একটি সাক্ষাৎকার। আর তাতেই তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। যিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বড় কোন পদ-পদবীতে নেই।
তবে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) উপদেষ্টা ছিলেন।
বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর জন্ম হয়েছিল বলে নাম রাখা হয়েছিল জয়।
গত ২৩ অক্টোবর এই জয়ের একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয় মার্কিন আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী বার্তা সংস্থা এসোসিয়েট প্রেস বা এপি বার্তা সংস্থায়।
আর এই সাক্ষাৎকারে জয় বাংলাদেশের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বেশ গোছালো, পরিপক্ক, পরিশীলিত ছিলেন। তাঁর মা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষমতাচ্যুত বলতে, ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে ষড়যন্ত্র করে।আর তাঁরই পুত্র কিনা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি পরিশীলিত হবেন এটাই স্বাভাবিক।
সামনের নির্বাচন, বর্তমানে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারি ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে একধরনের হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন তিনি।
জয়ের এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বার্তা সংস্থা এপি’র বাংলাদেশের ব্যুরো প্রধান জুলহাস আলম। এপিতে প্রচারিত হবার পর পরই তা মার্কিন প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোষ্টসহ বিশ্বের বিভিণ্ন সংবাদমাধ্যমে তা বেশ গুরুত্বের সাথেই প্রচারিত হয় এপি’র বরাত দিয়ে।
তবে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো বিশেষ করে সংবাদপত্রে তেমন একটা চোখে পড়েনি। দুই একটি টেলিভিশন যাও নিউজ করেছে তা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও নেগেটিভ চিন্তাভাবনা থেকেই। তা সেই স্বাধীনতা নিশ্চয়ই আছে সংবাদমাধ্যমগুলোর।

তবে এটি নিশ্চিত যে , আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলো অধিকাংশই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে জামায়াত-বিএনপি ও নোবেল পাওয়া ইউনুসের প্রেস সেক্রেটারি সফিকুল আলম ও তার সাগরেদদের হুকুমে।
তাই বলে নিউজটি যে প্রচার হয়নি তা কিন্তু নয়। শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাক্ষাৎকারটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর এ নিয়ে চলছে নানা রকমের বিশ্লেষণ।
নানা সূত্রের বরাতে যেসব বিষয়ে আলোচনাগুলো চলছে তা হলো, নিশ্চয়ই মার্কিন সাবেক সরকারের “ ডিপষ্টেট” ও সেই সরকারের পাপেট হিসেবে পরিচিত ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ‘ মেটিকুলাই ডিজাইন’ এর অন্যতম প্রধান কুশীলব ড. ইউনুসের ওপর এখনকার মার্কিন প্রশাসন যে কোন কারণেই নাখোশ হয়ে পড়েছে।
কারণ তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মার্কিন স্বার্থে যত দ্রুত কাজ করার কথা ছিল ইউনুসের তা তিনি করতে পারেননি। অর্থাৎ ইউনুস সরকার গত দেড় বছরে খুব একটা ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। এ কারণে নাখোশ হয়েছে মার্কিনীরা।
নাহলে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা সংবাদ সংস্থা এপি হঠাৎ করে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাক্ষাৎকার নিতে যাবে কেন ? আর সেটি প্রচারের পর পরই ওয়াশিংটন পোষ্টসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মিডিয়া এই সাক্ষাৎকারটি বেশ গুরুত্বের সাথে প্রচার করছে এপি’র বরাত দিয়ে।
ইতিপূর্বেও বিভিন্ন সময়ে জয় নানা সংবাদ মাধ্যমে ইন্টারভিউ দিয়েছেন, কিন্তু গত ২৩ অক্টোবর এপি’র প্রচারিত ইন্টারভিউটি ছিল এ যাবৎকালের সবচেয়ে গোছানো-মার্জিত কিন্তু পরিণত রাজনীতিবিদের বক্তব্য।
যদিও প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনার পুত্র জয়। ইতিপূর্বে অনেকেই জয়ের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে নানা সমালোচনা করেছেন। কারণ আমাদের দেশের অনেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জয়ের মা শেখ হাসিনা এমনকি জয়ের পিতা ওয়াজেদ মিয়ার প্রসঙ্গ টেনে সেই পারিবারিক রাজনৈতিক শিক্ষার বিষয়টিকে বড় করে দেখতে পছন্দ করেন।
জয় কি বলেছেন তা একটু দেখে নেই, যা নিয়ে এত তোলপাড় চলছে। এপি’র সংবাদ শিরোনাম যা ছিল তা বাংলায় করলে দাড়ায়- “ ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশ নেতার ছেলে বলেছেন, কেবল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনই দেশকে স্থিতিশীল করতে পারে।”
মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আওয়ামী লিগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন জয়। তিনি বলেছেন, এই দলকে বাদ দিয়ে কোনও নির্বাচন হলে তা ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছুই হবে না।
সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে ব্যর্থ হয়, তবে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীলই থাকবে।
তাঁর কথায়, নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বাধীন ও সুষ্ঠু করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন যা ঘটছে, তা আসলে আমার মা ও আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা। এটা হচ্ছে ন্যায়বিচারের ছদ্মবেশে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো।’

বাংলাদেশে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুতির পর সেটাই হবে প্রথম সংসদ নির্বাচন।
প্রসঙ্গত এ বছরের মে মাসে ইউনুস সরকার শেখ হাসিনার আওয়ামী লিগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং এর বহু শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করে। ইউনুস সরকার হাসিনার বোন রেহানা এবং জয় ও পুতুলদের বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে শুরু করে দুর্নীতির নানা অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসহ ছয়টি মানবাধিকার সংস্থা গত সপ্তাহে ইউনুসের সরকারকে চিঠি লিখে আওয়ামী লিগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানায়। তারা বলে, এই নিষেধাজ্ঞা সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গুরুতরভাবে সীমিত করছে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া আওয়ামী লিগ সদস্যদের গ্রেপ্তারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
যদি আওয়ামী লিগকে নির্বাচনের প্রস্তুতির যথেষ্ট সময় না দেওয়া হয়, তবে নির্বাচনকে দেশের জনগণ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা স্বীকৃতি দেবেন না। তিনি বলেন, আমাদের কোনও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই শেষ মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও নির্বাচনটি হবে প্রহসন।
জয় বাংলাদেশ উগ্র ইসলামপন্থীদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি আসন্ন নির্বাচনের প্রধান প্রতিপক্ষ। আর এক প্রধান দল জাতীয় পার্টি খোলাখুলি রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না। তাদের কার্যালয় আক্রমণ ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সভা-সমাবেশ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আরও বিভক্ত হয়েছে, কারণ দেশের বৃহত্তম ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামি প্রায় এক দশক পর রাজনীতিতে ফিরে এসেছে। হাসিনা সরকারের আমলে দলটি নিষিদ্ধ ছিল।
গত এক বছরে তারা দ্রুত প্রভাব বাড়িয়েছে এবং অন্যান্য কঠোর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা করছে। জয় বলেন, বাংলাদেশ অস্থিতিশীল থাকলে ইসলামপন্থীরাই লাভবান হবে। তিনি ইউনুসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, তিনি উগ্র ইসলামপন্থীদের সমর্থন করছেন এবং তাদের ক্ষমতায় আনার জন্য পূর্বনির্ধারিত নির্বাচনের পরিকল্পনা করছেন।
জয় স্বীকার করেন যে হাসিনার প্রাথমিক কিছু ভুল ছিল। তবে তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার হরণ বিষয়ক প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ করেন, যেখানে বলা হয়েছে যে অভ্যুত্থানে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছিল।
তিনি ইউনুস সরকারের এক স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বক্তব্যে উদাহরণ দিয়ে বলেন, প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ৮০০ জন।জয় বলেন, সব মৃত্যু ‘দুঃখজনক’ এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত। তবে তিনি প্রশ্ন তোলেন কেন ইউনুস সরকার গত বছরের সহিংসতায় জড়িত বিক্ষোভকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ইউনুস সরকার তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করেছে।
জয় আরও অভিযোগ করেন, ইউনুস সরকার মানবাধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। তার দাবি, আওয়ামী লিগের কয়েক লক্ষ সমর্থক এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে। জামিন পাচ্ছেন না এবং তাদের অনেককে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
তাঁর দাবি, অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রায় ৫০০ আওয়ামী লিগ কর্মী নিহত হয়েছেন, বেশিরভাগই জনতার হাতে এবং ৩১ জন হেফাজতে মারা গেছেন। জয় মন্তব্য করেন, ইউনুস সরকারের মানবাধিকার রেকর্ড ভয়াবহ।
বলেন, দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর হামলা বেড়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবশ্য প্রথম থেকেই থেকেই সংখ্যালঘুদের হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

এদিকে এসোসিয়েট প্রেসকে দেয়া সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে দেশে-বিদেশে চলছে নানা আলোচনা। এই সাক্ষাৎকারে তিনি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এনেছেন।
জয় তার সাক্ষাৎকারে, গত বছরের জুলাই-আগষ্টে সংঘটিত সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছেন।ফালকার টুকের দেয়া ১৪০০ নিহতের সংখ্যা সঠিক নয় বলে তিনি প্রমাণ দিয়েছেন।
সামরিক-জঙ্গী ক্যু এর মধ্য দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারি ড. ইউনুসের সরকার গতবছর আগস্টে পুলিশ হত্যাসহ সংগঠিত অপরাধের যে দায় মুক্তি দিয়েছে, তার কঠোর সমালোচনা করেছেন।
দেশের সর্ববৃহৎ দল আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশে যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না, এই সতর্কবার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন জয়।পাশাপাশি তিনি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে কেবল অংশ নিতে দিলেই হবে না, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণের সময় দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন।
তিনি খুব সরাসরি এবং অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে, ড. ইউনুস সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিশেষ করে গত চব্বিশের ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে সীমাহীন জুলুম চলছে তার চিত্র তুলে ধরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে সব মামলা মিথ্যা এবং বানোয়াট তা এই সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশে যে ৫ আগস্টের পর উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান হয়েছে তা জয়ের সাক্ষাৎকারে সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে। যা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। বাংলাদেশ যে এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য এক বধ্যভূমি তা জয়ের বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিসহ গতবছরের জুলাই -আগস্ট সংগঠিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন জয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারি দল আওয়ামীলীগের অবস্থানটিও তুলে ধরেছেন তিনি।
অবশ্য বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম এই সাক্ষাৎকারের মূল বিষয় উপেক্ষা করে ভুল স্বীকার প্রসংগ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছে অনেক বেশি । জয় কোন ভুলের কথা বলছেন?
স্পষ্ট করেই জয় আওয়ামীলীগের কৌশলগত ভুল নিয়েই কথা বলছেন। জুলাই আন্দোলনের সময় বিশ্বাসঘাতক ও অযোগ্য কিছু ব্যক্তির কথা এখন আর কোন গোপন বিষয় নয়।

সবচেয়ে বড় কথা, এটি আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকদের কাছে আওয়ামী লীগের অবস্থান তুলে ধরার জন্য দেয়া একটি সাক্ষাৎকার। এই সাক্ষাৎকারের উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য, সমৃদ্ধ ও সংযত বার্তা পৌঁছে দেয়া।যে কাজটি সজীব ওয়াজেদ জয় করেছেন অসাধারণ দক্ষতায়।
আওয়ামীলীগ যে একটি নির্বাচনমুখী দল ঐতিহ্যগতভাবে তা জয়ের কথাতেই ফুটে উঠেছে। তাছাড়া অতীত ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, গত ২০২৪ এর ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল অংশ নিয়েছে।
নির্বাচন বর্জন করছে বিএনপিসহ ১৬টি নিবন্ধিত দল। ২০২৪ এর আগে বাংলাদেশে ১১টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ পাঁচ বার, বিএনপি চার বার ও জাতীয় পার্টি দুই বার জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।
আওয়ামী লীগ প্রথম, সপ্তম, নবম, দশম ও চলতি একাদশ সংসদ নির্বাচনে; বিএনপি দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে। জাতীয় পার্টি তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়। সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ সংসদ মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি।
অপরদিকে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও চলতি একাদশ সংসদ তার মেয়াদকাল পূরণ করে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোর মধ্যে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়ে। সর্বোচ্চ ৮৭ শতাংশ ভোট পড়ে এ নির্বাচনে। অন্যদিকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পড়ে। এ নির্বাচনে ২৬.৫ শতাংশ ভোট পড়ে।
বাংলাদেশের এখনকার অবৈধ- অগণতান্ত্রিক-অসাংবিধানিক সরকারের কাছে এখন পর্যন্ত কোন সাংবাদিক আমেরিকা প্রবাসী সজীব ওয়াজেদ জয়ের এই বক্তব্য নিয়ে কোন প্রশ্ন করেনি বা জানতে চায়নি। বা সরকারও অদ্ভুতভাবে নীরব।
কারণ সরকার জানে এ ব্যাপারে কথা বলতে যাওয়াই হচ্ছে নানা সমালোচনার মুখে পড়া। অবশ্য সরকারের অবস্থা হচ্ছে-কানে দিয়েছি তুলো, পিঠে বেধেছি কুলো।”
# রাকীব হুসেইন, লেখক, প্রাবন্ধিক।
