ঢাকা: অগ্রহায়ণ মাস মানেই নতুন ধানের ঘ্রাণ, এর আনন্দ কী আর কোনো কিছুর সাথে ভাগ হয়? নতুন ধানের গন্ধে ম ম করে চারদিক।
আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে পাওয়া চালের প্রথম রান্না ও পিঠাপুলি। গ্রামীণ সংস্কৃতির সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব নবান্ন উৎসব।
দেশের প্রাচীনতম লোক উৎসবগুলোর একটি। অসাম্প্রদায়িক উৎসব হচ্ছে নবান্ন উৎসব।
এটি কোনো ধর্মীয় আচার, ব্রত কিংবা পূজা নয়; বরং রিচুয়াল বা লোকাচার বলা যেতে পারে। তা পালনের সঙ্গে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ অথবা তিথি-নক্ষত্রের যোগ নেই। তবে শস্যপ্রাপ্তির সংযোগ আছে।
তবে এই বাংলায় এখন কোনো লোকাচার চলে না। চলে জঙ্গীচার, বোমাচার। তাই এইবার অন্যান্য উৎসবের মতো বাহানা দিয়ে নবান্ন উৎসব বাদ দেয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে নাকি বাতিল করা হয়েছে ‘নবান্ন উৎসব’।
তা নবান্ন উৎসবে রাজনৈতিক অস্থিরতা আসলো কোথা থেকে? সরকার একটা উৎসব করানোর যোগ্যতা নেই?
রোববার সকালে ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে এ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল ‘জাতীয় নবান্ন উৎসব উদযাপন পর্ষদ’। তবে এরপরই জানানো হয়, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে শিল্পী, অভিভাবক ও শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় অনুষ্ঠানটি আর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক নাঈম হাসান সুজা জানান, বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচির দিন সড়কের পরিস্থিতি ছিল থমথমে।
বিভিন্ন মাধ্যমে আবার রোববার ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে শিল্পীরা শঙ্কায় আছেন। তিনি বলেন, ‘শিশু-অভিভাবকদের নিরাপত্তা বিবেচনা করেই আমরা নবান্ন উৎসব বাতিল করেছি।’
তাছাড়া উৎসব আয়োজনের নাকি কোনো জায়গা পাওয়া যায়নি! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বকুলতলায় অনুষ্ঠান করার অনুমতি মেলেনি।
বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, এমনকি কলাবাগান মাঠ—কোথাও অনুমতি পাওয়া যায়নি। পর্ষদ শেষ পর্যন্ত ছায়ানটে আয়োজনের প্রস্তুতি নিলেও সার্বিক পরিস্থিতির কারণে তাও বাতিল করতে হয়েছে বলে জানান সুজা।
তাহলে ভাবেন? একটা উৎসব করার জায়গা জুটছে না এই দেশে? অথচ এত বড় বড় রাজনৈতিক সভা হয়ে যাচ্ছে!?
তবে ‘ষড়ঋতু উদযাপন জাতীয় পর্ষদ’ রবিবার বিকেল ৪টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে ‘নবান্ন উৎসব ১৪৩২’ আয়োজন করবে বলে জানিয়েছেন পর্ষদের আহ্বায়ক কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ। জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত এই প্ল্যাটফর্ম সারা দেশে বাঙালির ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো উদযাপনের ঘোষণা দিয়ে আসছে।
