ঢাকা: বাংলাদেশে পরীক্ষা নিরীক্ষামূলকভাবে তালিবানি শাসন শুরু হচ্ছে। প্রথম ধাক্কাটা খুব জোরে দিচ্ছে না। ধীরে ধীরে গা সওয়া করে সবটা বলবৎ হবে!
দেশে গান বাজনা নিষিদ্ধ হচ্ছে, পোশাকের ফতোয়া জারি হচ্ছে, হিন্দুদের তো আগে থেকেই নিয়ম বিধি মেনে চলতে হয়। আস্তে আস্তে সব কার্যকর হবে তালিবানি স্টাইলে।
আফগানিস্তানে যেমন হয়েছে, ঠিক তেমনটা হবে।
নারীর পোশাক পরিধানের নিয়ম শুরু হয়ে গেছে মৌলবাদের বাংলায়। বাংলাদেশ কোন দিকে অগ্রসর হচ্ছে তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
মৌলবাদীদের প্রশ্রয় দিয়ে সরকার চলছে তার একটি নমুনা। কয়েকমাস আগে, এনসিপির একজন নির্বোধ মৌলবাদী নারী পোশাক কেমন পরিধান করতে হবে তা নিয়ে জ্ঞান বিতরণ করছিল।
ইউনূস জমানায় বাংলাদেশ কি ‘তালিবানিস্তান’ হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগোল? হ্যাঁ আসলেই।
বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের একটি সার্কুলার ঘিরে প্রচুর বিতর্ক চলছে। সেখানে বলা হয়েছে, মহিলারা শর্ট স্লিভ বা লেন্থের ড্রেস পরতে পারবেন না। ব্যাঙ্কে পরা যাবে না লেগিংসও। যদিও এই নির্দেশিকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই পিছু হটেছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক। ফতোয়া প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের ফতোয়ায় বলা হয়েছিল, মহিলারা শর্ট স্লিভ বা লেন্থের ড্রেস পরতে পারবেন না। কেউ এই নির্দেশ না মানলে তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
এই নির্দেশিকা দেখে বাংলাদেশের নাগরিকরাই প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন, এখন থেকে মহিলা ব্যাঙ্ক কর্মীচারীরা কী পোশাক পরবেন সেটাও ব্যাঙ্ক-ই ঠিক করে দেবে?
ব্যাঙ্কের ওই নির্দেশিকায় এও বলা হবে, মহিলাদের হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে হবে ও সেই হিজাব হতে হবে সাদামাটা। বেশি ডিজাইন থাকা চলবে না। তবে হিজাব পরতে কাউকে বাধ্য করা হয়নি বলে দাবি বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের।
গত ২১ জুলাই এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। শুধু মহিলা নয়, পুরুষরাও কী পোশাক পরবেন সেটাও ঠিক করে দিয়েছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। পুরুষদের ক্ষেত্রে জিন্স পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরতে হবে শুধুমাত্র ফরম্যাল ফুল/হাফ শার্ট ও ফরম্যাল প্যান্ট।
তবে পুরুষের বিষয়টা জাস্ট দেয়া। আসল উদ্দেশ্য নারীকে বস্তাবন্দি করা।চাকরিচ্যূত করা।
কারণ এমন মানসিক চাপে পড়লে নারীরা কাজের প্রতি উৎসাহ হারাবে। হয়তো কাজ ছেড়েও দিতে পারে!
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ-র সাফাই, ব্যাঙ্কের সব কর্মীদের মধ্যে পোশাকে সাম্য ও ঐক্য আনতেই এই নয়া নির্দেশ জারি হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে শালীন পোশাক বাধ্যতামলূক।
বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের মুখপাত্র আরিফ হোসেন-কে প্রশ্ন করা হয়, ব্যাঙ্কে কি কোনও কর্মচারী এতদিন অশালীন পোশাক পরে আসতেন?
তিনি উত্তরে হ্যাঁ বলবেন কী করে? উত্তরে না-ই বলেছেন। তাহলে পোশাক নিয়ে এই ফতোয়া কেন?
সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি আরিফ হোসেন। কিন্তু তাঁর ব্যাখ্যা, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করে যাঁরা ব্যাঙ্কে চাকরি করতে আসেন, তাঁদের মধ্যে এখনও ছাত্রসুলভ আচরণ ও পোশাক পরার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাঁদের সতর্ক করতেই এই নয়া পোশাকবিধি।
বাংলাদেশের মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া জানিয়েছেন, ব্যাঙ্কে কি কেউ অশালীন পোশাক পরে কাজে যায় নাকি? বৈষম্য দূর করতে পোশাকের প্রসঙ্গ আসছে কেন? তাঁর ইঙ্গিত, কে, কোথায় বসে এই নির্দেশ দিচ্ছেন বা কাকে সন্তুষ্ট করতে এই তালিবানি ফতোয়া, বাংলাদেশের মানুষের সেটা বুঝতে বাকি নেই।
ফওজিয়া মোসলেমের দাবি, বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের উচিত নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পেশাগত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে কি না, সেটা দেখা ও গ্রাহকদের পরিষেবা পাওয়া নিশ্চিত করা।
এই বিতর্কের মুখে পড়ে অবশ্য শেষ পর্যন্ত ঢোঁক গিলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সার্কুলার পরামর্শমূলক। বোরখা বা হিজাব পরতে কাউকে জোর করা হয়নি। এই সার্কুলারে অফিসে কারও পোশাক পরার অধিকার খর্ব হবে না বলেই জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক।