ঢাকা: বাঙালি জাতির বুকে আরো একটা ঘা পড়লো। এই ঘা এলো মুহাম্মদ ইউনূস আসার পর। শেখ মুজিব-তাজউদ্দীনসহ ৪ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে। এটাই ছিল মেধা না কোটা আন্দোলন!

এখন তো স্পষ্ট জুলাই আগস্টের ষড়যন্ত্র ৭১ মুছে দেয়ার আন্দোলন ছিল। কিন্তু সে সময় অনেক বোদ্ধা বোঝেননি যে এই ২৪ অন্য কারণের ২৪।

মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ হবে শেখ মুজিবকে দ্বিতীয়বার হত‍্যা করে এবং একাত্তরের পরাজিত শক্তি বড় বেশি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে এখন।

শুধু ৩২ নম্বর ভেঙ্গে, ভাস্কর্য ভেঙ্গেই এরা ক্ষান্ত দেবে না। অগাস্ট পাঁচের পর টার্গেট করে রাজনৈতিক হত্যা করেছে। আরো করবে যদি এভাবেই চলে।

কয়দিন পর রব উঠবে, একাত্তর হয়নি, একাত্তর ভুল। আমরা পাকিস্তানি।

ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে, ক্ষমতার লোভে একদল দেশদ্রোহী, ধর্মান্ধ নিজের আখের গুছিয়ে নিয়ে এখন ৭১ মুছে দিচ্ছে দেশ থেকে।

মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করা কি সংস্কারের অংশ?

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি হারালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চারশোর বেশি রাজনীতিবিদের (এমএনএ/এমপিএ) মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে।

ক্ষমতালোভী ইউনূসের দেশে সব সম্ভব।

বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশে এসব নেতাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ভয়াবহ অবস্থা আজ দেশের।

মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রকের লেজিসেলেটিভ ও সংসদ বিভাগ থেকে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের জন্য মোট পাঁচ শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রথমত, যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এবং বাংলাদেশের যেসব নাগরিক বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।

দ্বিতীয়ত, যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত, মুজিবনগর সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

তৃতীয়ত, মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে যুক্ত সব এমএনএ বা এমপিএ, যাঁরা পরবর্তী সময়ে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন।

চতুর্থত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক।

পঞ্চমত, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

অন্তর্বর্তী সরকার জানে না যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে শেখ মুজিবকে মুছে ফেলা সম্ভব না।

ইন্টেরিম সরকার গত দশমাসে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা খুবই খারাপ নজির স্থাপন করেছে। সরকার জনগণের সাথে চলা উচিৎ। তবে ইউনূস সরকার তা করছে না।

ড.ইউনূস সরকার সর্বশেষ খারাপ নজির স্থাপন করলো শেখ মুজিবের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করে।

❝বাঙলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধ পৌঁছে দিয়েছিলেন মুজিব। বন্দী থেকেও তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধকে, তিনিই সৃষ্টি ক’রে চলছিলেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।

মুজিবকে আমরা প্রচণ্ড সমালোচনা করতে পারি, তিনি সমালোচনার উর্ধ্বে নন, অনেক সীমান্ধতা তাঁর মধ্যে ছিল; কয়েক দশক ধ’রে তো কোটি কোটি বামন প্রাণভ’রে তাঁর সমালোচনা করেছে। কিন্তু সত্য হচ্ছে তিনি মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, বাঙলাদেশের মহাস্থপতি।❞—হুমায়ুন আজাদ

খুব কঠিন শোনালেও বলতে হবেই- বুঝে না শুধু এই অধম বাঙালি শেখ মুজিব কী…

শেখ মুজিবের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আজ জঙ্গিদের কব্জায়, সেই বাঙালী আজ ধর্মের নামে নৃশংসতা চালায়, সেই বাংলায় আজ মা-বোনরা ধর্ষিত হয় নিত্য।

শেখ মুজিব-তাজউদ্দীনসহ ৪ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল কি প্রমাণ করে! তারা কি মুক্তিযুদ্ধ করেননি!নাকি মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও পরবর্তী ৯ মাস যুদ্ধে তাঁদের মোটেও অবদান নেই!

যারা অখন্ড পাকিস্তানকে রক্ষা করতে চেয়েছিলো বা চেয়েছিলো পাকিস্তান না ভাঙুক তারা তাহলে মুক্তিযোদ্ধা আজ? ইতিহাস কি তাই বলে!

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল জাতির ইতিহাসের সঙ্গে করা এক নির্মম বিশ্বাসঘাতকতা। চরম অবমাননা।

এটি বাঙালির অস্তিত্ব, চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি চরম অবমাননা।

এই সিদ্ধান্ত কেবল অন্যায় নয়, এটি ইতিহাস বিকৃতি, জাতির সাথে প্রতারণা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *