চট্টগ্রাম: চট্রগ্রাম সমুদ্র বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে হৃৎপিণ্ড। বর্তমানে প্রফেসর ইউনূস সরকার দাবি করছে চট্রগ্রাম সমুদ্র বন্দরে নাকি পণ্যবাহী কন্টেইনার উঠা নামায় রেকর্ড গড়েছে ২০২৪ সালে। তবে তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে আগের বছরের থেকেও ২৩৬ টি কন্টেইনার কম ভিড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। অর্থাৎ প্রফেসর ইউনূস কন্টেইনার উঠানামার যে রেকর্ডের তথ্য ছড়িয়েছে তা সম্পূর্ণ লোক দেখানো মিথ্যা এবং বানোয়াট।

এদিকে, মুহাম্মদ ইউনূস সরকার ঘোষণা করেছেন যে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশীদের হাতে দেওয়া হবে এবং তাতে চট্রগ্রাম বন্দর আরো গতিশীল হবে। এখন প্রশ্ন হলো চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার জন্য কি বাংলাদেশে কোন দক্ষ প্রতিষ্ঠান নেই ? ঘুরেফিরে এই প্রশ্ন আসছে বারবার। উল্লেখযোগ্য যে, চট্টগ্রাম বন্দরের পাশেই রয়েছে চট্টগ্রামের একমাত্র বিমানবন্দর, একমাত্র তৈলশোধনাগার, নেভী এবং বিমান বাহিনীর ঘাঁটি।

আর চট্টগ্রাম বন্দর একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এটি বিদেশিদের হাতে গেলে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেবে।এছাড়াও, বিদেশি কর্তৃপক্ষ পরিচালনার দায়িত্ব নিলে বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ সীমিত হয়ে যাবে কারণ এখন দেশে কোন নির্বাচিত সুসংগঠিত সরকার নেই।

এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার সরকারি উদ্যোগের প্রতিবাদে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বন্দর শাখা।

রবিবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম বন্দর ভবনের মূল ফটকের সামনে এ কর্মসূচি শুরু হয়।

বিক্ষোভকারীদের হাতে হাতে ছিলো প্ল্যাকার্ড। ‘এনসিটি বেসরকারীকরণের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে’, ‘ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে বন্দর পরিচালনা চাই না’, ও ‘বিদেশি নয়, দেশীয় অপারেটরই যথেষ্ট’ ইত্যাদি স্লোগান ছিলো।

অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কী বললেন?

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় খুব ‘অভিযোগ’ না থাকার কথা তুলে ধরে অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে ’অর্থপাচারের’ কিছু ঘটনা থাকলেও এটির টার্মিনাল পরিচালনার কাজ বিদেশিদের কাছে ‘হস্তান্তর করাটা ঠিক না’। তিনি এটি সমর্থন করেননি।

তিনি বলেন, “আমাদের দুদক আছে, আমাদের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আছে। তাদেরকে যদি আমরা সক্রিয় করতে পারি এবং তাদেরকে যদি আইনানুগ সমর্থন দিতে পারি, তাহলে আমার মনে হয় যে বিদেশি কোম্পানির হাতে এটা হস্তান্তর করাটা সঠিক না।”

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের মধ্যে ‘মতপার্থক্য’ না থাকায় মানুষের মধ্যে ‘স্বস্তির পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল’। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন দল ভিন্ন ভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করছে, যা আবার ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ না’- যা বাজেটের কাজকে আরো কঠিন করে তুলেছে।

মির্জ্জা আজিজের মতে, “আমার কাছে তো যেটা মনে হয় যে বন্দর ব্যবস্থাপনায় একটা স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাকটিস আছে এবং আমাদের দেশের থেকে তো আমদানি-রপ্তানি দুটোই হচ্ছে এতদিন ধরে। বেশ অনেকদিন ধরে। এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে মোটামুটি অগ্রগতি হয়েছে।

“সেখানে তো পোর্ট হ্যান্ডলিংয়ে খুব একটা অভিযোগ আছে বলে মনে হয় না। হ্যাঁ, তবে কিছু কিছু হয় যেটা আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিং হয়; যেটা করে আবার ওই অর্থপাচার করা হয়।”এ সংকট কাটাতে কাস্টমস ও দুদক যাতে বন্দরে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

উল্লেখযোগ্য যে, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে গেলে সার্বভৌমত্ব শতভাগ হুমকির মুখে পড়বে। জাতীয় স্বার্থ, স্বচ্ছতা, এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার সক্ষমতা আছে কিনা তা নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর বিদেশীদের তত্ত্বাবধানে দেওয়া যেতে পারে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে একমাত্র একটি নির্বাচিত সরকার।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *