ঢাকা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি ভয়াল ও নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের দিন হিসেবে পরিচিত। কিন্তু আদালতের চোখে ২১ আগস্ট কিচ্ছু হয়নি। আসামি কেউ দোষী নয়।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশের সময় তৎকালীন রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জঙ্গিগোষ্ঠী নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালায়।

এই হামলায় নিহত হন ২৬ জন নেতাকর্মী, গুরুতর আহত হন প্রায় ৩০০ জন, যাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব ঘটনা আদালতে প্রমাণ হওয়ার পরেও শুধু রাজনৈতিক কারণে এই বিচারকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে।

আন্ধা কানুন যাকে বলা হয়।

আদালতকে নগ্নভাবে ব্যবহার করে মানবতাবিরোধী, ষড়যন্ত্রমূলক গণহত্যার রাজনীতিকে বৈধতা দেওয়ার নজিরবিহীন উদাহরণের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিবৃতি দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ বলেছে–

সমগ্র বাংলাদেশ ও দেশবাসী সাক্ষী ২১শে আগস্টের ভয়াবহ নারকীয় গ্রেনেড হামলার। সেদিন মানবঘাতী গ্রেনেড আর বুলেটের মাধ্যমে গণতন্ত্রের স্বর্ণদুয়ারকে রুদ্ধ করে দেওয়ার অপচেষ্টা হয়েছিল।

এটি ছিল গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির কফিনে শেষ পেরেক। গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার শান্তি ও গণতন্ত্রের রাজনীতিকে গ্রেনেড দিয়ে স্তব্ধ করে দেওয়ার চূড়ান্ত নীলনকশার বাস্তবায়ন করার নিকৃষ্টতম অপতৎপরতা ছিল।

এটি ছিল জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস ও ঘৃণ্য রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞ। এ হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করা।

যেখানে ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং শত শত মানুষ গুরুতরভাবে আহত হন, যারা গ্রেনেডের স্প্লিন্টার শরীরে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

কিন্তু জাতির গভীর দুঃখ ও ক্ষোভের বিষয় যে, এ মামলার দণ্ডপ্রাপ্তদের আপিল বিভাগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

এর আগে হাইকোর্ট বিভাগও একই কায়দায় দণ্ডপ্রাপ্তদের খালাস দেয়। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, বর্তমানে বাংলাদেশে আদালত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না করে, বরং বিচারপ্রার্থীর অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে।

আদালতকে ব্যবহার করে প্রকাশ্য দিবালোকে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত আসামীদের বেকসুর খালাস দেওয়া হচ্ছে। কী নির্মম ও নিষ্ঠুর ব্যাপার! নারকীয় ঘটনার ফলে নিদারুণ হতাহতের দায় তাহলে কার? এই প্রশ্নের জবাবের দায় আদালতের উপর বর্তায়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে, এই রায় শুধু ন্যায়বিচারের পরিপন্থী নয়, বরং হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিকে বৈধতা দেওয়ার এক অশুভ সংকেত। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নস্যাৎ করার মাধ্যমে মানবসভ্যতার সামনে এক নজিরবিহীন ও ন্যক্কারজনক ইতিহাস সৃষ্টি করা হয়েছে।

আদালতকে ব্যবহার করে হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দেওয়ার এই ঘটনা গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের প্রতি নির্মম প্রহসন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই রায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং স্পষ্ট করে জানাচ্ছে যে, ২১শে আগস্টের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের তামাশাপূর্ণ এই রায় বাংলাদেশকে গভীর খাদের কিনারায় নিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র অকার্যকর হওয়ার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে। জনগণের মনে রাষ্ট্রের কার্যকরিতা, ন্যায়বিচার ও নাগরিক অধিকার পাওয়া নিয়ে অবিশ্বাসের জন্ম হবে। জনগণের এতো বিশাল অনাস্থা ও অবিশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশ কোনোভাবেই সামনে আগাতে পারবে না।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে, রাষ্ট্রের বাইরেও দেশের জনগণের সমাজ রয়েছে। যে সমাজে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ।

মানবিক সম্পর্কের আবেগে সিক্ত সেই বৃহৎ হৃদয়কে আদালতের এই ফরমায়েশি রায় আহত ও ক্ষুব্ধ করে তুলবে। মানবতাবাদী ও গণতন্ত্রপ্রেমী দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার বিরুদ্ধে আমাদের সর্বাত্মক লড়াই ও সংগ্রাম চলমান থাকবে এবং আবার কোনো একদিন সোনালি সূর্যোদয়ের মাধ্যমে বিচারহারা মানুষগুলো ন্যায়বিচার পাবে।

বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়াটাই আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রামের অবিচল প্রত্যয়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *