ঢাকা: ‘আমরা সবাই পাপী; আপন পাপের বাটখারা দিয়ে; অন্যের পাপ মাপি’!
সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা। সেখানে ফরিদা পারভীনকে নিয়ে শোক প্রকাশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের প্রতি আক্ষেপের কথাও বলেন তিনি।
তাঁর মতে, একজন শিল্পী মারা যাওয়ার পর অনেকেই পাপ-পুন্য, দোজখ-বেহেশত নিয়ে কথা বলেন, যা উচিৎ নয়।
আসলে খুন খারাবি, ভিন্ন ধর্মের মানুষকে হত্যা এসব তো আর শিল্পীরা করেননা, তাঁরা গান গান। গান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জিনিস। কিন্তু জঙ্গীরা এগুলো বুঝবে না। মৌলবাদীরা হত্যা বোঝে, গান বোঝে না।
মৌলবাদীরা যে হিন্দু ধর্মের মানুষ হত্যা করছে, জ্বালাও পোড়াও লাগিয়ে রেখেছে, তাতে তারা দোজখ দেখে না। অথচ সুমধুর গানের মধ্যে এই নিকৃষ্টরা পাপ খোঁজে।
কনকচাঁপা বলেছেন, ‘ফরিদা পারভীন আপা লালনগীতির যে জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করেছিলেন, পুরো জায়গাটি তিনি শূন্য করে নিজের সঙ্গে নিয়ে গেলেন। যারা লালনগীতি শুনতাম, ফরিদা আপাকেই শুনতাম।
মূলত যারা লালনের আখড়ায় গান করেন তাদের গান এক রকম, আর ফরিদা আপার গান আরেক রকম। আখড়া থেকে গান তুলে এনে আপা উপস্থাপন করেছেন।
জনপ্রিয় এই গায়িকা আরও বলেন, তার কণ্ঠে মায়া, শুধু লালনের কথা বললে তাকে ছোট করা হবে। তার কণ্ঠ অনবদ্য। এককথায় বলতে গেলে, ফরিদা আপার কণ্ঠ তীরের মতো হৃদয় স্পর্শ করত। ভরাট একটা সংগীতাঙ্গন দেখে আমি বড় হয়েছি, সেটাই ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি।
আমাদের মাথার ওপর যারা বটবৃক্ষের মতো ছিলেন, তাদের আমরা হারিয়ে ফেলছি। আমরা খুবই অসহায় হয়ে যাচ্ছি। ’
পরে খানিকটা আক্ষেপ ব্যক্ত করে কনকচাঁপা বলেন, ‘সাধারণ মানুষ মনকে আনন্দিত করতে গান শোনেন। কিন্তু যখন কোনো শিল্পী মারা যান তখন পাপ-পুণ্য, দোজখ-বেহেশত নিয়ে তারা অনেক কথা বলেন। সেই মন্তব্যগুলো দেখলে আমি ভীত হয়ে যাই, আমাদের খুব খারাপ লাগে।
একজন মানুষের দাফন সম্পন্ন হয়নি, তখন থেকেই তিনি কত নম্বর দোজখে বা বেহেশতে যাবেন, এসব নিয়ে আলোচনা চলে।
কনকচাঁপা অনুরোধ করেন, ‘যারা অনলাইন বা সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়, তাদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ- শিল্পীদের এত পাপী ভাববেন না।
আমাদের দেশে পাপ অনেক জায়গায় আছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আছে; কিন্তু আমরা শিল্পী, আমরা শুধু গান করি। আমাদের ঘুষ খাওয়ার জায়গা নেই, দুর্নীতির জায়গা নেই, মিথ্যাচার করার জায়গা নেই, আমাদের অন্যায় করার জায়গা নেই। ‘