চট্টগ্রাম: বিশিষ্ট শিক্ষা ও ইতিহাস-গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. সুনীতি ভূষণ কানুনগো আর নেই।
শনিবার বিকেল ৪ টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। যিনি বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য ও দর্শনের উপর অসংখ্য মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেছেন।
তিনি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়া গ্রামে ১৯৩৪ সালের ২৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন এবং তার পিতা ছিলেন স্বনামধন্য ঐতিহাসিক ড. কালিকারঞ্জন কানুনগো।
রবিবার সকাল ১১ টার দিকে বোয়ালখালী গ্রামের বাড়িতে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরই নিকটাত্মীয় ও বিশিষ্ট সংস্কৃতিসেবী দোলন কানুনগো।
জানা যায়, ড. সুনীতিভূষণ কানুনগো চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানার কানুনগোপাড়া গ্রামের একটি অভিজাত পরিবারে ১৯৩৪ সালের ২৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা পুলিন বিহারী কানুনগো বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়া ড. বি. বি. উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
অধ্যাপক কানুনগোর স্ত্রী লীনা কানুনগো বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সুখ্যাত অধ্যাপক ছিলেন এবং চট্টগ্রাম বেতারের নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন।
বছর দুয়েক আগে আকস্মিক মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁদের দু’ছেলের প্রথম ছেলে দুরারোগ্য ব্যাধিতে ১৪ বছর বয়সে অকাল প্রয়াত।
দ্বিতীয় ছেলে ‘ফরেস্ট্রি ও এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সে’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি পাস করে স্বউদ্যোগে স্কলারশিপ লাভ করে আমেরিকার নিউইয়র্ক গিয়ে নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্ত এবং সেখানেই বাস করছেন।
ড. কানুনগোর একমাত্র কনিষ্ঠ ভাই ড. সুকৃতি ভূষণ কানুনগো কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নশাস্ত্রে পিএইচ ডি. ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি এখন রসায়ন বিজ্ঞানী।
ড. সুনীতিভূষণ ১৯৬০ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ইতিহাসে এমএ ডিগ্রি লাভ করার পর স্বগ্রামের স্যার আশুতোষ কলেজে শিক্ষকতায় যোগদান করেন।
১৯৬২ সালে তাঁর জ্যেষ্ঠ পিতৃব্য উপমহাদেশের প্রথিতযশা ঐতিহাসিক ড. কালিকারঞ্জন কানুনগোর নির্দেশে ইতিহাসে গবেষণার কাজে ব্রতী হন।
তাঁর গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বাংলাদেশের স্বনামখ্যাত ঐতিহাসিক ড. আবদুল করিম। ড. সুনীতিভূষণ ছিলেন তাঁর প্রথম গবেষক ছাত্র।
তাঁর লেখা “চট্টগ্রামের প্রাচীন ইতিহাস” এবং “পার্বত্য চট্টগ্রাম: ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতি”, বাংলার ইতিহাস প্রাচীন যুগ তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে অন্যতম।
তাঁর অজস্র মৌলিক গ্রন্থরাজির মধ্যে রয়েছে বাংলা ও ইংল্যান্ডের ইতিহাস নিয়ে লেখা বই, যা বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছে।
