বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে নানা টালমাটাল চলছে। তা যেমন দেশে তেমনি বিদেশের মাটিতেও। সেই সুদূর মার্কিন মুল্লুকেও যে কি চলছে তা আমরা একটু সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর দিকে তাকালেই বুঝতে পারবো বা পেরেছি নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে।

ইন্টেরিম সরকার প্রধান ড. মুহম্মদ ইউনুস থেকে শুরু করে তাঁর ‘ কিংস পার্টি’ এনসিপি, আওয়ামীলীগ পরবর্তী বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারি জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কথাবার্তা-আচার আচরণ কোনভাবেই স্বাভাবিক মনে হচ্ছেনা।

এরই মধ্যে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই অফিসারদের অস্বাভাবিক আনাগোনা, দেশের বিভিন্ন সেনসিটিভ জায়গাগুলো ভ্রমণ ও মিটিং করা, চীন থেকে বিপুল অংকের টাকা ব্যয় করে যুদ্ধবিমান কেনা এসব মোটেই স্বাভাবিকতার লক্ষণ নয়।

এরই মধ্যে দুই এনসিপি নেতা টিভি লাইসেন্স পেয়ে গেছেন, যা মূলত জামায়াতিদের টিভি।

এসব কিছুকে ছাপিয়ে যে বিষয়টি বেশি আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে তা হলো—সরকারের কোন কোন উপদেষ্টা, এনসিপি নেতাদের “সেইফ এক্সিট” । আবার সেই কথা ও অভিযোগ শোনা যাচ্ছে ইন্টেরিমের কোন কোন তরুণ-বয়ষ্ক উপদেষ্টার বিরুদ্ধে।

জার বিষয় হলো অভিযোগ তুলছে কিন্তু কিংস পার্টির টোকাই নেতারাই। কিংস পার্টিই এখন কিং এবং কিং পারিষদদের বিরোধিতা করছে। অপরদিকে এতদিন বিলেতে পলাতক যে যুবরাজ ইন্টেরিমের সমালোচনায় মুখর ছিলেন তিনি বিবিসি’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে উল্টো এখন ইন্টেরিমের পক্ষে সাফাই গাইছে।

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী দল একাত্তরে গনহত্যার পার্টি জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবার হঠাৎ করে ৫০ লাখ যুবককে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামানোর হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে অবৈধ ইউনুস ইন্টেরিম ঘোষিত নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তার বাসায় গিয়ে রূপান্তরিত আওয়ামীলীগ করার জন্য ইউরোপীয় কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতরা গিয়ে বৈঠক করে প্রস্তাবও দিয়েছেন।

কিন্তু তাতে সাবের হোসেন চৌধুরী রাজী হননি এবং উল্টো বলেছেন- আওয়ামীলীগে শেখ হাসিনাই সভানেত্রী ও দলে আরো অনেক বিজ্ঞ সিনিয়র নেতা রয়েছেন। ষড়যন্ত্রের ওস্তাদ ড. ইউনুস ভেবেছিলেন, কোন না কোনভাবে সাবের হোসেন চৌধুরীকে এই ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে রুপান্তরিত আওয়ামীলীগ তৈরী করে শেখ হাসিনা বিরোধী একটি বিকল্প স্রোত মানে বিকল্প আওয়ামীরীগ দাঁড় করাতে।

কিন্তু তা আপাতত সফল হয়নি। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের অনেক সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে নানা সমালোচনা সত্ত্বেও এখন অবধি এদেশের সাধারণ আওয়ামী অনুসারিরা শেখ হাসিনার জীবদ্দশায় তাঁর বাইরে কোন নেতা চিন্তা করেননা।

*হায়রে সাধের সেইফ এক্সিট !

বিডিনিউজটুয়েন্টিফোর ডটকম এর নওগাঁ প্রতিনিধি’র বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থাটি বলেছে যে, এনসিপি’র টোকাই নেতা সারজিস আলম অজ্ঞাত কারণে ইউনুস সরকারের উপদেষ্টাদের প্রচন্ড সমালোচনামুখর ছিলেন।

সারজিস আলম নাকি উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন-মৃত্যু ছাড়া মানুষের ‘সেইফ এক্সিট’ নেই। “তারা এত শহীদের রক্তের উপরে দাঁড়িয়ে ওখানে আছেন। এখন তারা যদি জীবনের একটু হুমকির ভয় করেন, তাহলে তাদের তো দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল না,” বলেন তিনি।

মৃত্যু ছাড়া মানুষের ‘সেইফ এক্সিট’ হয় না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। গত ৭ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ হলরুমে এনসিপির জেলা ও উপজেলা সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

এক সময়কার ছাত্রলীগ নেতা সারিজিস আলম বলেন, “কিছু উপদেষ্টার আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তারা কোনোভাবে দায়সারা দায়িত্ব পালন করে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এক্সিট নিতে পারলেই হলো। এই দায়সারা দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অভ্যুত্থান পরবর্তী একটি সরকার কাজ করতে পারে না। “তারা এত শহীদের রক্তের উপরে দাঁড়িয়ে ওখানে আছেন। এখন তারা যদি জীবনের একটু হুমকির ভয় করেন, তাহলে তাদের তো দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল না। তারা যদি এমনটা করে থাকেন, তাহলে দেশের মানুষের সামনে মুখ দেখাতে পারবে না। কোথায় ‘সেইফ এক্সিট’?

‘সেইফ এক্সিট’ তো একমাত্র মৃত্যু, মৃত্যু ছাড়া তো মানুষের ‘সেইফ এক্সিট’ নেই।”

এনসিপি নেতা সারজিসই যে উপদেষ্টাদের সেইফ এক্সিট নিয়ে সমালোচনা করছেন তা কিন্তু নয়, এই সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও এনসিপি’র বিতর্কিত নেতা নাহিদ ইসলামও সমালোচনা শুরু করেছেন সরকারের।

এমন সব সমালোচনা কিন্তু বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছে দেশের রাজনীতি ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে। সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন- ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে, তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের (নিরাপদ প্রস্থান) কথা ভাবতেছে’।

তাঁর এ বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছে। বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্ট থেকে নাহিদ ইসলামের এ বক্তব্যের ভিডিও ও ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়েছে। এসব পোস্টে পক্ষে–বিপক্ষে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

কথিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক দফা ঘোষণা করেছিলেন সে সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি উপদেষ্টা হয়েছিলেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হয়েছিলেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে সরকার থেকে পদত্যাগ করে এনসিপির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন নাহিদ। অবশ্য ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে যোগ দেওয়া মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এখনো উপদেষ্টা রয়েছেন।

টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের নেতাদের এবং যারা উপদেষ্টা হয়েছেন, তাদের অনেককে বিশ্বাস করাটা আমাদের অবশ্যই ভুল হয়েছিল। আমাদের উচিত ছিল ছাত্র নেতৃত্বকেই শক্তিশালী করা, সরকারে গেলে সম্মিলিতভাবে যাওয়া।

নাগরিক সমাজ বা রাজনৈতিক দলকে আমরা যে বিশ্বাসটা করেছিলাম, যে আস্থা রেখেছিলাম, সেই জায়গায় আসলে আমরা প্রতারিত হয়েছি। অনেক উপদেষ্টা নিজেদের আখের গুছিয়েছে অথবা গণ–অভ্যুত্থানের সঙ্গে বিট্রে (প্রতারণা) করেছে। যখন সময় আসবে, তখন আমরা এদের নামও উন্মুক্ত করব।’

সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম আরও বলেছেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে। তারা নিজেদের সিইফ এক্সিটের কথা ভাবতেছে। এটা আমাদের অনেক পোহাতে হচ্ছে এবং পোহাতে হবে। কিন্তু তারা যদি এটা বিশ্বাস করত যে তাদের নিয়োগকর্তা ছিল গণ–অভ্যুত্থানের শক্তি, রাজপথে নেমে জীবন দেওয়া ও আহত সাধারণ মানুষজন এবং তারা যদি তাদের ওপর ভরসা করত, তাহলে উপদেষ্টাদের এই বিচ্যুতি হতো না।’

এই যে কিংস পার্টির দুই প্রভাবশালী টোকাই নেতা অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের যে সমালোচনা শুরু করেছেন তাতে করে বোঝাই যায় যে সরকার প্রচন্ড রকমের নড়বড়ে হয়ে গেছে।

**এক এগারোর মতো আওয়ামীলীগ নেতাদের টোপ দেয়া হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। রিফর্মড আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে বাইরে রেখে আওয়ামী লীগের একটা অংশকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রস্তাব নিয়ে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় ইউরোপীয় কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতরা বৈঠক করেন। এ নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা রয়েছে।

তবে বিশ্বস্ত সূত্র বলেছে, সাবের হোসেন চৌধুরী তাদের এই প্রস্তাবে রাজি হননি। এবং সাবের হোসেন চৌধুরী নাকি তাদের জানিয়েছেন: “Sorry, as long as Sheikh Hasina is alive, all top-level party decisions and policymaking in the Awami League will be made by her. I cannot assist in this matter, nor am I willing to.”

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে- সাবের হোসেন চৌধুরী রাজি না হওয়ায় তারা স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করছে এবং আওয়ামী লীগের একটি রিফর্মড অংশে তাকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

যদি কোনো ভাবে শিরিন শারমিন চৌধুরীকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে তারা বর্তমানে জেলে থাকা কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করেছেন — জেলমুক্তি ও নানা প্রলুব্ধন দেখানো হচ্ছে তাদেরকে।

এখানে প্রশ্ন হচ্ছে: হুট করে ইউনুস সরকারকে আওয়ামী লীগের রিফর্মড করানোর জন্য এত তৎপর হয়ে উঠলো? এর উত্তর হচ্ছে — সম্প্রতি ইউনুস সাহেব জাতিসংঘ সাধারণ সমাবেশ উপলক্ষে আমেরিকা সফরে যান, এবং সেখানে ইউনুস সরকারের তরফ থেকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচন ও কার্যক্রম সম্পর্কে তারা U.S. Administration বা Trump Administration-কে অবহিত করেন। এরপর U.S. Administration বা Trump Administration সরাসরি ইউনুস সরকারকে জানায়, তারা বাংলাদেশে সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়; এবং কোনও দলের কার্যক্রম বন্ধ করা হলে, Trump Administration তাদের সাথে সহযোগীমূলক সম্পর্ক স্থাপন করবে না।

এর উত্তরে ইউনুস সরকার জানায় তারা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আওয়ামী লীগের উপর আরোপিত ব্যান তুলে দেবে, এবং সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বদ্ধপরিকর থাকবে।

VOA-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউনুস সাহেব নিজেই আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে যারা ‘রিফর্মড আওয়ামী লীগ’ বুঝেননি, তাদের সহজে বুঝিয়ে বলি: মোটামুটি ‘গৃহপালিত আওয়ামী লীগ’ নামে একটা দল বানাতে চায়; যারা আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করবে, কিন্তু কাজ করবে সরকারি দলের প্রেসক্রিপশনের অনুযায়ী। তবে এ পরিকল্পনা আপাতত: সফল হচ্ছেনা।

** ইউনুস সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কেন তারেক রহমান?

কিছুদিন আগেও যে তারেক রহমান বা তারেক জিয়া সুদূর লন্ডন থেকে এই ইন্টেরিম সরকারের চরম বিরোধীতা করেছেন তিনিই হঠাৎ করে প্রশংসা শুরু করেছেন। যা স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক-আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনেকেই বলছেন, ইউনুস যখন লন্ডন গিয়েছিলেন তখন তারেক রহমানকে বেশ মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন ইউনুস সরকার। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তারেক বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত দৃঢ় থাকবে, উনাদের কাজে যত বেশি দৃঢ় থাকবেন, ততই সন্দেহ আস্তে আস্তে চলে যাবে বলে।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়।
সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে প্রশ্ন করা হয়– আপনি কয়েক মাস আগে একটি মন্তব্য করেছিলেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আপনার মনে সেই সন্দেহ এখনো আছে? জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘দেখুন আমি যখন এই কথাটি বলেছিলাম, এই মুহূর্তে আমার যতটুকু মনে পড়ে সেই সময় পর্যন্ত ওনারা কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারে সঠিক কোনো টাইম ফ্রেম বা কোনো কিছু বলেননি। তখন প্রায় সকলের মনের মধ্যেই সন্দেহ ছিল।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সকল কিছু বিবেচনা করলে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, হয়তো উনারা চেষ্টা করেছেন অনেক বিষয়ে। সব ক্ষেত্রে সবাই তো আর সফল হতে পারে না, স্বাভাবিকভাবে ওনাদের লিমিটেশনস কিছু আছে। সেই লিমিটেশনসের মধ্যে উনারা হয়তো চেষ্টা করেছেন, যতটুকু পেরেছেন হয়তো চেষ্টা করছেন।’

** একদম সাদামাটা চোখে সজাগ থেকে যারা গত চব্বিশের ঘটনাবলীকে বিশ্লেষণ করেছেন তারা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন যে, কথিত আন্দোলনের নামে চব্বিশের জুলাই আগস্টে পুরো জাতিকে প্রতারণা করা হয়েছে।

তথাকথিত “বিপ্লবের নায়ক” নাহিদ ইসলাম, সারজিসরাও সেটা বলতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক সংগঠন ও প্রস্তুতি ব্যাতীত, রাজনৈতিক অভিলক্ষ্য ছাড়া ক্ষমতা কাঠামোর কোনো পরিবর্তন বা রুপান্তর ঘটানো সম্ভব নয়। ক্ষমতা কাঠামোর নিয়ন্ত্রণ পেতে তাই সামরিক -বেসামরিক মাফিয়া গোষ্ঠী থাকে মরিয়া।

তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রতারিত করে মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে লুটেরারা সরাসরি রাষ্ট্র দখল করেছে।

এটি স্পষ্ট যে, এনপিসি নামক যে দলটি নাহিদ গং গঠন করেছে, তাদের কোনো রাজনৈতিক স্পষ্টতা নেই। তদুপরি রাষ্ট্র দখলের পর নাহিদ গং যেভাবে নিয়োগ বদলী ও তদ্বির বাণিজ্যে হাত পাকিয়েছে, ব্যবসায়ীদেরকে দঙ্গলের ভয় দেখিয়ে চাঁদা তুলেছে তা গত ৫৪ বছরের লুটপাটের সকল ধারণাকে ছাপিয়ে গেছে। অবিশ্বাস্য অংকের লেনদেনে এরা নিয়োগ বদলী ও তদ্বির করেছে।

নোবেল লরিয়েট ড. ইউনুস বুক ফুলিয়ে বলেছিলেন, ছাত্ররা তার নিয়োগকর্তা। এখন সেই তথাকথিত ছাত্র নেতারাই বলছে তারা প্রতারিত হয়েছেন। ছাত্র-তরুণ জনগোষ্ঠী জুলাই আগস্ট রেজিমচেঞ্জের পরপরই আন্দোলনের নেতাদের দ্বারা প্রতারিত হয়েছে বুঝে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছিলো।

“নিয়োগ কর্তা ” রাই যদি বলেন তারা প্রতারিত হয়েছেন, তাহলে ইউনুসের অসাংবিধানিক অবৈধ দখলদারি সরকারের আর কোনো ভিত্তিই থাকে না। সামরিক ক্যু প্রকৃতপক্ষে রেজিমচেন্জ করেছে। সামরিক জেনারেলদের সমর্থনের জোরে মি:ইউনুস রাষ্ট্র দখল করে রেখেছে। মার্কিন ও পাক দূতাবাসের দ্বারা সরকার ও জেনারেলরা পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রমেই বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র বাজারের ঘাঁটি হয়ে উঠেছে।

তবে পরিস্থিতি যে কোন সময়ে উল্টো ঘুরে যেতে পারে। তখন কিন্তু কোন সেইফ এক্সিট পাবেনা।

কারণ জনগণের সহ্যেরও একটি সীমা আছে। তা অতিক্রম করে গেলে তখন শত বাধা-বিপত্তি-রক্তচক্ষু কোন কিছুই আর মানবেনা। উত্তাল জনস্রোতে তা ভেসে যাবে।

# ইশরাত জাহান, লেখিকা , প্রাবন্ধিক।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *