছে। তবে প্যাসেস ও করিডোর কী তা নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। খলিলুর রহমান করিডোর নিয়ে মিথ্যাচার করছেন এটি স্পষ্ট।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, খলিলুর রহমান ‘রজার রহমান’ নামে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন এবং অন্তত ২৬ বছর সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেছেন। এমনকি, মার্কিন সরকারে চাকরিও করেছেন বলে সেখানকার রেকর্ডে পাওয়া গেছে।

নিউইয়র্কের স্কারসডেলে তাঁর স্থায়ী বসবাস, ম্যাসাচুসেটস ও কানেকটিকাটের একাধিক ঠিকানায় বসবাসের তথ্য এবং তাঁর স্ত্রী ও আত্মীয়দের মার্কিন বসবাসের রেকর্ডও উন্মোচিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, রজার রহমান নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তার এবং তার পরিবারের সঙ্গে তোলা ছবিগুলো, তাঁর স্ত্রীকে ‘সাথী’ নামে সম্বোধন এবং আত্মীয়দের মন্তব্য থেকে খলিলুর রহমান ও রজার রহমান একই ব্যক্তি বলে প্রমাণিত হয়েছে।

এখন মোদ্দা কথা হচ্ছে , রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির যদি সত্যিই দ্বৈত নাগরিকত্ব থেকে থাকে এবং তিনি সেটা গোপন করে থাকেন, তবে তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।

এদিকে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।বৃহস্পতিবার (২২ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন এই দাবি জানান।

ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বুধবারের (২১ মে) বক্তব্যে আবারো নতুন বির্তকের জন্ম দিয়েছে। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসর কয়েকজন উপদেষ্টাকে সরিয়ে দেয়ার দাবি আমরা ইতোপূর্বে অনেকবার উত্থাপন করেছি।’নিরপেক্ষতা বজায়ে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরানোর আহ্বান জানান তিনি।

বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা যাদের বক্তব্যে এবং কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এমন বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেয়ার দাবি আমরা তুলেছিলাম।’

তবে খলিলুর রহমান বিষয়টা অস্বীকার করেছেন। খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমার জাতীয়তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আমার একটাই জাতীয়তা, আমি বাংলাদেশি।’ ‘আমার আমেরিকান পাসপোর্ট নেই। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের জাতীয়তা আমার নেই।’

খলিলুর রহমান আরও বলেন, ‘আমি আমার পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থেকেছি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে থাকার কারণে যদি আমাকে বলা হয় বিদেশি নাগরিক, তাহলে কাল তো তারেক রহমানকেও এমন কথা বলবে। আমি আবেদন করব, একটু বুঝে কথা বলবেন। যদি আমাকে ঢিল নিক্ষেপ করেন, সেই ঢিল কিন্তু অন্যের ওপর গিয়েও পড়তে পারে।’

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *