ঢাকা: পহেলা অগ্রহায়ণকে ‘নববর্ষ’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

বাংলা বছর বরণে বৈশাখের প্রথম দিনে নববর্ষ উদযাপনের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করলেও সংগঠনটি এ ঘোষণা দিয়েছে।

একটা কথা আছে না, শয়তান হয়ে গেলেও কিন্তু মাথা লাগে! তবে সেই মাথাটা ব্যবহার হবে শয়তানিতেই। আসলে বাংলাদেশের রীতিনীতি নিয়ে জনগণ খোদ বলছে এই কথা!

নববর্ষ নাকি বৈশাখে নয়, অগ্রহায়ণে ‘নববর্ষ’ পালন করবে ডাকসু!

কোথাও শুনেছেন এমন প্রস্তাব!? না শুনবেন আশা করেছিলেন? যা শোনেননি তাই শুনতে হবে এখন!

এরা সংস্কৃতি-ভারসাম্য তো নষ্ট করছেই, ধীরে ধীরে মানুষের মনে প্রচণ্ড ক্ষোভ আর ঘৃণার জন্ম দিচ্ছে।

ডাকসু দখলকারী শকুনেরা অগ্রহায়ণকে নববর্ষ ঘোষণা করলো। আবহমানকাল ধরে অগ্রহায়ণে নবান্নের উৎসব চলে আসছে এই দেশে, এরা এখন এটাকেও পাল্টে দেবে।

শকুনদের ভয়াবহ নীলনকশায় আরও যে কি কি আছে!! আর এবার তো নাবান্ন বাদ দেয়া হয়েছে!

তবে এর কারণটা কী? নববর্ষ নিয়ে এর আগেও আমরা মোল্লা, সংস্কৃতি বিরোধীদের বাজে মন মানসিকতা দেখেছি। তবে থামিয়ে থামিয়েও থামাতে পারেনি। যদিও এবার তো বাড়াবাড়ির শেষ পর্যায় বলেই মনে হচ্ছে!

আসলে কারণটা কী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর? যেহেতু নববর্ষের সাথে কবিগুরু জড়িত?

পয়লা অগ্রহায়ণকে বাংলা নববর্ষ হিসেবে পালন করতে কেন শিবির নেতৃত্বের ডাকসু চায়? শিবির রাজাকার, পাকিস্তানি এ তো আর বলে দিতে হবে না।

বাঙালিকে মূলত এরা রবীন্দ্রনাথ ছাড়া করতে চায়। আর রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বাঙালি- যারা ধর্মের পরিচয়ে মুসলমান- তারা স্রেফ শেকড়হীন ইতিহাসহীন ঐতিহ্যহীন হয়ে পড়বে, এটা শিবির খুব ভালোমতো জানে।

রবীন্দ্র বিরোধিতা তো আজ শুরু হয়নি দেশে, তবে এখন তো তাদের হাতেই সব।

ঢাকার সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রই হচ্ছে পহেলা বৈশাখের রমনা বটমূলে (গাছটা আসল অশ্বত্থ)।

পয়লা বৈশাখ কোনো ধর্মীয় উৎসব নয়, অসাম্প্রদায়িকভাবে পালন করা বাঙালির উৎসব এটি। বাঙালি সংস্কৃতি। সংস্কৃতি আর ধর্ম এক জিনিস নয়। কিন্তু পাকিস্তানিরা তো তা বুঝবে না।

রবীন্দ্রনাথের ‘এসো হে বৈশাখ’ যখন গেয়ে উঠে বাঙালি, তখন যে তারুণ্যের জোয়ার উঠে তাতে শিবির ছানারা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে। এ জন্যই অগ্রাহায়নকেই সন পয়লা করতে চায়। রবীন্দ্রনাথকে এরা সহ্য করতে পারে না।

আসলে এরা বাংলা মাসেরই বিরোধী। বাংলা মাসের নামগুলো সব হিন্দু দেবদেবী ও পৌরাণিক চরিত্রের।

শিবির আরবি মাসকে তাদের মাস মনে করে। সত্যি বলতে, এরা হিযরি সনকে নিজেদের নববর্ষ মনে করে।

তাই যেভাবে সেভাবে হোক বাঙালিকে রবীন্দ্র বিরোধী করে তোলার অপচেষ্টা জোর কদমে চালাচ্ছে।

পহেলা বৈশাখ এমন গভীর শেকড় ওয়ালা এক উৎসব, প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে বাদশাহ আকবরের খাজনা আদায়, ব্রিটিশ আমলের পূণ্যাহ হয়ে এমনভাবে এদেশের কালচারে শেকড় গেড়েছে যে – বাংলাদেশ থেকে একে বাতিল করা, বন্ধ করা বাস্তবিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে সম্ভব না।

এমনকি জামায়াত ক্ষমতায় আসলেও না। আন্তর্জাতিক চাপ তো আলাদা করে আছেই। তাই তারা নববর্ষকে শেষ করতে, নববর্ষকে পঙ্গু করতে নতুন নতুন পরিকল্পনা করছে।

ঈদ উৎসব থেকে আপনি নতুন জামা, সেলামি, সেমাই আর মেহমান বাদ দিন। ঈদ বলে কিছু থাকবে তাহলে? থাকবে না। তাই বলে কি ঈদ কবুল হবে না? হবে। কিন্তু এটা হবে কালচারাল পঙ্গু ঈদ।

মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী আর জামায়াতে ইসলাম নববর্ষ পালন করবে ঠিকই, আপনি তাদের জঙ্গি বা বাঙালি সংস্কৃতি বিরোধী বলতেও পারবেন না। কিন্তু তারা বাঙালি সংস্কৃতিকে পঙ্গু করে দেবে।

নববর্ষকে মেরে ফেলবে। নববর্ষ হবে ঠিকই। কিন্তু সেই নববর্ষের কোন শেকড় থাকবে না, ইতিহাসের সম্পর্ক থাকবে না, রবীন্দ্রনাথ থাকবে না। সেটা হবে এক মস্তকবিহীন নববর্ষ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *