ঢাকা: বাংলাদেশ বরাবর দেখেছে উগ্র মুসলমান মৌলবাদীদের সর্বনাশা কীর্তি। বিজ্ঞানমনস্ক হতে না পারায়, দিনে দিনে ধর্ম গ্রাস করে ফেলায় একের পর এক খুন হয়েছেন মুক্তমনের মানুষ, ব্লগার, লেখকরা!
২০১৫ সালের ৭ আগস্ট, ঠিক আজকের এই দিনটিতে দুপুরবেলা বাড়িতে ঢুকে হত্যা করা হয়েছিল ব্লগার নিলয় নীলকে। এর কিছুদিন আগে নীল স্থানীয় থানায় গিয়েছিলেন জিডি করতে।
কিন্তু পুলিশ জিডি গ্রহণ করেনি। দশ বছর হয়ে গেলো। নীল ও নীলদের হত্যার বিচার হয়নি। অনেক বিচারের ভিড়ে কেউ আর এখন নীল-অনন্ত-অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের বিচারের কথা বলেই না।
এখন তো আরো বলে না। কারণ এখন আরেক মৌলবাদী, জঙ্গীর শাসন চলছে।
নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের ঢাকার ফ্ল্যাটে মুসলিম সন্ত্রাসীরা ঢুকে ওঁকে কুপিয়ে মেরেছিল। নিজের রক্তের ওপর নিথর পড়ে ছিল নিলয় ।
২০১৫ সালটা ছিল ভয়াবহ। এক এক করে খুন করা হচ্ছিল নাস্তিক ব্লগারদের। অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয়। তারপর নিলয় নীল।
পুলিশকে নিলয় জানিয়েছিলেন তিনি নিরাপত্তার অভাব অনুভব করছেন, কারণ তিনি লক্ষ্য করেছেন কিছু লোক তাঁকে অনুসরণ করছে।এরপরও পুলিশ নিলয়ের জন্য নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা করেনি।
নিলয় দর্শনে মাস্টারস করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, তুখোড় মেধাবী এবং বিজ্ঞানমনস্ক তরুণ ধর্ম বিষয়ে বুদ্ধিদীপ্ত ব্লগ লিখতেন।
কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত হলেই তো সমস্যা বাংলাদেশে! প্রশ্ন করবেন যে? জানবেন যে ধর্মের গোঁড়ামি।
উগ্র মুসলমান জঙ্গীদের হাতেই খুন হয়ে গেলেন তিনি।
দেখা গেছে, দু’একজন ছাড়া কোনও বুদ্ধিজীবীই প্রতিবাদ করেননি ওই সব বীভৎস হত্যাকাণ্ডের।
ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যা মামলায় দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন তাঁর স্ত্রী আশামনি। নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত তিনি।
ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন এই মামলায় সাক্ষী ১৫ জন। তবে এখন পর্যন্ত মামলার বাদী নিলয়ের স্ত্রী আশামনিসহ সাক্ষ্য দিয়েছেন পাঁচজন।
হত্যাকাণ্ডের দিনই আশামনি অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এই মামলায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
২০২০ সালের ৪ অক্টোবর ১৩ জনকে আসামি করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযোগপত্র দেয়। গত ১৮ জানুয়ারি ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ এখন দ্রুত হচ্ছে। গত দুই মাসেই চারজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলা নিষ্পত্তি হতে হয়তো সর্বোচ্চ চারটি শুনানির তারিখ লাগতে পারে। এর আগে সাক্ষী নিয়ে জটিলতায় কালক্ষেপ হয়েছে। এর মূল কারণ হলো, রাজনৈতিক জটিলতা।
এই মামলায় ২০২২ সালের আগস্ট প্রথম সাক্ষ্য দেন নিলয়ের স্ত্রী। গত জুন, জুলাইয়ে সাক্ষ্য দেন চারজন। তারা– সামছুল কবির, সানজিদা খানম, মো. শামীম হোসেন ও পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন।
সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হককে প্রধান আসামি করে দেওয়া হয় অভিযোগপত্র। অন্য আসামিরা হলো– মাসুম রানা, সাদ আল নাহিন, মো. কাওসার হোসেন খান, কামাল হোসেন সরদার, মাওলানা মুফতি আব্দুল গফ্ফার, মো. মর্তুজা ফয়সল সাব্বির, তারেকুল আলম ওরফে তারেক, খায়রুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে রিফাত ওরফে ফাহিম ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাহাব, মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, মো. আরাফাত রহমান ও শেখ আব্দুল্লাহ ওরফে জুবায়ের।