রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসনিক ভবনসহ ১২টি স্থাপনার পুনঃনামকরণ, পরিবর্তন এবং নতুন নামকরণ করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের নায়ক, জাতির পিতাকে মুছে ফেলা, ৭১ কে মুছে ফেলার দুর্দান্ত চক্রান্ত চলছে সারা বাংলাদেশে।

উল্লেখযোগ্য যে, বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৯তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসউদ।

পুনঃনামকরণ করা স্থাপনাগুলো:
১. মুজিব হল>বিজয়-২৪ হল
২. ফজিলাতুন্নেছা হল>জুলাই-৩৬ হল
৩. সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন> প্রশাসন ভবন (১)
৪. মনসুর আলী প্রশাসন>প্রশাসন ভবন (২)
৫. শেখ রাসেল স্কুল>রাবি মডেল স্কুল
৬. কৃষি অনুষদ ভবন>কৃষি ভবন
৭. শেখ কামাল স্টেডিয়াম>রাবি স্টেডিয়াম
৮. তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট>সিনেট ভবন
৯. ড. কুদরত ভবন>জাবির ইবনে হাইয়ান ভবন
১০. ড. ওয়াজেদ ভবন>জামাল নজরুল ইসলাম ভবন
১১. কাজলা গেইট>শহিদ সাকিব আনজুম গেইট
১২. বিনোদপুর গেইট>শহিদ আলী রায়হান গেইট

 

বিষয়টি লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, এখানেও জুলাই ৩৬, বিজয় ২৪ ইত্যাদি নাম দেয়া হয়েছে। ৭১ না থাকলে দেশ স্বাধীন হতো না। বঙ্গবন্ধু না থাকলে দেশ স্বাধীন হতো না। অথচ সেই নামগুলো অবলীলায় মুছে ফেলা হচ্ছে।

একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় অবদান এই যে, তিনি ১৯৭১-এর মার্চে বাংলাদেশের সব মানুষের মনে সার্বভৌমত্বের বা স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বা ধারণা গেঁথে দিতে পেরেছিলেন।

অবাক করার বিষয় হলো একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া রসায়নবিদ, গবেষক, শিক্ষাবিদ ড. কুদরৎ এ খুদার নাম পরিবর্তন। পাটকাঠি থেকে পার্টেক্স কাঠ তৈরির ফর্মুলা তিনি আবিষ্কার করেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ‘শিক্ষা কমিশন’ তাঁর হাত দিয়েই তৈরি হয়েছিল। এই ব্যক্তিটিও স্থান পেলেন না বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর।

নিজের দেশের রসায়নবিদ কুদরত এ খুদার নাম পরিবর্তন করে ওই একাডেমি ভবনটির নাম রাখা হয়েছে জাবির ইবনে হাইয়ানের নামে, যার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কও নাই।

দেশে বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণার গোড়াপত্তন হয়েছিল যাঁর হাত ধরে তিনি বিজ্ঞানী কুদরাত-এ-খুদা। দেশের পাট, নারিকেল, বাঁশ, ঘাস ইত্যাদি অতিপরিচিত জিনিস থেকে বিরাট শিল্প গড়ে উঠতে পারে তা হাতে-কলমে শিখিয়ে গেছেন এই বিজ্ঞানী। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা যে কত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটা করার জন্য বিজ্ঞানের অনেক অনেক বই যে বাংলায় লেখা দরকার – তা তিনি শুধু যে দেখিয়ে গেছেন তা নয়, নিজের হাতে লিখে গেছেন অনেকগুলো বই ।

দেশে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান সাময়িকী প্রকাশ করা শুরু হয়েছিল ড. কুদরাত-এ-খুদার হাত দিয়ে। তাঁর উদ্যোগে ১৯৬১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল বিজ্ঞান সাময়িকী ‘পুরোগামী বিজ্ঞান’। শিশুকিশোরদের জন্য বাংলা ভাষায় প্রথম বিজ্ঞান সাময়িকী ‘বিজ্ঞানের জয়যাত্রা’ও প্রকাশিত হয় তাঁর উদ্যোগে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাফাসান আলম বলেন, ‌স্থাপনাগুলোর নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত শুধু প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়, এটি চব্বিশের ছাত্র আন্দোলনের প্রতিফলন। শিক্ষাঙ্গনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও গণতান্ত্রিক হওয়া উচিত। জুলাই আন্দোলন আমাদের সামনে সেই দাবি এনেছিল।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *