মানিকগঞ্জ: তেওতা জমিদার বাড়ি ইতিহাসের নীরব সাক্ষী!

তেওতা জমিদার বাড়ি হলো কাজি নজরুলের ভালোবাসার স্মৃতি।

মানিকগঞ্জের শিবালয়ের তেওতা গ্রামে অবস্থিত এই জমিদার বাড়িটি শুধু ইতিহাস নয়, ভালোবাসা আর সাহিত্যের এক নীরব সাক্ষী।

প্রাসাদটি লালদিঘী, নাটমন্দির, নবরত্ন মঠসহ জমিদার আমলের ঐতিহ্য বহন করে।

এ বাড়িতেই জন্ম নিয়েছিলেন নজরুলের প্রেমিকা ও পরবর্তীতে স্ত্রী হওয়া প্রমীলা (আশালতা সেনগুপ্ত)।

বিয়ের আগে নজরুল একাধিকবার এসেছিলেন তেওতায়, প্রিয় মানুষটিকে দেখার জন্য।

আজও এই বাড়ির প্রতিটি ইট ধারণ করে আছে সেই প্রেম, ইতিহাস আর কাব্যিক অনুভব।

ধ্বংসস্তূপের ভেতরেও এই প্রাসাদ যেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে হারানো গৌরব আর বিস্মৃত কালের গল্প বলে যায়।

স্মৃতি বিজড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এই ঐতিহ্যবাহী স্থানে কাজী নজরুল ইসলাম প্রমীলা দেবীর রূপে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, “তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়/ সেকি মোর অপরাধ।”

তেওতা জমিদার বাড়ির পাশেই ছিল প্রমীলা দেবীর পিতৃগৃহ। তাঁর পিতা বসন্ত সেনের ভ্রাতুষপুত্র বীরেন সেনের সঙ্গে নজরুল ইসলামের গভীর বন্ধুত্ব ছিল, যার ফলে কবি প্রায়ই এই বাড়িতে যাতায়াত করতেন। লোককথা অনুযায়ী, এই জমিদার বাড়িটির বয়স প্রায় ৩০০ বছর।

ইতিহাস বলছে, সপ্তদশ শতকের শুরুর দিকে পাচুসেন নামের এক দরিদ্র কিশোর তামাক ব্যবসা করে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন এবং দিনাজপুরের জয়গঞ্জে জমিদারী কিনে পঞ্চানন সেন নামে পরিচিতি লাভ করেন। এরপর তিনি মানিকগঞ্জের শিবালয়ের তেওতায় এই জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন।

ঐতিহাসিক এই তেওতা জমিদার বাড়ি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সচিব, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এবং একই সাথে এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সমস্ত জানিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন আদালত।

উল্লেখযোগ্য যে, এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আবেদনের পক্ষে রিটকারী আইনজীবী ‍জাহিদ আহমেদ হিরো নিজেই শুনানি করেন। এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাদ্দেস-উল-ইসলাম টুটুল।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *