ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু শূন্য করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কয়েক দশক আগে থেকেই। এখন সেই ইসলামী জোশ বেড়েছে শতগুণ। এই হলো ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের অবস্থা।
ধর্মের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান পৃথক হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। কিন্তু ‘দেশপ্রেমের’ কারণে তা সঠিকভাবে হয়নি। এই কোট আনকোট “দেশপ্রেম” শব্দটি দেখে অনেকেরই হয়তো আঁতে ঘা লাগতে পারে।
কোন কোন সুশীল একটু আধটু ম্যাঁও ম্যাঁও করে উঠতে পারেন। তাঁরা হয়তো বলে উঠবেন—একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা সব ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলাম। আবার সম্প্রতি “জুলাই জঙ্গী সন্ত্রাস” এর অভিনেতা ও বেনিফিসিয়ারিরা তাদের স্বার্থে বলছে- এ দেশ সবার।
আর আমাদের ইন্টেরিম প্রধান মহামান্য শান্তির নোবেলধারী ইউনুস সাহেবতো নানা রং চড়িয়ে নাটকের সংলাপের মত করে বলে বেড়াচ্ছেন- এ দেশের সকল ধর্মীয় ও জাতিগোষ্ঠী নাগরিকের সমান অধিকার দিয়েছে রাষ্ট্র ও সংবিধান ।
আহা কি মধুর কথা ! শুনলেও প্রাণ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু সেই রাষ্ট্রের একশ্রেণীর লোভী-উগ্র ইসলামী সাম্প্রদায়িক নাগরিক ও প্রশাসনযন্ত্র যে প্রতিনিয়ত ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে দেশ ছাড়তে বাধ্য করছে তা আর দেখছেন না কেউ।
১৯৪৭ সালেতো ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র হলো। তাহলে সে অনুযায়ী ভারত হিন্দুরাষ্ট্র ও পাকিস্তান মুসলিম রাষ্ট্র হওয়াইতো যুক্তিযুক্ত ছিল। কারণ আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যতই বলুন না কেন-“মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান। মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।”
– এটি কোনভাবেই সঠিক নয়। তাইতো এদেশের লোকজন দুষ্টামি করে বলে থাকেন, নজরুল তুমি করিয়াছো ভুল, দাঁড়ি না রাখিয়া রাখিয়াছো চুল। এটি কৌতুক করে বললেও পাক-ভারতের জন্য একেবারে সঠিক । পাক মানে পাকিস্তান। সেই পাকিস্তান অবশ্যই ওয়েষ্ট এ্যন্ড ইষ্ট এর জন্য প্রযোজ্য।
বাংলাদেশের সংবিধান ও রাষ্ট্রটিকে সাম্প্রদায়িক করে সেখানে সেক্যুলারিজম খোঁজা আর সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করার যত মধুর মধুর বুলি আওড়ানো হোক না কেন তা সত্যিই সেই ‘ সোনার পাথরবাটি’র মতই হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশে, তা আপনারা সেই ১৯৭১ বা গত ২০২৪ যাই মনে করুন না কেন কোন স্বাধীনতাই ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার, নিরাপত্তা কোন কিছুই নিশ্চিত হয়নি। কোন সরকারই তা করতে পারেনি নয়, করতে চায়নি বা চায়ও না। কারণ এরা না থাকলেই বরং তাদের জন্য সুবিধে।
তাদের ধন-সম্পত্তি সবকিছুই তাদের করায়ত্ব থাকবে। আপনারা হয়তো ভাবছেন এত সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা !! কিন্তু আসলে কি সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা নাকি এটাই চরম-কঠিন-অবিশ্বাস্য বাস্তবতা, একটু ভেবে দেখুন পাঠক। একাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় ও তিন পাহাড়ি জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতিসত্বার কি কোন অধিকার দেয়া হয়েছে ?
আর কথিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর ২০২৪ এর কথিত বিপ্লব/স্বাধীনতার পর এই বৈষম্য আরো বেড়েছে। পাহাড়ে আদিবাসী কমতে কমতে এমন অবস্থায় পৌছেছে যে, সেখানে এখন আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিবাসীদের খুঁজতে অনেক গহীন পাহাড়ে যেতে হয়। সেখানে মুসলিম সেটেলারদের এক সংখ্যাধিক্য যে কয়েকবছর পরে হয়তো এই আদিবাসীদেরকে যাদুঘরেই খুঁজতে হবে।
সরকারি-বেসরকারি অত্যাচারে তিন পাহাড়ি জেলার নিজস্ব সংস্কৃতি, জীববৈচিত্র হারিয়ে যাচ্ছে খুব দ্রুত। সেনাবাহিনীর শাষন ও শোষনে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো সেখানে জাঁকিয়ে বসেছে। নানা কায়দায় অনেক নব্য পয়সাওয়ালা লোকজন হাজার হাজার একর পাহাড়ি জমি দখল ও কিনে নিয়েছে প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায়।
এতে করে পাহাড়ি আদিবাসীরা তাদের ভূমি অধিকার হারিয়ে অনেকটা নি:স্ব হয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশের হিন্দুদের বেলাতেও। এ বিষয়গুলো নতুন করে বলার প্রয়োজন হয়না।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জন্য তো আরো বেশি ভয়াবহ হয়ে উঠছে এই উগ্র সাম্প্রদায়িক ইসলামী গোষ্ঠী। তারাতো অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই সেখানে তাদের জনসংখ্যা বাড়ানোর মিশনে নেমেছে অনেক আগে থেকেই। যা সেখানকার শাসকগোষ্টী কখনোই আমলে নেয়নি। তবে ইদানীং বোধ হয় বুঝতে পারেছে কিছু কিছু।
ভারতের মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্ল্যান হলো- যত বেশি বিয়ে করা যায় এবং বিয়ের মাধ্যমে যত বেশি সন্তান উৎপাদন করা যায়। কারণ এভাবেই তাদের সংখ্যা বাড়লে তারা জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে একটি সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করতে পারবে।
এজন্য আন্তর্জাতিক ইসলামী গোষ্ঠীও নানাভাবে অর্থিক সহায়তা করছে তাদেরকে। নানা বেসরকারি সাহায্য সংস্থা বা এনজিও’র মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা ঢুকছে ভারতে। কিন্তু ভারত সরকার সে ব্যাপারে তেমন কোন চিন্তাই করতে পারছেনা।
মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার আছে শুধু তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য। ক্ষমতার ভাগাভাগিতে এতটাই উন্মাদ হয়ে আছে ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলো যে তারা কোনভাবেই মুসলিম মৌলবাদী চক্রান্ত মাথায় আনছে না।
আবার কংগ্রেস ও সাম্যবাদী দলগুলো মানে কমিউনিষ্টরাতো আরেক কাঠি এগিয়ে আছে এসব মুসলিম তোষনের জন্য।
তারা সাম্য-মৈত্রী-অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে বলে ভারতে ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীর চাষাবাদ বাড়াচ্ছেন। কারণ মুসলিম জনসংখ্যা বাড়লে তার মধ্য দিয়ে এই ইসলামী জঙ্গীবাদের চাষাবাদ করতে বেশি সুবিধে।
কারণ সমজিদ, মাদ্রাসা, ধর্মীয় সাহায্য সংস্থা, এমনকি মাজারের মধ্য দিয়েও এই মুসলিম মৌলবাদ সেখানে গেঁড়ে বসছে বেশ শক্তভাবেই।
বাংলাদেশের তিনদিকেই ভারত বেষ্টিত। সেখানকার সীমানা বেশ বড়। একটু দেখে নেই সেই সীমানা। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত প্রায় ২,৫৮২ মাইল (৪,১৫৬.৬ কিলোমিটার) লম্বা। এটি বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ স্থল সীমান্ত, যা বিভিন্ন রাজ্য যেমন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং মিজোরামের মধ্য দিয়ে প্রসারিত।
ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গ এবং মিজোরাম রাজ্যের সাথে যুক্ত এই সীমান্ত। আর বাংলাদেশের দিকে যে সব বিভাগ হলো- ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগ এই সীমান্ত বরাবর অবস্থিত। এই সীমান্তটি বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম স্থল সীমান্ত হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী জেলা ও ভারতের কয়েকটি সীমান্তবর্তী জেলা ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে।
তখন আমি নিজে যা দেখেছি, জেনেছি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে তা সত্যিই ভয়াবহ একটি অবস্থা। এছাড়া বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকেও যেসব তথ্য পেয়েছি তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। যেসব সীমান্তবর্তী এলাকার কথা উল্লেখ করলাম সেসব এলাকার সীমান্তবর্তী উভয় দিকে অন্তত দুই থেকে তিন কিলোমিটারব্যাপী এলাকা মূলত মুসলিম অধ্যুষিত, মসজিদ-মাদ্রাসা অধ্যুষিত এলাকা।
এসব এলাকা দিয়ে আদম পাচার-চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়, ও ইসলামী জঙ্গীসহ সব অপরাধীদের অনেকটা অভয়ারণ্য বলা চলে।
মসজিদ মাদ্রাসাগুলো মূলত মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো থেকে নানাভাবে পাঠানো আর্থিক সহায়তায় গড়ে উঠেছে। বেশ টাকা-পয়সা খরচ করে নির্মান করা হয়েছে এসব। আবার এসব এলাকায় নানা অসামাজিক-চোরাকারবারি, সন্ত্রাসী কাজ, আদম ও মাদক পাচারসহ সব ধরনের অপকর্মের মূল চাবিকাঠি নাড়ছেন সীমান্ত এলাকার মুসলিম নেতারাই।
তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা এত বেশি যে কেউ টু শব্দটি করার সাহস পায়না। এসব ব্যাপারে পরে আরো বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে আছে সময়-সুযোগ হলে। আজ শুধু কিছু বিষয়ে বলতে গিয়ে এ প্রসঙ্গ চলে এসেছে।
এবার একটু ভারতের মুসলিম জনসংখ্যার দিকে নজর দেই। ১৯৪৭ এর দেশভাগের সময়তো ভারত হিন্দুরাষ্ট্র এবং পাকিস্তান মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছিল। উভয় ধর্মের নেতারা সেভাবেইতো সবকিছু মেনে নিয়েছিলেন।
সে অনুযায়ী অনেক হিন্দু-মুসলিম যার যার ইচ্ছে অনুযায়ী এই দুই দেশের সম্পত্তি অদল-বদল করে নতুন আবাস গড়ে তুলেছিলেন।
কিন্তু পাকিস্তানে বসবাসকারি বেশ কিছু হিন্দু নাগরিক দেশপ্রেমের টানে, নিজেদের মাতৃভূমি-চৌদ্দপুরুষের ভিটেমাটির টানে আর পাকিস্তান ছাড়েনি। এই কথিত দেশপ্রেমই আজকে হিন্দুদের মরণফাঁদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানে। তা সেই ওয়েষ্ট পাকিস্তান ও ইষ্ট পাকিস্তান উভয় পাকিস্তানেই।
’৪৭ এর পর যেসব হিন্দু পাকিস্তান ছেড়ে কথিত হিন্দুরাষ্ট্র ভারতে যাননি তারা পস্তাচ্ছেন এখন চরমভাবে। একসময়ে পকিস্তানী শাষক-শোষবক গোষ্ঠীর অত্যাচারে ইষ্ট পাকিস্তানের বাঙ্গালীরা ফুঁসে উঠলো, রাষ্ট্রভাষা বাংলাসহ নানা দাবিতে ওয়েষ্ট পাকিস্তানের শোষণের জবাব দিতে একপর্যায়ে নানা আন্দোলন সংগ্রামের পর একাত্তরের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হলো।
এই মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর-আলসামশ বাহিনী এই মুক্তিযুদ্ধকে হিন্দুদের চক্রান্ত ও ভারতীয় চক্রান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করে হিন্দু নির্যাতনই কেবশি চালিয়েছিল।
সংখ্যানুপাতে কিন্তু একাত্তরের শহীদ হয়েছিল হিন্দুরাই বেশি। আর ভারতে আশ্রয় নেয়া এক কোটি শরণার্থীর মধ্যে পঁচানব্বই ভাগইতো ছিল হিন্দু। তাহলে কাদের আত্মত্যাগ আর দেশপ্রেম বেশি সেটি একটু সুস্থ মাথায় চিন্তা করলেই বোঝা যাবে। হয়তো আমার মুসলিম বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীরা ক্ষেপে যাবেন এ মন্তব্যে।
যারা ক্ষেপবেন এ মন্তব্যে তাদের উদ্দেশ্যে বলি- হেন কোন মুসলিম নাগরিককে দেখেছেন যারা তাদের পিতৃপুরুষের ভিটামাটির খোঁজে কখনো ভারতে গিয়েছেন? মনোকষ্টে ভুগেছেন মুসলিম নাগরিকরা ?
কিন্তু পক্ষান্তরে দেখুন- ভারত থেকে হিন্দুরা এই বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশে যাওয়ার সুযোগ পেলেই একটু দেখে যেতে চান তাদের মাতৃ-পিতৃভূমি বা আগের পুরুষদের।
ভারতের অনেক রাজনীতিবিদ- সাংস্কৃতিক কর্মী, বিজ্ঞানী এই ইষ্ট পাকিস্তানের নাগরিক ছিলেন। রাগ করবেন না আবার ইষ্ট পাকিস্তান বলেছি বলে। কারণ গত ২০২৪ এর কথিত জুলাই অভ্যুত্থানের পর এই বাংলাদেশটি আবার সেই পাকিস্তানেই পরিণত হয়েছে, যা আর নতুন করে বলে দেয়ার অপেক্ষা করেনা।
** ভারতে মুসলিম জনসংখ্যার অবস্থান।
ভারতের জনসংখ্যার একটু পরিসংখ্যান নিলে আমরা যা দেখি তাহলো- ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ১৩৯ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৮০% হিন্দু এবং প্রায় ১৪.২% মুসলিম। অর্থাৎ, ভারতে প্রায় ১১১ কোটি হিন্দু এবং প্রায় ১৯ কোটি ৭০ লক্ষ থেকে ২০ কোটি মুসলিম।
মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ হিন্দু। ২০২৩ সালে, ভারতে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১১৫ কোটিরও বেশি। বিশ্বের মোট হিন্দু জনসংখ্যার ৯৪% এর বেশি ভারতে বাস করে। ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ১৪.২ শতাংশ। এই সময়ে ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা ১৯.৭৫ থেকে ২০ কোটি অনুমান করা হয়েছে।
এটি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায়। এই তথ্যগুলো সরকারি আদমশুমারি এবং সাম্প্রতিক অনুমানগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
কিন্তু বিভিন্ন সূত্র ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যার উচ্চহারের উল্লম্ফন বলছে ভারতে এই ২০২৫ সালে মুসলিম জনসংখ্যা কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ কোটির মতো। এটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বাড়ছে।
কিন্তু অধিকাংশ হিন্দু পরিবারের সন্তান গ্রহণের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে কমছে। তারা জনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে চায়না। কারণ হিন্দুদের মতে- জন্ম দিলে তাদেরকে ঠিকভাবে খাবার দেয়া, সঠিকভাবে শিক্ষা দিয়ে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা অত্যন্ত জরুরী।
কিন্তু এটি অপ্রিয় হলেও সত্য যে- আমাদের মুসলিম জনগোষ্ঠী মনে করি – সব আল্লাহর ইচ্ছায় চলবে। পেট দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি- এই নীতিতে বিশ্বাসী আমরা মুসলিমরা। পাশাপাশি মুসলিম জনগোষ্ঠী বাড়ানোর একটি সুপরিকল্পিত প্ল্যানতো রয়েছেই। ফলে হিন্দুরা কথিত হিন্দুরাষ্ট্র ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের ওপর ইসলামী জঙ্গীগোষ্ঠীর যে দাম্ভিক আক্রমণ-লুটপাট-নারী নির্যাতন-আগুন দিয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে তা নিশ্চয়ই ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয়না।
অবশ্যই আমরা উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্য চাই, সম্প্রীতি চাই। কিন্তু যে পরিস্থিতি দেখছি আমরা তাতে করে এই সম্প্রীতি শুধু মুখে থাকবে। কাজে থাকবেনা।
ভারত বাংলাদেশ-পাকিস্তানের অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। এমনতরো পরিস্থিতিতে আবারো বোধ হয় সেই ১৯৪৭ এর নীতিটিকেই অনুসরণ করে এসব দেশ থেকে হিন্দুদের ভারতে চলে যাওয়া এবং মুসলিমদের পাকিস্তান বা বাংলাদেশে চলে আসাই উত্তম।
সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের উদ্যোগে এই সম্পত্তিসহ অন্য সবকিছুর অদল-বদল হতে পারে নির্বিঘ্নে। কারণ এছাড়া আর কেববান সমাধান নেই এই তিন দেশের।
** বাংলাদেশের মুসলিম নেতাদের মনোভাব দেখুন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি ফয়জুল করীম বলেছেন, ‘১৯৪৭ সালে কেনো, কিসের ভিত্তিতে আন্দোলন হয়েছিল, কেন দেশ ভাগ হয়েছিল। ভাষার ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়নি, ভৌগোলিক কারণে ভাগ হয়নি। ভাগ হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে। এটা কেন আপনার বলতে লজ্জা হয়। ১৯৪৭ সালে মুসলমানরা মুসলমানদের জন্যে ভাগ করেছিল।
আজকে আলেমদের এই কথা বলতে লজ্জা হয়, মুসলমানদের এই কথা বলতে লজ্জা হয়। ১৯৪৭ সালে মুসলমানদের জন্য ধর্মের ভিত্তিতে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল। এদেশ মুসলমানদের দেশ।’
গত শনিবার (৪ অক্টোবর)দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ইসলামী যুব আন্দোলন আয়োজিত ‘স্বাধীনতার পথরেখা ৪৭, ৭১, ২৪: প্রেক্ষিত আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এই ইসলামী নেতার যে বক্তব্য ও মনোভাব তা কিন্তু এই বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলিম নাগরিকের। দ্বিমত পোষণ করবেন কোন কোন মুসলিম, কিন্তু অন্তরে লালন করবেন হিন্দু বিদ্বেষ- এমন হলেতো আর একসাথে থাকা চলেনা। বিষয়টি সাম্প্রদায়িক শোনায় বটে, কিন্তু এটিই রূঢ় বাস্তবতা।
#রাকীব হুসেইন, লেখক, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।