ঘোর অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে বাংলাদেশে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নারী ধর্ষণ-খুন করার দায়ে অভিযুক্ত-সাজাপ্রাপ্ত কুখ্যাত দল হিসেবে পরিচিত জামায়াতে ইসলামী তাদের সেই চিরাচরিত পন্থায় নারীদেরকে হিজাবের মধ্যেই রাখার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

শুধু হিজাবের মধ্যেই নয়। তারা নারীকে ঘরের মধ্যে বন্দী রাখার নানা কৌশল করছে। মিষ্টি মিষ্টি কথা শুরু করেছেন মুক্তিযুদ্ধে নারী-পুরুষ-মুক্তিযোদ্ধা- হিন্দু ধর্মাবলম্বী, বুদ্ধিজীবীসহ এদেশের মুক্তিকামী মানুষ খুন করার দল জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান।

শুধু জামায়াত-হেফাজত-ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, খতমে নবুয়ত বা চরম উগ্র ইসলামপন্থী দলগুলো নানাভাবেই নারীকে ঘরে আবদ্ধ রাখতে চায়। আর এসব উগ্র ইসলামী দলগুলোই গত চব্বিশের জুলাই-আগষ্টে আওয়ালীগ সরকার পতনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল।

শুধু উগ্র ইসলামপন্থী দলগুলো কেন এই যে পাশ্চাত্যের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত শান্তিতে নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনুস কি? এই ভন্ড-প্রতারক-উচ্চহারে সুদখোর ইউনুসতো গ্রামীণ নারীদেরকে ঠকিয়েই এত হাজার হাজার কোটি টাকার বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন।

এই ইউনুস মুখে যা বলেন অন্তরে তা বিশ্বাস করেন না। অন্তরে যা বিশ্বাস করেন মুখে তা বলেন না। চরম হিপোক্রেট এই নোবেল ইউনুস।

এ বছর ২৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নারীর ক্ষমতায়ন। ‘নারীর নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং সমান সুযোগ সুনিশ্চিত করার জন্য আমার সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি সেখানে তার ভাষনে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে আমাদের অঙ্গীকারকে আরও জোরদার করতে আমরা “বেইজিং+৩০ অ্যাকশন অ্যাজেন্ডা”-এর অধীনে আগামী পাঁচ বছরে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে চারটি জাতীয় প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছি।

এর মধ্যে রয়েছে— যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা, নারীর অবৈতনিক পরিচর্যা ও গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক ও জনপরিসরে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা এবং নারীর সমতা ও ক্ষমতায়নের প্রতি সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন পদ্ধতি শক্তিশালী করা।’

নারীর মর্যাদা-নিরাপত্তাকেই যদি ইউনুস প্রাধান্য দিতেন তাহলে গত চব্বিশের ৮ আগষ্টে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখলকারি এই ইউনুসের শাসনামলে যত বেশি নারী-শিশু হত্যা-নির্যাতন-অপমান- ধর্ষণ ও ধর্ষণের পরে খুন হয়েছে তা বোধ হয় অন্য কোন সময়ে হয়নি।

পথে ঘাটে অফিস আদালতে কোথায় নারী নিরাপদ এই অবৈধ ইউনুসীয় সরকারের সময়? কোথাও না।

আমাদের একমাত্র দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী (অন্যরা তাদের ভাষায় দেশপ্রেমিক নয়, কারন তারা কথায় কথায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী বলৈ জাহির করে ‘র সেনাপ্রধান জামায়াতের অন্যতম প্রেট্রোনাইজার জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান তো আরেক কাঠি সরস নারী অধিকারের ব্যাপারে কথাবার্তায়।

গত ১৪ নভেম্বর সকালে জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন,দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, তাদের বাদ দিয়ে উন্নয়নের চিন্তা করলে তা ভুল হবে।

দেশের উন্নয়নের স্বার্থে নারীদের দক্ষভাবে গড়ে তুলতে হবে। প্রাক্তন ক্যাডেটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সবার আগে ভালো মানুষ হতে হবে। নীতি-নৈতিকতার সাথে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।

গত ১০ নভেম্বর রাতে ঢাকা-১৫ আসনের পূর্ব সেনপাড়ায় জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে জামায়াতের আমির শফিকুর বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে নারীদের ৫ কর্মঘণ্টাই বাস্তবায়ন করা হবে।

তবে কোনো কোম্পানি যদি এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সেসব কোম্পানিকে তিন ঘণ্টার ভর্তুকি দিবে সরকার। আর কর্মক্ষেত্রে না গিয়ে নারীরা ঘরে সময় দিলে, সরকার সেসব নারীকে সম্মানিত করবে।

আমরা এই অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান ইউনুস, সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামান ও জামায়াত নেতা ডা. শফিকুরের বক্তব্য গুলোকে একটু যদি বিশ্লেষন করি বা সমসাময়িক কালে নারীদের নিরাপত্তা-মর্যাদা রক্ষায় তাদের অবস্থান-কর্মকান্ড দেখি তাহলে বরং উল্টোটাই দেখবো।

অথচ এরা বেশ মিষ্টি মিষ্টি আশাজাগানিয়া (!) কথা বলে নারীদের সাথে প্রতারণা করছেন। জাতির সাথে প্রতারণা করছেন।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রহমানে বাড়ি ভাঙচুরের সময় প্রকাশ্যে মধ্যবয়সী এক মহিলার ওপর হামলে পড়ে একদল জুলাই সন্ত্রাসী। মারধরের শিকার হন সালমা ইসলাম নামে ওই ভদ্রমহিলা।

অত্যন্ত অমানবিক-অশালীন-বর্বর এই অপরাধের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।যেখানে তাকে উদ্ধার করে হামলাকারিদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার করার কথা পুলিশের সেখানে ঘটেছে ঠিক উল্টোটি।

যে উগ্রচন্ডী-সন্ত্রাসী মেয়েটি সবুজ একটি পাইপ দিয়ে তার মায়ের বয়সী ওই মহিলাকে বেদম প্রহার করছিল আর তার যারা সহযোগী ছিল তাদের বিরুদ্ধে কোন এ্যকশনে না গিয়ে উল্টো তাকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ।

এই হলো নারীর প্রতি আমাদের নোবেল পাওয়া ইউনুসীয় শাসন। তাকে গ্রেপ্তারের পর অনেক আগে সংঘটিত ইউরোপিয়ান ইউনির্ভাসিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু সাইদ মু. সাইম হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

এরপর ১৪ নভেম্বর শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি মডেল থানার এসআই আনোয়ার মিয়া।

সালমা ইসলামের পক্ষে তার আইনজীবী আবুল হোসাইন পাটোয়ারী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে বলে জানান আবুল হোসাইন পাটোয়ারী।

যখন খুশী যাকে খুশী যে কোন একটা হত্যা বা হত্যা চেষ্টা মামলায় নিক্ষেপ করা হচ্ছে কারাগারে। কেউ কিছু বলেন না। এই হচ্ছে এখনকার বাংলাদেশে নারীর মর্যাদা। নারীর ক্ষমতায়ন। নারীর নিরাপত্তা।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দাঁড়িয়ে বিশ্ব নেতাদের সামনে কেমন সুন্দর করে মিথ্যাবাক্য আউড়ে এলেন ইউনুস একটু ভাবুন। আর গত চব্বিশের ৫ আগষ্ট জঙ্গী-সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটনোর পর জেনারেল ওয়াকার বলেছিলেন, বাংলাদেশের জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব তিনি নিজে নিয়েছেন। এই কি তবে তার সেই নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়ার নমুনা?

জঙ্গী টোকাইদের সংগঠন বা রাজনৈতিক দল এনসিপি’র নেতা জান্নাত খান শুধু তার মায়ের বয়সী ওই নারীর ওপর চরম অন্যায়ভাবে হামলা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি।

উল্টো অহংকার করে চরম ঔদ্ধত্বের সাথে এমন সব কথা বলছিল যে, মনে হচ্ছিল সে একটি চরম ছোয়াবের কাজ করে ফেলেছে। একটি চরম গর্বের কাজ করেছে। সবুজ রঙের লাঠি হাতে যে মেয়েটি মারধরের নেতৃত্ব দিচ্ছিল, ভদ্রমহিলাকে পুনঃ পুনঃ আঘাত করছিল, ওর নাম ঠিকানা পেশা রাজনীতি পদ পদবী সবকিছু জানে সকলে।

তাহলে গ্রেফতার হওয়ার কথা কে? জেলে থাকার কথা কে? জালিম কে? মজলুম কে? দেশের বিচার ব্যবস্থায় যদি কণামাত্র সুস্থতা থাকে, তাহলে প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার মানুষের সামনে একজন পর্দানশীন নারীকে প্রহার করার অপরাধে এই মবটিকে গ্রেফতার করা হতো।

সেনাপ্রধান ওয়াকার বলেছিলেন, সব ধরনের মব সন্ত্রাসকে তারা কঠোরহস্তে দমন করবেন। কিন্তু আসলে কি অদ্যাবধি তা ঘটতে দেখেছে দেশবাসী?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাংবাদিক আনিস আলমগীর লিখেছেন, ধানমন্ডি ৩২- এ প্রকাশ্যে মারধরের শিকার এক নারী—সালমা ইসলাম। ভিকটিম হওয়া সত্ত্বেও আজ তিনি “হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি”!

পুলিশ বলছে “উর্দ্ধতন নির্দেশ”, সাক্ষীরা নাকি প্রস্তুত- সবই যেন পুরোনো নাটকের নতুন পর্ব। নির্যাতিতা থেকে আসামি বানানোর এই কৌশল কি সত্যিই ন্যায়বিচার, নাকি আরেকটা ভুয়া মামলার রুটিন ওয়ার্ক?

অন্তবর্তীকালীন সরকারের জামানায় আর কত ভুয়া মামলা দেখতে হবে আমাদের? কাদের মাথা থেকে এইসব বুদ্ধি আসে!

ইমতিয়াজ মাহমুদ লিখেছেন, একটা দেশ যখন সর্বনাশের পথে যাত্রা করে তখন নানারকম লক্ষণ প্রকাশিত হতে থাকে। এইসব লক্ষণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সর্বনাশের আগে আগে দেশটিতে অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবে, আর নিরপরাধ ভুক্তভুগিরা কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে নিক্ষিপ্ত হবে।

প্রবাসী সাংবাদিক-লেখক শওগত আলী সাগর লিখেছেন, গৃহবধু সালমা ইসলাম প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন, নিপীড়িত হয়েছেন।

তিনি সেই নিপীড়নের বিচার পাননি বরং উল্টো তাকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে গত বছরের জুলাইয়ের হত্যামামলার সন্দেহভাজন হিসেবে। কিন্তু তাকে যে নিপীড়ন করা হলো তার কী হবে?

একাত্তরের নরঘাতক-নারী নির্যাতনকারি হিসেবে কুখ্যাত দল জামায়াতে ইসলামী আমীর ডা. শফিকুরের এ ধরনের শৃঙ্খল পড়ানো ও দমনমূলক কথাবার্তার তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।

ঢাকার শাহবাগে এরই মধ্যে নারীদের স্লোগান উঠেছে —‘পাঁচ নয় আট, তুমি বলবার কে’?

শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে নারীনেত্রী ও সমাজের সচেতন ব্যক্তিরা ক্ষোভ ও আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশে নারীরা আবারও অন্ধকারে ফিরে যাচ্ছেন।

নারীদের ঘরে ফিরিয়ে দিতে কর্মঘণ্টা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। নারী কর্মপরিসরে কাজ করবে না ঘরে থাকবে—এটা একান্তই নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এ সময় নারীরা সমস্বরে স্লোগান দেন—‘পাঁচ নয় আট, তুমি বলবার কে?’

‘নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান: প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’ শীর্ষক এই মৌন মিছিল ও সমাবেশের আয়োজক ছিল নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম।

এ সময় কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নারীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে নারীর প্রতি অসম্মান ও সহিংসতার প্রতিবাদ জানান।

কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশে একটি দল ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে ব্যবসা করছে। তিনি বলেন, তাদের হাতে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে।

তারা চায়, এ দেশের নারীরা যেন অন্দরমহলে বন্দী থাকে। যেন বাংলাদেশে অর্ধেক জনসমষ্টি অন্ধকারে থাকে। নারীর অগ্রগতি-উন্নতি যেন না হয়। সে জন্য তারা বলছে, কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিতে হবে। কিন্তু কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, গত ১৭ বছর নারীরা যেভাবে খুন-ধর্ষণের শিকার হতেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে।

নারীরা তাঁদের মর্যাদা ফিরে পাবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশে আজ আবার নারীরা অন্ধকারে ফিরে যাচ্ছেন। নারীদের ঘরে ফিরিয়ে দিতে কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কাজেই অধিকার আদায়ে নারীদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মর্যাদা ফিরে পেতে নারীদের সমস্বরে আওয়াজ দিতে হবে।’

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্যসচিব নিপুণ রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সংকেত দিয়ে গেলাম যে নারীর অধিকার নিয়ে কোনো সংকট তৈরি করা হলে দেশের নারী সমাজ জেগে উঠবে।’

নারী কর্মপরিসরে কাজ করবে না ঘরে থাকবে—এটা একান্তই নারীর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস।

তিনি বলেন, নারী অধিকার হলো মানুষের অধিকার। নারীর কোনো দান, দয়া বা দাক্ষিণ্যের প্রয়োজন হয় না। নারীরা ঘর সামলাবেন না বাইরে থাকবেন, সেটা একান্তই নারীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার বিষয়। নারীদের সিদ্ধান্ত নারীদেরই নিতে দিন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খান বলেন, ‘পুরুষ আমাদের সহযোদ্ধা। পুরুষ আমাদের শত্রু নয়। তাই নারীর পাশাপাশি যে পুরুষকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়, আমি তাঁর পক্ষে দাঁড়াই।’

যে জুলাই সনদে নারীর কথা নেই, সেই জুলাই সনদ নারীরা প্রত্যাখ্যান করছেন বলে মন্তব্য করেন নাহরীন ইসলাম খান। তিনি বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি প্রকৃত উন্নয়ন নয়।

প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে সেই উন্নয়ন, যেখানে রাতের বেলায় নারী নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এখনো সোচ্চার নয় বলে মন্তব্য করেন মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবর্তন দেখেছি গণ-অভ্যুত্থানে; কিন্তু পরবর্তী সময়ে এসে আমাদের এমন এমন সব সামাজিক অবস্থায় পড়তে হচ্ছে, যেখানে এখন শুনতে হয়, আমাদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে পাঁচ ঘণ্টায় নিয়ে আসা হবে।’

সমাবেশে বক্তব্য দেন ডাকসুর গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক সানজিদা আহমেদ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হোক, পারিবারিক ক্ষেত্রে হোক বা যেকোনো ক্ষেত্রে হোক, যখনই তারা কথা বলতে গিয়েছেন, তখনই দেখেছেন, বিভিন্নভাবে নারীদের হেনস্তা করা হয়েছে।

হয়তো নারীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অথবা কোনো মতাদর্শ নিয়ে অথবা পোশাক নিয়ে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে নারীকে কথা বলতে হবে।

এই প্রতিবাদ সমাবেশটির ক্ষেত্রে বিএনপির অনেক নেতা নেত্রী এই প্রতিবাদ সমাবেশটির আয়োজন করে।

তবে নারীকে এভাবে হেনস্থা- অপমান-প্রাণনাশের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সারাদেশেবই দলমত নির্বিশেষে প্রতিবাদ হওয়া উচিত বলেই মনে করেন অনেকে। তা না হলে একাত্তরের ধর্মব্যবসায়ী অপশক্তি জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগীরা নারীকে পুরোটাই অবরুদ্ধ ও সূর্যের আলো দেখতে দেবে না।

তবে ইন্টেরিম সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনুস ও সেনাপ্রধান ওয়াকার এই দায় এড়াতে পারেন না কোনভাবেই।

# ইশরাত জাহান, লেখিকা, প্রাবন্ধিক ও নারী সংগঠক।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *