ঢাকা: ডাক্তারি পড়াশোনা মানে বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন। যেখানে ধর্মীয় কুসংস্কার নেই। অথচ এই ডাক্তারির আড়ালে এরা ভয়াবহ জঙ্গীবাদে যুক্ত হচ্ছে কীভাবে? এবং প্রত্যেকে মীসলমান। যাদের ধর্ম ইসলাম।
ডাক্তারির আড়ালে জঙ্গীবাদ চালিয়ে আসছিলো এরা! অত্যন্ত ভয়াবহ।
দিল্লি বিস্ফোরণ-কাণ্ডের তদন্তে উঠে আসছে একের পর এক তথ্য ।
ঐতিহাসিক লালকেল্লায় সামনে বিস্ফোরণের আগেই ফরিদাবাদ থেকে বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক, অস্ত্র জোগাড় করা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় একাধিক চিকিৎসককে, যাদের শিকড় কাশ্মীরে।
গুজরাট থেকেও ভয়ানক ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে এটিএস গ্রেফতার করে এক চিকিৎসককে।
জানলে অবাক হবেন, জম্মু-কাশ্মীরের সোপিয়ান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ইরফান আহমেদ ওয়াগা নামে এক ইমামকে।
জেহাদি কর্মকাণ্ডে ওস্তাদ এরা। সোমবার ফরিদাবাদে বিস্ফোরক উদ্ধার এবং দিল্লির লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণের পর মঙ্গলবারই পুলিশের জালে ধরা পড়ে এই ইমাম।
কাউন্টার ইন্টালিজেন্স কাশ্মীর এবং শ্রীনগর পুলিশ গ্রেফতার করেছে তার স্ত্রীকেও।
প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে, ডাক্তারদের রিক্রুট করে মৌলবাদের পাঠ পড়াত এই ইমাম এবং তার স্ত্রী।
ফরিদাবাদ মডিউলের যে সমস্ত ডাক্তাররা এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে, জানা গিয়েছে, তাদের সবাইকে মৌলবাদের শিক্ষা দিয়েছে এই ইমাম।
কী অদ্ভুত! ভাবলেও শিউড়ে উঠতে হয়। কী শেখাচ্ছে, কী কর্মকাণ্ড করছে এরা!
লেখক তসলিমা নাসরিন যদিও ঘটনার কথা উল্লেখ করেননি, তবুও লিখেছেন বেশ কিছু কথা:
তিনি লিখেছেন, ‘বিজ্ঞান মুখস্থ করলেই হয় না; প্রয়োজন ক্রিটিক্যাল থিংকিংএর সংস্কৃতি। বলতে চাইছি বিজ্ঞানের বড় বড় বই মুখস্থ করলেই বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরি হয় না।
সে-কারণেই আমরা প্রায়ই দেখি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যেও ধর্মান্ধতা বিরাজমান। শুধু প্রযুক্তিগত জ্ঞান থেকে যুক্তিবাদ বা বিজ্ঞানমনস্কতা জন্ম নেয় না। যুক্তিবাদ বা বিজ্ঞানমনস্কতা জন্ম নেয় প্রশ্ন করার, পর্যবেক্ষণ করার, এবং ক্রিটিকাল থিংকিংএর চর্চা থেকে।
যুক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা, ধর্মীয় গোঁড়ামিকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস একজন মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলে।
যাঁরা দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, ইতিহাস, বিবর্তন তত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, সাহিত্য, শিল্প, নারীবাদ এবং মানবতন্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তাঁরাই সেক্যুলার হিউম্যানিজম, ক্রিটিকাল থিংকিং এবং বিজ্ঞানমনস্কতা সহজে গ্রহণ করতে পারেন। যুক্তি ও উদারতার এই সমন্বয়ই একটি সত্যিকারের সভ্য সমাজের ভিত্তি।
আর যারা নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখে কঠোর ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা মতাদর্শগত গোঁড়ামিতে, তারা সাধারণত উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া
বিশ্বাসগুলোকে প্রশ্ন করতে পারে না।
এর ফল আমরা সব সমাজেই দেখি—শিক্ষিত পেশাজীবী, যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু এখনো কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস বা ধর্মান্ধতায় আবদ্ধ।
যে জ্ঞান কৌতূহল জাগায় না, সে-জ্ঞান যান্ত্রিক; যে শিক্ষা চিন্তার স্বাধীনতায় বাধা দেয়, সে-শিক্ষা অর্থহীন।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে অগ্রগতি তাঁদের হাত ধরে এসেছে যাঁরা প্রশ্ন করতে সাহস করেছেন। ইউরোপের আলোকিত যুগের চিন্তাবিদেরা গির্জার কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং অন্ধবিশ্বাসের বদলে যুক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
দক্ষিণ এশিয়ায় কিছু মুক্তচিন্তক শতাব্দীপ্রাচীন ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে যুক্তিবাদী চেতনার প্রচার করেছিলেন। তাঁদের প্রেরণায় আমরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম যুক্তির লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।
আজ যখন পৃথিবী কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, আর অপবিজ্ঞানে আক্রান্ত, তখন বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার প্রয়োজন আগের চেয়ে অনেক বেশি। এই সময় যুক্তি এবং মুক্তির পক্ষে থাকা শুধু দায়িত্ব নয়, নৈতিক কর্তব্যও বটে’।
আরো লেখেন, ‘শিক্ষার কাজ কেবল পেশাজীবী তৈরি করা নয়। আমাদের দরকার এমন নাগরিক, যারা স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে জানে, ইমোশানের চেয়ে এভিডেন্সকে মূল্য দেয়, এবং সত্য ও মিথ্যের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে।
আমাদের দরকার এমন শিক্ষক যাঁরা কিউরিওসিটি জাগান, দরকার এমন শিল্পী যাঁরা প্রচলিত নিয়মকে প্রশ্ন করেন, এবং এমন লেখক যাঁরা আমাদের মানবতার কথা মনে করিয়ে দেন। যে সমাজ প্রশ্নকে স্তব্ধ করে দেয়, সে সমাজ অগ্রগতিকেও স্তব্ধ করে দেয়।
এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মান্ধ পৃথিবীতে প্রয়োজন আধুনিক, প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তক মানুষ। আলোকিত সভ্যতা গড়ার জন্য তাঁদের অবদান অপরিহার্য। জ্ঞান যখন উদারতার সঙ্গে মিলিত হয়, যুক্তি যখন সাহসের সঙ্গে হাত মেলায়—তখনই মানবতা মুক্তি পায়, অন্ধকার ও অজ্ঞানতার গহ্বর থেকে মুক্ত হয়ে বুদ্ধির মুক্তি ঘটায়’।
