মানবিক করিডোর নামে যা করা হচ্ছে তা বাংলাদেশের জন্য কেন বিপজ্জনক?
বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে বিভিন্ন দেশে “মানবিক করিডর” নামে এমন এক কৌশল প্রচলিত হচ্ছে, যার মাধ্যমে একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ডের নির্দিষ্ট অংশ বিদেশি সামরিক ও বাণিজ্যিক শক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। বাংলাদেশেও এই মানবিক করিডর প্রকল্পের নামে এক মারাত্মক জাতীয় সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, যা দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গভীর হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
সার্বভৌমত্বের সরাসরি লঙ্ঘন
মানবিক করিডরের মাধ্যমে দেশের সীমান্তবর্তী বা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এমনভাবে বিদেশি শক্তির জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে, যা জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস। এটি বাংলাদেশকে একটি অবাঞ্ছিত পরাধীন অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছে, যেখানে দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি ও সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হবে বহিরাগত শক্তির দ্বারা।
এর ফলে:
দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হবে,
কৌশলগত এলাকা বিদেশি সেনাদের হাতে পড়ে যাবে,এবং জাতীয় নিরাপত্তার চরম হুমকি সৃষ্টি হবে।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
মানবিক করিডর প্রকল্পের আওতায় উন্মুক্ত হওয়া এলাকা নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলা হলেও, বাস্তবে এটি স্থানীয় জনগণের জীবিকা ও জমিজমার অধিকার হরণে নিয়ে আসছে। পরিবেশ ও সামাজিক বিন্যাসের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে,
যার ফলে:
স্থানীয় কৃষক ও মৎসজীবী জনগণ তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবনযাত্রা হারাচ্ছে,জমি দখল ও জায়গা সঙ্কুচিত হওয়ার কারণে স্থানীয় বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে,এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।
নিরাপত্তা হুমকি ও সামরিক উত্তেজনা
মানবিক করিডর হিসেবে বিদেশি সামরিক শক্তির উপস্থিতি বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দ্বন্দ্বের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে। বিশেষ করে, করিডরের কারণে:কৌশলগত ভূখণ্ড বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে,
সামরিক ঘাঁটি ও নজরদারি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে,এবং বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মুখে পড়ছে।
দেশের রাজনৈতিক স্বাধীকারের ওপর প্রভাব
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের স্বৈরাচারী ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির প্রভাব লক্ষ্যণীয়। মানবিক করিডরের নামে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো সাধারণ মানুষের মতামত বা আইনসভায় যথাযথ আলোচনার বাইরে গড়ে উঠছে।
এতে:
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হচ্ছে,
বিরোধী মতনিরোধ বাড়ছে,এবং দেশের শাসন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা হারাচ্ছে।
করিডোর নয়, করাল ছায়া
‘মানবিক করিডোর’ নামের এই পরিকল্পনা আদতে বাংলাদেশের ভূখণ্ড, সম্পদ, রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা কাঠামোর ওপর একটি বহুমাত্রিক আক্রমণ। এটি যদি জনগণের প্রতিরোধ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে থামানো না যায়, তবে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ শুধু ভূগোলগত স্বাধীনতা নয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরাধীনতার এক নতুন যুগে প্রবেশ করবে।
#সাখাওয়াত হোসেন,
মার্কিন প্রবাসী বাঙালি ব্যবসায়ী
প্রাথমিক সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।