ঢাকা: ঋত্বিক ঘটক এক স্পর্ধার নাম। যে মানুষটি ক্যামেরাকে বানিয়েছিলেন সমাজের আয়না, আর সিনেমাকে রূপ দিয়েছিলেন কান্না, প্রতিবাদ ও ভালোবাসার ভাষায়।

তাঁর মেধার অন্ত ছিলো না। ঋত্বিক ঘটক — যিনি প্রেমের ভাঙনেও সমাজের আর্তনাদ খুঁজে পান। আজ, ৪ নভেম্বর তাঁর জন্মদিন।

ঋত্বিক ঘটক বলেছিলেন, “Cinema is not just entertainment, it’s a scream of a wounded civilization.”

মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর জন্মশতবর্ষ পূর্ণ হলো বাংলা তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি পরিচালক ঋত্বিক কুমার ঘটকের।

তবে গুণীর কদর করা ভুলেছে বাংলা। মৌলবাদীর গ্রাসে সব চলে গেছে। শিল্পী, সাহিত্যিকদের কদর নেই। সংস্কৃতি মৃতপ্রায়। বাংলার পরিস্থিতি মোটেও সুস্থ নয়।

মহান স্রষ্টার রাজশাহীর পৈতৃক বাড়ি আজও ধ্বংসস্তূপ হয়ে আছে! গত বছর ভগ্নপ্রায় বাড়িটিতে ভাঙচুর চালায় একদল দুষ্কৃতী, জঙ্গী।

যাকে নিয়ে গর্বিত হওয়ার কথা বাঙালির, তাঁর শৈশব-যৌবনের আশ্রয়স্থল অবহেলার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছে।

ঋত্বিকের পৈতৃক বাড়িটি রয়েছে রাজশাহীর মিয়াপাড়ার ঘোড়ামারা এলাকায়। তবে তাকে আর বাড়ি বলা যায় না এখন। ভগ্নদেহ, ভগ্নপ্রাণ। এখন শুধু আছে কিছু ইটের স্তূপ আর অতীতের স্মৃতির ভগ্নাংশ।

১৯৪৭ সালে দেশভাগে সবচেয়ে বেশি ব্যথিত হয়েছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা ঋত্বিক কুমার ঘটক। তাঁর প্রতিটি সিনেমাতেই উঠে এসেছে দেশভাগের যন্ত্রণা।

‘মেঘে ঢাকা তারা’ থেকে শুরু করে ‘সুবর্ণরেখা’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবির মাধ্যমে বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের মনে অমর হয়ে আছেন ঋত্বিক।

১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা সুরেশচন্দ্র ঘটক ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কবি ও নাট্যকার এবং মা ইন্দুবালা দেবী।

ময়মনসিংহের মিশন স্কুল ও কলকাতার বালিগঞ্জ স্কুলে লেখাপড়া করেন তিনি। ঋত্বিক ঘটক রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন।

১৯৪৭ সালের দেশভাগের ফলে তাঁর পরিবারকে কলকাতা চলে যেতে হয়। জন্মভূমি হারানোর বেদনা তিনি আজীবন বহন করেছেন।

১৯৭০ সালে ভারত সরকার ঋত্বিক ঘটককে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে ভূষিত করে।

দীর্ঘ রোগভোগের পর ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬ সালে মাত্র ৫১ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হয়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *