ঢাকা: এই বাংলাদেশে দুইদিন পর পর নতুন নতুন পাগলের আমদানি হয় যারা নতুন নতুন ব্যাখ্যা দিয়ে জীবনকে রসময় করে তোলে!

এঁদের কথায় হাসবো না কাঁদবো, তাই বোঝা যায় না। বিশাল মুশকিলে ফেলে দেয় এঁরা।

তেমনি হয়েছেন ফরহাদ মজহার। মজহারের মতো এমন‌ ক্ষতিকর মন্তব্য এর আগে কেউ দেননি।

“কিছু মানুষ লালনের গানের সঙ্গে নাচ করেন। এটা কিন্তু লালনের ভাবের সঙ্গে যায় না। এটা ক্ষতিকর।” ফরহাদ মজহারের এই বক্তব্যটি কি লালনের ভাবের সঙ্গে যায়?

এই কথা মনে হয় লালনের ভাবজগতকে মনগড়া বেড়া দিয়ে গেইট কিপিং করার বক্তব্য। বর্তমান পরিস্থিতি সমাজে নাচ-গান নিয়ে যে বিদ্বেষ চলছে, সেখানে এই কথা ঐ মানুষগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

একবারে তিনি বলে দিলেই পারতেন, লালনের গান এই দেশের জন্য না! হয়তো বলবেন!

তাহলে বলতে হবে, যারা এতদিন লালনের গান শুনে মাথা নেড়েছেন বা শরীরের ভেতরকার ছন্দকে প্রকাশ করতে গিয়েছেন, তাঁরা ভুল করছেন! এই তো?

লালনের গান চললে আমাদের সবাইকে ভাবলেশহীন মুখে, স্থির হয়ে বসে থাকতে হবে। কেউ ভুলেও একটু পা নাড়াবেন না, নইলে লালনের ভাব ক্ষয়ে যাবে।

উল্লেখযোগ্য যে, কুষ্টিয়াতে আলোচনা সভা ও গানে গানে স্মরণ করা হলো লালন সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীনকে।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) শেষ বিকেলে কুমারখালীর ছেঁউরিয়া ফকির লালন শাহের আখড়াবাড়িতে স্মরণসভা ও গানবাজনার আয়োজন করে লালন একাডেমি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন- বাংলাদেশে পাকিস্তান আমলে লালনের গান গাওয়া হতো শুধু পল্লীগীতি হিসেবে।

লালনের নামও নেওয়া হতো না। শুধুমাত্র স্বাধীনতার পরে এটা লালনের সংগীত আকারে গেছে। আর ফরিদা পারভীন তাঁর গায়কীর মধ্য দিয়ে লালনকে পল্লীগীতির স্তর থেকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে এনেছেন একটা ভাবের গান হিসেবে।

ফরিদা পারভীন একজন শিল্পী নয়। তাঁকে শিল্পী বললে অপমানিত করা হবে বলে মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেছেন, লালনের গান যে সাধকদের, বাংলার ভাব চর্চার। বাংলা দর্শন চর্চার একটা দীর্ঘ ধারায় গড়ে উঠেছে। এটার কোনো রকম হদিস আমাদের শিক্ষিত মহলেও নাই।

আবার যারা লালনের গান চর্চা করে তাঁদের মাঝেও নাই। ফরিদা পারভীন তাঁর গায়িকার বিশেষ ভঙ্গির মাধ্যমে প্রথম আমাদের বুঝিয়েছেন লালন একটা নিছকই সংগীত নয়। এটা একটা ভাব সংগীত। এটা একটা ভাবের গান।

এটা বিশেষ একটা দার্শনিক অবস্থানকে পেশ করবার বিশেষ পদ্ধতি। লালন শিল্পী ও ভক্তদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন- কিছু মানুষ লালনের গানের সঙ্গে নাচ করেন। এটা কিন্তু লালনের ভাবের সঙ্গে যায়না। এটা ক্ষতিকর। সুতরাং এটাও চর্চার বিষয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্ষ্ঠুানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (প্রশাসক, কুষ্টিয়া পৌরসভা) মো. মিজানুর রহমান।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *