ঢাকা: গত বছর কথিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সময় বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) কেবিন ব্লক এলাকায় হত্যাচেষ্টা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চিকিৎসকসহ আরও ১৯ কর্মীকে বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর আগে গত ৫ জানুয়ারি দুই চিকিৎসকসহ ১৫ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ওই ঘটনায় দুই দফায় হাসপাতালের ৩৪ জনকে শাস্তি দেওয়া হল। এই বিশেষায়িত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টি আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত ছিল।
বিএমইউর প্রক্টর অধ্যাপক ডা. শেখ ফরহাদ সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, সরকার পতনের আগের দিন অর্থাৎ গত বছরের ৪ অগাস্টে কেবিন ব্লকের সামনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর এবং একজন ছাত্রকে হত্যাচেষ্টার ঘটনা তদন্তে শৃঙ্খলা কমিটি করা হয়েছিল।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা মূলত আওয়ামীলীগ ও প্রগতিশীল মনোভাবাপন্ন চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর বর্তমান সরকারের দমন-পীড়ন নীতির অংশ হিসেবেই উদ্দেশ্যমূলক ও একতরফাভাবেই করা হয়েছে।
প্রক্টর অধ্যাপক ডা. শেখ ফরহাদ বলেন- সেদিন লাঠিসোঁটা নিয়ে ছাত্রজনতার ওপর হামলার প্রমাণ হিসেবে ভিডিওচিত্র, সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিও ও তথ্য কমিটি হাতে পেয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর।
২৫ জনের বিষয়ে তদন্ত শেষে কমিটি এই ১৯ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।
২৫ জনের ওই গ্রুপের ২ জনের বিরুদ্ধে এর আগে ১৫ জনের সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
চারজনের বিষয়ে শৃঙ্খলা কমিটি এখনও পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ পায়নি, তাদের বিষয়ে অধিকতর তদন্তের কথা বলেছে।
বাকি ১৯ জনকে বরখাস্তের সুপারিশ করেছে কমিটি। “সে অনুযায়ী গত শনিবারের সিন্ডিকেট সভায় তাদের বরখাস্তের বিষয়টি পাস হয়েছে। এ নিয়ে সব মিলিয়ে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল।’
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত বছরের ৪ অগাস্টে শাহবাগে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা।
ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে একদল শ্রমিক লাঠিসোঁটা হাতে শাহবাগে জড়ো হন।
এসময় তৎকালীন সামনের দিকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন।
দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
এক পর্যায়ে ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হাসপাতালের ভেতরে চলে যান।
পরে আন্দোলনকারীরা হাসপাতালের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তখন কথিত আন্দোলনকারিরা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর সহ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও বাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
পরবর্তীতে এর দায়ভার চাপানো হয় আওয়ামীরীগ সমর্থিত চিকিৎসকসহ অন্যদের ওপর। সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই ঘটনায় জড়িত বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেয়।