বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল স্লোগান দেয়- দেশ গড়েছেন শহীদ জিয়া, নেত্রী মোদের খালেদা জিয়া, খালেদা জিয়ার মনোবল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
আবার গত কয়েক বছর ধরে তারা তাদের স্লোগানে কিছুটা নতুনত্ব এনেছে। কারণ তারা দেখছে এখন আর ম্যাডাম খালেদা জিয়া নয় দল চলে লন্ডনে পলাতক জিয়াউর রহমানের একমাত্র জীবিত পুত্র তারেক জিয়া বা তারেক রহমানের নির্দেশে। তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিএনপি দলীয় কারোরই তার কথার বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। সুতরাং তাদের স্লোগানও অনেকটা বদলে গেছে। দেশ গড়েছেন শহীদ জিয়া নেতা মোদের তারেক জিয়া।
তারেক জিয়ার মনোবল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। .. আরে নেতা আছে! আছে.. কোন সে নেতা তারেক জিয়া !
কিন্তু একসময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুবরাজ হিসেবে পরিচিত তারেক জিয়া সেই যে এক এগারোর সময় তৎকালীন সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা ( আর রাজনীতি করবেন না ) দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে গেলেন এরপর আর বাংলাদেশেই আসলেন না।

গত ২০২৪ এর ৫ আগষ্ট ‘মার্কিন ডিপষ্টেট- ইসলামী জঙ্গী ও সেনাবাহিনীর ক্যু’ এর কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর লন্ডন থেকে এই তারেক জিয়া বা তারেক রহমান যে ভাষণ দিলেন দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তাতে মনে হয়েছিল তিনি ২/১ দিনের মধ্যেই দেশে চলে এসে ক্ষমতায় বসে যাচ্ছেন।
বিএনপি ও তার অংগসংগঠনসহ বিশেষ করে সারাদেশে এই ছাত্রদলের এমন হাবভাব ছিল যে – শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ নেই। আওয়ামীলীগ আর সুবিধে করতে পারবেনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনরোষে ক্ষমতাচ্যুত ও ভারত প্রবাসী। সুতরাং এখন বিএনপি ছাড়া আর কে ক্ষমতা নিচ্ছে ?
আর এই আগ্রাসী মনোভাবে সারাদেশেই ছাত্রদল, যুবদল, সেচ্ছাসেবক দল ও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা নেমে গেলেন দখলদারিত্বে। হ্যাঁ তারা দখল করলেন, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসষ্ট্যান্ড, টেম্পু স্ট্যান্ড, ট্রাকডিপো, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব।
রাতারাতি যেসব জায়গায় আওয়ামী সমর্থিত সংগঠন ছিল সেগুলো ভোল পাল্টে বিএনপি’র সমর্থক হয়ে গেল, অথবা বিএনপির নেতাকর্মীরাই সেগুলো দখল করে নিলো।
আর সারা দেশে চলতে লাগলো চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি। এর আগে আওয়ামী সমর্থিতরা যা যা করতেন তারই পুনরাবৃত্তি করতে লাগলো বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
কিন্তু সুচতুর জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি জামায়াতে ইসলামী এসব ছিঁচকে কাজে না গিয়ে বরং তাদের মূল দল, সহযোগী অঙ্গসংগঠন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংগঠিত করার কাজে নেমে পড়েছে।
অত্যন্ত সুচতুর ও পরিকল্পিতভাবে ২০২৪ এর জুলাই-আগষ্টের ‘জঙ্গী ক্যু’ এর পর থেকেই তারা গত দেড় বছরে সেই কাজটিই করে গেছে সযতনে। বিএনপি-ছাত্রদলের মত প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি তারা করেনি, কিন্তু ভেতরে ভেতরে নানা প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল অংকের টাকা তারা তুলে নিয়েছে।
তাদের আদর্শে ও নেতৃত্বে পরিচালিত যেসব আর্থিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেকটা বেহাত হয়ে গিয়েছিল আওয়ামীলীগ আমলে সেগুলোকে আবার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে এরই মধ্যে।
গত দেড় বছরেই তারা পুরোদমে ব্যবসা-বাণিজ্য করে প্রচুর টাকা সঞ্চয় করে নিয়েছে। পাকিস্তান-তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তারা অস্ত্রও সংগ্রহ করেছে।
শুধু সাংগঠনিকভাবেই সংহত হয়নি জামায়াতে ইসলামী, তারা ইতিধ্যেই দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ-বিজিবিসহ সিভিল প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তাদের লোকজনকে নানাভাবেই প্রতিস্থাপন করে নিয়েছে।

আর বিএনপি কয়েকটি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, পৌরসভার প্রশাসক, কয়েকটি সরকারি-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কিছু টুকিটাকি পদ পেয়েই মহানন্দে রয়েছে ।
ভাবছে আমরাতো এসব ক্ষমতার ব্যবহার করে কিছু টুপাইস ইনকাম করতে পারবো। আর কি চাই ! আর নির্বাচন এলেতো আমরাই ক্ষমতায় বসবো। আমাদের কথামতোই চলবে সেনাবাহিনী থেকে সিভিল প্রশাসন সবই।
দরকার হলে তারা ১৯৯১, ২০০১ এর নির্বাচনের মতো নির্বাচনের স্বপ্ন দেখেছিল। এমনকি দলটির কেউ কেউতো ১৯৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারির মত নির্বাচনের দিবাস্বপ্নও দেখছিলেন।
কিন্তু যেসব সনের কথা বলছি সে সময়কার পরিস্থিতি আর ২০২৪ বা ২০২৫ এর পরিস্থিতি যে একরকম নয় তা আর “ মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক” জিয়ার দল বুঝতে পারেনি।
বুঝতে পারেনি যে তাদের একসময়কার চরম রাজনৈতিক মিত্র একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী, কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনৈতিক দল হেফাজতে ইসলামী ও সদ্যগঠিত “কিংস পার্টি” বা জঙ্গী টোকাইদের দল এনসিপি তাদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়াবে।
শুধু তাই নয়, জামায়াত যে ভেতরে ভেতরে সামরিক-বেসামরিক সিভিল প্রশাসন থেকে শুরু করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের লোক বসিয়ে দিয়ে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করছে প্রশাসন ও রাজনীতি তা কিন্তু বিএনপির অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতারা বুঝতে অক্ষম ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামী চিন্তা করছে নির্বাচন ছাড়াই যেহেতু আমরা ক্ষমতার সবকিছু ভোগ কতে পারছি, দেশ চালাতে পারছি প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে থেকে সেটাইতো আমাদের জন্য উত্তম।
আর যতদিন এভাবে থাকা যায় ততই দলকে গুছিয়ে নেয়া যাবে। পাশাপাশি অর্থিক ও সামরিক দিক থেকেও শক্তিশালী হওয়া যাবে। এরপরে যদি কোন কারণে নির্বাচনে যেতেই হয় তখনতো সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনযন্ত্র ব্যবহার করে তাদের পক্ষে ভোটের ফলাফল আনা কঠিন হবেনা।
কারণ ততদিনে এসব জায়গায় জামায়াত তাদের লোকজনকে আরো বেশি সংখ্যায় ও বেশ পোক্ত করে বসাতে পারবেন।
বিএনপির কিছু কিছু নেতা বুঝেছিলেন জামায়াতের এই পলিসি। তাই তারা জামায়াত , মুক্তিযুদ্ধ ও এনসিপি’র বিরুদ্ধে কথাবার্তা শুরু করেছিলেন। কিন্তু ‘ মেটিকুলাস ডিজাইনার’ শান্তির নোবেল লরিয়েট ড. ইউনুস লন্ডনে উড়ে গিয়ে তারেক রহমানকে যে অত্যন্ত সুচতুরভাবে ম্যানেজ করে ফেলবেন তা আর এসব নেতাকর্মীদের মাথায় ঢোকেনি।
কত’শ কোটি টাকায় তারেক রহমান ম্যানেজ হয়েছেন তা নিয়ে অবশ্য নানা কথা প্রচারিত আছে। কেউ বলছেন শত আবার কেউ বলছেন হাজার।
ইউনুস-তারেক সেই “লন্ডন ষড়যন্ত্র” করার পর থেকে কিন্তু তারেক রহমানের হম্বি-তম্বি থেমে গেছে। দেশের মধ্যেও যেসব বিএনপি নেতারা জামায়াত-এনসিপি ও ইউনুস সরকারের বিরোধীতা করে কথাবার্তা বলতেন তাও অদৃশ্য যাদুমন্ত্রে হিমাগারে চলে গেছে।
**শিবিরকে দিয়ে সক্ষমতা যাচাই করে নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ইসলামী ছাত্র শিবির দখল করে নিলো। এবং তা নির্বাচনী কৌশলেই।
প্রায় ৪৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে বলা চলে একচ্ছত্র বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের অনুপস্থিতিতে ছাত্রদল দেশের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন হিসেবে দাবি করলেও ডাকসু, জাকসু ও চাকসুতে তার কোন প্রমাণ তারা রাখতে পারেনি।
সাংগঠনিক-জনপ্রিয়তা ও কৌশলগত যোগ্যতা প্রমাণে তারা চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কথিত বাম প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নিশানাই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার(১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ( রাকসু) নির্বাচন। এই ফলাফলও জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনাই সর্বোচ্চ। তারমানে এভাবে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়, পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে কলেজগুলোর ছাত্রসংসদও তারা অত্যন্ত কৌশলে দখল করে নেবে।
এভাবে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে চাইছে জামায়াতে ইসলামী। এর ফলে সারা দেশের মানুষের মধ্যে বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের মধ্যে একটি বড় ধরনের প্রভাব রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন তারা।
শুধু জামায়াত নয়, রাজনীতি সচেতন নাগরিকরাও অনেকটা সহমত পোষণ করছেন জামায়াতের এই ধারণার সাথে। কারণ বিএনপি ও তার অংগসংগঠনসমূহের নানা অপেশাদারিত্ব-অরাজনৈতিকসুলভ আচরণের কারণে সাধারণ নাগরিকরা কিছুটা বিরক্ত ও হতাশও বটে।
যেহেতু আওয়ামীলীগ প্রকাশ্য মাঠে অনুপস্থিত ও চরমভাবে কোণঠাসা তাই বিএনপি’র ওপরই দেশের অধিকাংশ জনগণ আশা করেছিল- কিছুটা গণতান্ত্রিক দল হিসেবে। কিন্তু সেই পারফরমেন্স দেখাতে পারেনি এখনো বিএনপি।
যেসব রাজনৈতিক দল আপাতত: নির্বাচন চায়না তারমধ্যে “ কিংস পার্টি” এনসিপি, একাত্তরের নরঘাতকের দল মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী অন্যতম।

জামায়াত একটি সুদূর প্রসারি কৌশল বা ষড়যন্ত্র নিয়েই রাজনীতি করে এসেছে তাদের জন্মলগ্ন থেকে। নানাভাবেই মানুষকে ধোঁকা দিতে ওস্তাদ তারা। ইসলামের নামে, ধর্মের নামে রাজণীতি করেই তারা এতদূর এসেছে।
যদিও তাদের “মওদুদীবাদী ইসলাম” সারা বিশ্বেই অচল। কিন্তু বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী নানা মোড়কে , নানা কায়দায় তাদের রাজনীতিকে শুধু টিকিয়ে রাখেনি, বরং তা চারাগাছ থেকে বৃক্ষে পরিণত হয়েছে।
গত ২০২৪ এর জুলাই-আগষ্টের কথিত আন্দোলনের সময় এবং তারপরে দেশবাসী দেখতে পেয়েছে জামায়াত-শিবির কোথায়-কিভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের মধ্যে রংবদল করে লুকিয়ে ছিল।
সুযোগ বুঝে তারা স্বরূপে প্রকাশিত হচ্ছে। তবে এখনো যে তারা পুরোপুরি ছদ্মবেশ থেকে বের হয়ে এসেছে তা কিন্তু বলা যাবেনা। কারণ তাদের কৌশলটাই এমন। অনেকটা গেরিলা যুদ্ধের মত কৌশল ও ক্ষিপ্রতার কৌশল নিয়েই জামায়াত তাদের রাজণীতি করে থাকে।
সেক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি এই দুটি বড় দল তাদের কৌশলের কাছে এখনো পিছিয়ে আছে।
** একসময়ের রাজপুত্র তারেক রহমান ১৭ বছর পলাতক কেন ?
বিএনপি-জামায়াত-এনসিপিসহ ইউনুস সরকারের উপদেষ্টারাও বার বার অভিযোগ করেন যে, শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু আমরা কি দেখলাম বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর কড়া প্রহরায় ও শেখ হাসিনা ও তার বোন রেহানাকে নিয়ে সশ্রস্ত্র বাহিনীর উড়োযান উড়ে গেল ভারতে। তাহলে তিনি পালালেন কিভাবে ? সশস্ত্র বাহিনীই তো তাঁকে সস্মানে নিরাপত্তা দিয়ে পাঠিয়েছে ভারতে। তাহলে সেটি কি পালানো হলো ?
কিন্তু বিএনপি’র হর্তা-কর্তা-বিধাতা তারেক রহমান বা তারেক জিয়া যে ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে পালিয়ে আছেন তা কিন্তু কেউ বলছেন না। অথচ তিনি তখন গিয়েছিলেন চিকিৎসার নাম করে।
কিন্তু চিকিৎসার নাম করে লন্ডনে গিয়ে সেখান থেকে এখনো ফিরছেন না কেন ? সৎ সাহস থাকলেতো তিনি আগেই ফিরে এসে দেশে আইন-আদালতের মাধ্যমে নিজের অবস্থানটি পরিষ্কার করতে পারতেন। আচ্ছা আওয়ামীলীগ আমলে তিনি ন্যায় বিচার পাবেন না এমন কল্পনা প্রসূত ধারণা থেকে তিনি দেশে আসেননি- এটাও না হয় ধরে নিলাম ।
কিন্তু ২০২৪ এর ৫ আগষ্ট থেকে তো আর বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় দূরে থাক দলটিকেইতো পরবর্তীতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তাহলে এমন “সুন্দর-মানবিক পরিবেশ” থাকতে মহামান্য যুবরাজ কেন তার নিজের দেশে ফিরে আসছেন না ?
আর লন্ডনেই যদি থাকবেন তাহলে তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে কেন আছেন এমন প্রশ্নও আজ পর্যন্ত কোন সাংবাদিক তাকে করেনি।
সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারের পুরো অংশ আমার শোনার বা দেখার সৌভাগ্য হয়নি। যেখানে বিবিসির দুই অভিজ্ঞ সাংবাদিক তাকে কখনো জিজ্ঞেস করেছেন কিনা যে, তিনি কেন লন্ডনে পলাতক এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ে কেন আছেন ?
সম্ভবত: তারেক জিয়ার এই সাক্ষাৎকারও “ মেটিকুলাস ডিজাইন” এর অংশ হিসেবেই নেয়া হয়েছে।
তবে বিবিসি বাংলার সাথে তারেক রহমান/তারেক জিয়ার এই কথোপকথনের বিষয় ধরে এক রাজনৈতিক সমালোচক লিখেছেন- প্রথম দেখাতে তারেক জিয়ার মিষ্টি ভাষা শুনে যে কেউ তাকে পীর অথবা দরবেশ ভেবে নিলে আশ্চর্যের কিছুই থাকবে না।
কিন্তু ” দুষ্টু লোকের মিষ্টি ভাষা” এতটুকু যাদের জানা আছে , তাদের কারো পক্ষে কি তারেকের ‘হাওয়া ভবন ‘ ভুলে যাওয়া সম্ভব?
২০০২ সালে যখন বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ডিঙ্গিয়ে তারেক জিয়াকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ দেয়া হয় , তখন থেকেই বেপোরোয়া হয়ে উঠেন তারেক জিয়া।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামীর দুই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহমান মুজাহিদ দিয়ে গড়ে তুলেন বাংলাদেশের অঘোষিত পার্লামেন্ট হাওয়া ভবন।
ভারতের বলিউড থেকে শিল্পা শেঠি থেকে শুরু করে ঢাকাই চলচ্চিত্রের মুনমুন ও মুয়ুরীদের দিয়ে গড়ে তোলেন মোঘল আমলের জলসা ঘর। তারেক জিয়ার অত্যাচারে এক পর্যায়ে বিএনপির মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়া সহ প্রায় শতাধিক সাংসদ বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন।
এই হাওয়া ভবনে বসে জামায়াতে ইসলামকে দিয়ে জেএমবির মাধ্যমে বাংলা ভাই ও আব্দুর রহমান তৈরি করে দেশের পাঁচশো এর অধিক স্থানে বোমাবাজি করান।
মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের বন্ধু তারেক জিয়া হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানকে দিয়ে ২০০৪ এর ২১ শে আগষ্ট বঙ্গবন্ধু এভেনিউতে আওয়ামীলগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেন।

২৩ জন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী হত্যা ও ৫০০ আওয়ামীলীগ কর্মীকে পঙ্গু করে দেন তারেক জিয়া।এই তারেক জিয়া এই হাওয়া ভবন থেকে উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়ার সাথে মিলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর সহ বাংলাদেশে ” দশ ট্রাক অস্ত্র” আমদানি করেন।
আর দশ ট্রাক অস্ত্রের ব্যাপারে বাবরের ” উই আর লুকিং ফর শত্রুজ” সেই বিখ্যাত ডায়ালগ কি আপনাদের মনে আছে?
কথিত আছে তারেক জিয়া একজন আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যাবসায়ী ও প্রশিক্ষিত চাঁদাবাজ। তার বন্ধু ব্যাবসায়ী মামুনকে সাথে নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে ১০০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন। তারেকের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে যে স্যামসাং ফ্যাক্টরি বাংলাদেশে হওয়ার কথা তা বাংলাদেশ থেকে চলে যায়।
তারেকের মিঃ টেন পার্সেন্ট চাঁদাবাজির কাছে অসহায় হয়ে ভারতের টাটা গ্রুপ বাংলাদেশে সকল বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী অতিষ্ঠ হয়ে তারেককে কুকুর আর খালেদা জিয়াকে কুকুরের লেজের সাথে তুলনা করেছিলেন একটি টকশোতে এসে।
এই হচ্ছে বিএনপির খুনী জিয়া প্রতিষ্ঠিত বিএনপির খালেদা জিয়া ও তার পুত্র খাম্বা তারেকের ছোট একটি কাহিনী মাত্র।
একদিকে তারেক জিয়া সরাসরি সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন , যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। অপরদিকে এনসিপির নাহিদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন।
একদিকে নির্বাচন কমিশন বলছে , তাদের গেজেটে শাপলা প্রতীক নেই। অপরদিকে এনসিপি বলছে, শাপলা প্রতীক ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। “জোর যার মুল্লুক তার ” এমন দেশে দেশের ১৭ কোটি মানুষ মনে হয় এসব ভণ্ডদের গোলাম ছাড়া আর কিছুই নয়।
ইউনূস চাইলে খুনী জিয়ার মতো সেনাশাসন চালাতে পারেন, এরশাদের মতো জোর করে ক্ষমতা থাকতে পারেন। কিন্তু ইউনূস খাম্বা তারেক , এনসিপির শাপলা প্রতীকসহ যত নাটকই মঞ্চস্থ করেন না কেন সফল হতে পারবেন না।
# রাকীব হুসেইন, লেখক, প্রাবন্ধিক।
