রংপুর: নিজের সর্বস্ব লুট হওয়া, ভাঙচুর হওয়া, নিজের পরিবারের মানুষদের নির্যাতিত হতে দেখে মাটিতে লুটিয়ে কান্না করছেন এক হিন্দু মা।

রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের আলদাতপুর ছয়আনি হিন্দুপল্লিতে এই ঘটনা ঘটে।

দোষ কী?

ওই যে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ। যা আমরা বছরের পর বছর দেখে আসছি। এক যুবক নাকি ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননা করেছে।

তাই মোল্লারা পাশের এলাকা থেকে এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

সংখ্যালঘু হিন্দুরা কী করবে? বাংলাদেশের মৌলবাদী, তৌহিদী জনতা ভারত বিরোধী বক্তব্য দেয়, ওয়াজ মাহফিলে বরাবর হিন্দু বিরোধিতা ছাড়া আর অন্য কোনো কথা নেই।

এরা বোঝাতে চায়, ভারতে মুসলমানরা নির্যাতিত। তাই বাংলাদেশের হিন্দুদের নির্যাতন হবেই।

হিন্দু নির্যাতন করা যেন তাদের অধিকারের আওতায় পড়ে।

কে কী বলবে? নবীর নামে সবার মন জল! এই এক অপবাদ, মিথ্যা কথা বলে বছরের পর বছর এইভাবে হিন্দুদের মেরে ফেলা হচ্ছে।

যদিও এইগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। হিন্দু নিধন এদের উদ্দেশ্য। যতদিন হিন্দু শেষ না হচ্ছে ততদিন এইগুলো চলবে।

হিন্দু রঞ্জন রায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা গুজবের অভিযোগে ২০/২৫ হিন্দু পরিবারে হামলা। বাংলাদেশে হিন্দু নিধনের পরিকল্পিত ধারাবাহিকতা আর কত?

হিন্দুদের উপর হামলা যদি ‘ধর্ম অবমাননার প্রতিক্রিয়া’ হয়, তবে প্রতিদিন কোনো না কোনো অজুহাতে কেন হিন্দুদেরই রক্ত ঝরছে?

অথচ এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী মুসলমানরা যখন হিন্দুদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করে, দেবতাদের উপর প্রশ্রাব করে, ভাঙচুর করে তখন যে এরা অন্যের ধর্মে আঘাত করছে, তার কোনো বিচার নেই। আইন নেই, গ্রেপ্তার নেই। গ্রেপ্তার শুধু হিন্দুদের।

ধরেই নিলাম, কেউ একজন নবীজীর নামে অশ্রাব্য কিছু বলেছে যদিও এর কোনো প্রমাণ নেই, কোনো ভিডিও নেই, কোনো স্ক্রিনশট নেই, নেই কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত।

অথচ, তাকে মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছে!

যেভাবে মিথ্যা হত্যা মামলা ঝুলছে চিন্ময় প্রভুর নামে। যার হত্যার সাথে চিন্ময় প্রভুর কোনো হাত নেই।

একমাত্র হিন্দু বলে তাঁকে জেলে রাখা হয়েছে।

একটা অজুহাত লাগবে, সেই অজুহাত খুঁচিয়ে বের করে উগ্র ধর্মান্ধ মুসলিম জনতা হামলা করেছে ২০/২৫ টি হিন্দু পরিবারের ওপর! ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, লুটপাট করেছে, নারী নির্যাতন করেছে তবুও বাংলাদেশের প্রশাসন নীরব!

একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগে এতগুলো পরিবার দায়ী কীভাবে হয়?

মুসলমানদের ‘ধর্ম অবমাননার’ নামে এতো হিংস্র উগ্রতা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

শান্তির ধর্ম ইসলাম কী এই বার্তা দেয় “অভিযোগ করলেই সংখ্যালঘুদের ঘর পুড়িয়ে দাও?রাষ্ট্র ও প্রশাসনের ভূমিকা কোথায়?

বাংলাদেশের স্বাধীনতার শুরু থেকেই সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর বর্বর নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড এক গভীর উদ্বেগজনক বাস্তবতা। আজও সেই নির্যাতন থেমে নেই।

মিথ্যা গুজব, রাজনৈতিক অপব্যবহার ও মৌলবাদী উসকানির ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত অব্যাহত রয়েছে।

হিন্দু নিধন মানে ধর্মান্ধ মুসলমানদের কাছে বেহেস্তের চাবি হাতে পাওয়া। বেহেস্তের লোভে এরা জাগতিক পৃথিবী ধ্বংস করে ফেলতে পারে।

একটি রাষ্ট্র তখনই সভ্য হয়, যখন সে দুর্বল ও সংখ্যালঘুর পাশে দাঁড়ায়।আর যদি রাষ্ট্র নিরব থাকে, তাহলে ইতিহাস তাকে ক্ষমা করবে না।

বাংলাদেশের রংপুর জেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলতাতপুর নামে পুরো একটি হিন্দু গ্রাম মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। গ্রামটি এমন ভাবে লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে যে মনে হবে কোন বিধ্বংসী টর্নেডো গ্রামটির উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে।

গ্রামে একজন হিন্দু মানুষও অবশিষ্ট নেই।পুরো গ্রামটি শ্মশানে পরিণত হয়েছে।

এত বিভৎস মানুষ হতে পারে?

হিন্দুদের এই দেশে আর থাকতে দেয়া হবেনা এই জিহাদি মনোভাব নিয়ে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে।

নবী আসলে একটা অজুহাত, মূল উদ্দেশ্য হিন্দু নিধন। এবং ইউনূসের কালে সেটা খুব মসৃণভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *