ঢাকা: দেলোয়ার হোসেন সাঈদী যে রাজাকার সেটা আজ জন্ম নেয়া শিশুটিও জানে!

একাত্তরের আগে ছিলেন মুদি দোকানদার ও তাবিজ বিক্রেতা। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে হয়ে গেলেন প্রথমে শান্তি কমিটির সদস্য ও পরে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে গণহত্যা ও নির্যাতনে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছেন দেইল্লা সাঈদী।

পিরোজপুরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, নির্যাতন, লুটতরাজসহ নানা যুদ্ধাপরাধের অন্যতম হোতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী।

তার এসব অপকর্মের বহু নজির ও সাক্ষী আজো পাওয়া যাবে তার হাতে নির্যাতিত হয়ে বেঁচে থাকা পিরোজপুরের স্বজনহারা মানুষের ঘরে ঘরে।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সফলভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাঈদী পিরোজপুরে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন।

ট্রাইব্যুনালে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় আসার পর আপিল করেছিলেন সাঈদী। বছর দেড়েক পর ২০১৪ সালের শেষে আপিল বিভাগ সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।

সেই দণ্ড ভোগ করার মধ্যে ৮৩ বছর বয়সে সোমবার অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি।

তবে রাজাকার সাঈদির প্রশংসায় দ্রবীভূত হলেন সুখরঞ্জন বালি। এখন রাজাকারের শাসন, জঙ্গীর উত্থান, এই হিন্দুকে জোরপূর্বক বলানো হয়েছে অথবা নিজের শাস্তি কিছু কমানোর জন্য তিনি এমনটা করেছেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার আলোচিত সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি।

আশ্চর্যজনকভাবে তিনি জানান, সাঈদী একজন ভালো ও সৎ মানুষ ছিলেন। এজন্য তার জানাজায় গিয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সাঈদীর মামলার আলোচিত সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে অপহরণ, আটক রাখা এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল দাবি করেন তিনি।

সাংবাদিকদের বলেন, সাঈদী ভালো মানুষ ছিলেন। দুইবার এমপিও হয়েছিলেন। এমপি থাকাকালে আমরা মায়ের কোলে ঘুমিয়েছি। তাকে আমি ভাঙ্গা পুল পার করে আমার সেন্টারে নিয়ে এসেছিলোম। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, “এমপি হতে পারি আর না পারি এই রাস্তার পুল আমি করে দেব।” তিনি পরে সেটা করেছেন। সেজন্যে তার ওপর এতো মায়া ছিল আমার।

সুখরঞ্জন বালি আরও বলেন, তিনি সৎ ও ভালো মানুষ ছিলেন। এজন্য আমি তার জানাজায় গিয়েছি। ছয়-সাত লাখ মানুষ হয়েছিল সেখানে। কিন্তু আমি একা বক্তব্য দিয়েছি। এরপর আমি বাড়িতে থাকতে পারিনি ওই সময়ের সরকারের চাপে। আমি বাগানে থেকেছি।

সুখরঞ্জন বলেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার জন্য প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হয় তাকে। ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর সাক্ষ্য দিতে এলে সাদা পোশাকধারী পুলিশ মাইক্রোবাসে করে তাকে তুলে নিয়ে যায়।

গুম করে রাখা হয় ২ মাস ১৭ দিন। পরে সীমান্ত পার করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাকে। ভারতে ৫ বছর জেলে ছিলেন তিনি।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *