ঢাকা: আজকের তথা বিগত এক বছরে বাংলাদেশের চিত্র যদি আপনি দেখতে চান, তবে এককথায় বলতে হবে, মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা আর রাজাকারের গলায় ফুলের তোড়া!

এর থেকে দুঃখজনক আর কী হতে পারে?
জঙ্গী, রাজাকারের দল তাদের পৈশাচিক প্রতিহিংসা মেটাচ্ছে একাত্তরের পরাজয়ের।

বঙ্গবন্ধুর মাথায় প্রশ্রাব করে, ধানমণ্ডি ৩২ গুঁড়ো করে, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাস্কর্য, স্মৃতিচিহ্ন চুরমার করে এই ইউনূস জঙ্গীরা প্রমাণ দিয়েছে যে এরা ৭১ চায় না!

এরা ২৪ চায়–! ২৪ এর জুলাই চায়!

আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন সেই গর্বিত সন্তানেরা, যারা ১৯৭১ সালে নিজেদের জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। তাঁদের ত্যাগ ও বীরত্ব আমাদের জন্য চিরন্তন প্রেরণা।

কিন্তু আজ “জুলাইয়ের যোদ্ধা” নামে কিছু দেশদ্রোহী নিজেদের যোদ্ধা হিসেবে দাবি করছে।

এ ধরনের দাবি শুধু ভ্রান্ত নয়, এটি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত বীরদের অবমাননা এবং আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের প্রতি অবিচার।

সোহেল রানার কন্ঠে তীব্র হতাশা ফুটে উঠেছে।

একাত্তরে রণাঙ্গনে অস্ত্র ধরেছিলেন দেশ স্বাধীন করতে। দেশ স্বাধীনের পর নাম লেখান তিনি ঢাকাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে।

মুক্তির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্রের প্রযোজক তিনি।

সিনেমায় মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে অভিনয় করিয়েছিলেন এই নির্মাতা-প্রযোজক। পরে নিজেও আসেন অভিনয়, পরিচালনায়।

গ্লিটজের সঙ্গে আলাপে মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার ও সম্মানের বিষয়ে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা প্রকৃত সম্মান পাচ্ছেন না বলে তীব্র হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

গত রোববার ফেইসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম ছবি ‘ওরা ১১ জন’, প্রযোজক মাসুদ পারভেজ। ধিক তোমাকে, ধিক! তোমার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট এবং মুক্তিযোদ্ধা আইডেন্টিটি কার্ডকে।”

সোহেল রানা গ্লিটজকে বলেন, “আমাকে নিয়ে কিছু লিখিনি, আমার কথা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অবহেলাটা তুলে ধরলাম। আমার এসব বিষয়ে দুঃখ নেই। কিন্তু দীর্ঘশ্বাস আছে।

“পৃথিবীর সব ধরনের আইডি কার্ডের তো একটা মূল্য আছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে সেই আইডি কার্ডের মূল্য হচ্ছে সব থেকে কম।”

সোহেল রানা ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘২৫ বছর পর তো বাংলাদেশে আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা দেখা যাবে না, কাউকে পাওয়া যাবে না। তাহলে তারা এখন বেঁচে থাকতে সেই সম্মানটুকু করলে অসুবিধা কোথায়? আপনারা অন্যদের এত সুযোগ সুবিধা দেন, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের একটু সম্মান দেন। আর তো কিছু চাই না।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনী, সরকারি কর্মকর্তাদের সবার নিজস্ব হাসপাতাল, ছাড়পত্র বা আলাদা সেবা থাকে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দেওয়া কার্ডে কী আছে? এই কার্ডের চেয়ে মূল্যহীন কার্ড পৃথিবীতে আর কিছু আছে বলে মনে হয় না।’

অক্টোবরের ৪ তারিখ তিনি লেখেন,

“লক্ষণ তো ভালো মনে হচ্ছে না। অন্তত আপনার মুখ থেকে এরকম আশা করিনি।

৫২, ৬৯, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ভুলে যেতে বলছেন। রিসেট করার অর্থ কি তাই। এটা কি পিতৃপরিচয় ভুলে যাওয়ার সামিল নয়। তখন আমাদের পরিচয় কি হবে, পিতা ছাড়া সন্তান।

অতীত থেকে শিক্ষা না নিয়ে যারা অতীতকে সম্পূর্ণ মুছে দিতে চায় তারা হয় পাগল নয় অন্য চিন্তায় বিশ্বাসী। আমরা এখনো আপনার উপরে বিশ্বাস রাখতে চাই।

আপনার মুখ থেকে বলা কথাগুলো যেন ইতিহাস বিকৃত না হয় সেদিকে একটু খেয়াল রাখলে খুশি হবো”!

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *