ঢাকা: শুধু কি আসাম, ভারত? আমাদের বাংলাদেশেও গায়ক জুবিনের আছে অজস্র ভক্ত। যারা ছোটবেলাটা পার করেছেন জুবিন গার্গের গান শুনে।

জুবিনের মৃত্যুতে অসমে প্রায় রাষ্ট্রীয় শোক। গত দুদিন ধরে সব স্তব্ধ । শোকে মানুষ এতটাই বিহ্বল যে সুইগি, জোমাটো-সহ সমস্ত অ্যাপ সার্ভিস বন্ধ রাখতে হয়েছে। কেন? কী এমন করেছেন জুবিন?

আসলে, কিছু মানুষ ঈশ্বরের আপন সন্তান হন। যেমন জুবিন। ৪০ টি ভাষায় প্রায় ৩৮০০০ গান গেয়েছিলেন তিনি। কী মেধাবী একটি মানুষ।

ঠিক কী কারণে আবালবৃদ্ধবনিতার কাছের মানুষ ছিলেন তিনি কেউ জানে না । কেন ধর্ম, বর্ণ, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে জুবিনকে সবাই ভালোবাসতেন, কেউ জানেনা । কিন্তু বাসতেন। সবাই জুবিনকে ভালোবাসতেন।

জুবিন এমন একজন ছিলেন, যাঁর কফিন কাঁধে নিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর গান গাইছেন। যাঁর মৃত্যুতে অসমের ডিজিপি নিজে রাস্তায় নেমে ভিড় সামলাচ্ছেন। পুলিশকর্মীরা হাউ হাউ করে কাঁদছেন। গোটা আসাম ভেঙে পড়েছে আজ জুবিনের কফিন গুয়াহাটি আসতেই।

তাঁর মৃত্যু স্বাভাবিক হয়নি, এমনটাই অভিযোগ উঠছে। বিভিন্ন এফআইআর দাখিল হয়েছে। সিঙ্গাপুর পুলিশ সহযোগিতা করছে।

জুবিন এমন একজন ছিলেন যিনি বিহুর সময়ও মঞ্চে হিন্দি গান গাইতেন। আসামের জাতীয় উৎসব বিহু। জুবিনকে কেউ চটাতো না। একটু খামখেয়ালী, বোহেমিয়ান ধরনের জীবনযাপন করতেন তিনি।

সংসারের গণ্ডি বাঁধতে পারে না, এমন কিছু মানুষ থাকে, জুবিন ছিলেন তেমন। বিয়ে করেছেন, স্ত্রী গরিমা শইকিয়া গার্গ। খুব ভালোবাসতেন স্ত্রীকে। স্ত্রী আজ স্বামীর কফিনের পাশে বসে শুধু তাই বিহ্বল চোখে দেখে যাচ্ছেন মানুষের ভালোবাসা জুবিনের প্রতি।

জুবিনের মৃত্যুতে তাঁর শেষযাত্রায় অংশ নিতে লাখো মানুষ কান্নাকাটি করে রাস্তায় নেমেছেন।

তাঁর কফিন একবার ছুঁয়ে দেখতে মানুষ এত পাগলের মতো রাস্তায় ছুটছেন; আমরা জানি না, বুঝি না। পারবও না।

আসাম সরকার শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) থেকে ঘোষণা করেছে টানা তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ‘এক্স’-এ দেয়া এক বার্তায় জানিয়েছেন, ভক্তরা যেন প্রয়াত এই সঙ্গীত কিংবদন্তিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারেন, সেই জন্য রাজ্য সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, আমাদের প্রিয় জুবিনের অসংখ্য শুভানুধ্যায়ীরা রোববার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে সরুসজাই স্টেডিয়ামের অর্জুন ভোগেশ্বর বড়ুয়া ক্রীড়া কমপ্লেক্সে তাঁর মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, সবার জন্যই শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। অনুরোধ করছি, শৃঙ্খলা বজায় রেখে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করুন, যাতে আমরা আমাদের প্রিয় জুবিনকে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিদায় জানাতে পারি।

এর আগে রাজ্য সরকার জানায়, সাংস্কৃতিক আইকন শ্রদ্ধেয় জুবিন গার্গের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। ২০ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হবে।

এই সময়ে কোনও সরকারি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, ভোজসভা বা আনুষ্ঠানিক উৎসবের আয়োজন হবে না। শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে ‘সেবা সপ্তাহ’-এর যে সব অনুষ্ঠান আনুষ্ঠানিকতা বা সুবিধা বিতরণের সঙ্গে যুক্ত, তা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

সিঙ্গাপুর থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে জুবিন গার্গের দেহ নিয়ে আসা হয়। তাঁকে দিল্লি বিমানবন্দরেই শ্রদ্ধা জানান অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা। এরপরে, জুবিনের দেহ গুয়াহাটিতে ফেরার পরেই, গুয়াহাটির পথে পথে ভিড়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *