ঢাকা: জঙ্গী, জামাতিদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করলেই এরা বসে থাকার লোক? কার্যক্রম বন্ধ করা কোনো সমাধান না। এদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করতে পারলে এই দেশ থেকে হারিয়েই যাবে গান, বাউল গান, লালনের অনুসারীরা ।
এরা পরিকল্পিতভাবে যাতে আর কখনো কারও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে ব্যবস্থা না করে কার্যক্রম বন্ধ করলে কী লাভ হবে?
বয়স্ক, হয়তো ভবঘুরে, সন্ন্যাসী, বাউলদের চুল দাড়ি বড় থাকে। তারা সংসার বিরাগী হন, তবে তাঁরা পাগল নন। লালন ফকির পাগল ছিলেন না। অথচ এদের জোর করে ধরে চুল দাড়ি কেটে দেয়া হচ্ছে!
লোকটাকে দুজন জোর করে ধরে টানাটানি করে। চুল কাটছে মস্ত মস্ত জেহাদিগুলো। তাদের সাথে একা না পেরে লোকটা আল্লাহর কাছে বিচার দিচ্ছে।আল্লাহ তুই দেহিস!
একজনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করে কিছু করা তার চেয়ে অমানবিক কাজ ছাড়া আর কিছু হতে পারে? এর পেছনের মানসিকতাটা কি?
তাঁদের ধারণা উনারা ভালো কাজ করছেন। সওয়াবের কাজ করছেন। মানসিকতা হলো আমাকে বেহেস্তে যেতে হবে। এর জন্য অন্যের চিন্তা, বিশ্বাসকে সম্মান করার টাইম নাই। সবাইকে জোর করে আমার চিন্তার মতোই বানাতে হবে।
এই একই চিন্তা থেকেই মাজারে আগুন লেয়া হচ্ছে। অথচ পৃথিবীটা সুন্দর বৈচিত্রতায়।
চুলে জট। রয়েছে লম্বা দাড়িসহ গোঁফও। বাউল ফকিরের মতো দেখতে বয়ষ্ক এই ব্যক্তিকে হঠাৎ করেই কয়েকজন টার্গেট করেন চুল কাটার।
এসময় রক্ষা পেতে দেন দৌড় তিনি। তবে শেষরক্ষা হয়নি। সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা ও মাথায় পাগড়ি পরা দুজন তাকে জাপটে ধরেন। মেশিন দিয়ে তার মাথার জট ও চুল জোর করে কেটে দেন। এসময় চিৎকার করে বৃদ্ধ বলতে থাকেন ‘আল্লাহ, তুই দেহিস’।
ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির নাম হালিম উদ্দিন আকন্দ (৭০)। তিনি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
এইরকম আরো বহু জনকে করা হয়েছে।
ছিন্নমূল মানুষের চুল কেটে দেওয়ার দায়িত্বে থাকা মাহবুবুর রহমান নিজেকে সফল কনটেন্ট ক্রিয়েটর দাবি করেন।তার বাবার নাম সামছুল আলম।
তবে তাঁরা কি আদৌ ছিন্নমূল? নাহ, ছিন্নমূল নাম দেয়া হয়েছে। আর কারো জট কাটার অধিকার তো তাঁকে দেয়া হয়নি, তিনি কেন করতে যাবেন?
সবচেয়ে চোখে লাগে যে ভিডিও সেটা হলো এক ব্যক্তির জোর করে জটা কেটে দেওয়া ও তাঁর হাতের বালা খুলে নেওয়া।
ব্যক্তির নাম লিটন সাধু। তিনি রাজধানীর পোস্তগোলা মহাশ্মশানে লাশ সৎকারের কাজ করেন। পাশাপাশি সদরঘাট এলাকায় ফলও বিক্রি করেন তিনি। আধ্যাত্মিক ভাবনা থেকে দীর্ঘদিন ধরেই চুল–দাড়ি লম্বা রাখেন তিনি। দুই হাত ভর্তি থাকে ধাতব বালা। যার মূল্য প্রায় দুই থেকে তিন লাখ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, শাহদীন মালিক এবং অন্যান্য গণমাধ্যম একে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন।
নিজের কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা জানিয়ে বললেন, ‘মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের নিয়ে আমাদের যে কার্যক্রম পরিচালনা করতাম। সেটা সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করলাম। কাজটা আমাদের চোখে ভালো মনে হলেও আইনের দিক থেকে এটা বেআইনি। তাই দেশের আইনের প্রতি সম্মান জানিয়ে কাজটা ছেড়ে দিলাম।’
তবে আদৌ ছাড়বেন কিনা, নাকি আরো দলবল পাকাবেন সেটা নিশ্চিত নয়।
এইসব শয়তানি কার্যক্রম, আইন করে বন্ধ করার সময় এসেছে। যথেচ্ছা আচরণে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অনেকেরই পারিবারিক জীবন হুমকির মুখে।