বিশেষ প্রতিবেদক: প্রতিবাদী মানবাধিকার সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন- সংবিধানে হাত দেয়ার চেষ্টা করবেন না। যদি হাত দেন তাহলে সে হাত কেটে ফেলা হবে।

দেশে বর্তমানে কোন আইনের শাসন নেই উল্লেখ করে দেশের অন্যতম প্রতিবাদী এই আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন- আগষ্টে যেসব মামলা হয়েছে সেসব মামলার কেন শুনানী করতে দেয়া হচ্ছেনা ?

কেন মানুষ মাসের পর মাস কারাগারের প্রকোষ্ঠে থাকবে। তাদের জামিন কেন দেয়া হবেনা, তাদের মামলার শুনানী কেন করা হবেনা ?

‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক বিশেষ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেড আই খান পান্না এসব কথা বলেন।

গত শুক্রবার(১ আগষ্ট) সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের হল কক্ষে এই সেমিনারের আয়োজন করে মানবাধিকার রক্ষা ও সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

সংবিধান নিয়ে কয়েকজন বিদেশী নাগরিক নাক গলাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা বিদেশী নাগরিকত্ব ত্যাগ করে বাংলাদেশে এসে রাজনীতি করুন, দেখবো কতটুকু করতে পারেন।

আমার কোন রাজনৈতিক দল নেই। তবে আমার একটি রাজনৈতিক দল আছে- তা হলো আমি দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযোদ্ধা। এর চেয়ে বড় পরিচয় আর দরকার নেই।

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্তে¡র কবর দিয়েই বাংলাদেশের উৎপত্তি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান বলেন, অতএব এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো জায়গা নেই।

এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন তিনি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। এখন মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখা যায় বলেও মন্তব্য করেন জেড আই খান পান্না।

কান্না জড়িত কণ্ঠে জেড আই খান পান্না বলেন, তিনি জীবনে কোনো দিন জ্ঞানত অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেননি। মুক্তিযোদ্ধার গলায় দেখি জুতার মালা, জুতা দিয়ে বাড়ি দেয়, অথচ কিছু করতে পারেন না তিনি।

সে কারণে তিনি সবচেয়ে বড় অসহায়। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন তাঁরা যেন রুখে দাঁড়ান, সেই আহ্বান জানান তিনি।

৩০ লাখ মানুষ, ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, এর সঙ্গে কারও তুলনা চলে না মন্তব্য করে জেড আই খান পান্না বলেন, এই দেশ সাম্প্রদায়িকতার দেশ না।

সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে সংখ্যালঘু, নারী ও শিশুদের ওপর চলমান সহিংসতা এবং নিপীড়নের বিষয়গুলো গভীরভাবে তুলে ধরেন।

তাঁরা বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের সমালোচনা করেন।

বক্তারা নাগরিক সমাজ, আইনজীবী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

সেমিনারে এইইচআরসিবিএম বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট লাকি বাছার তথ্য উপস্থাপন করে জানান, ২০২৫ সালের জুন ও জুলাই মাসে নারী ও শিশুদের উপর যৌন সহিংসতা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ধর্মীয় নিপীড়ন, জোরপূর্বক ধর্মান্তর, ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ, মব হামলা, এবং নারী-শিশু হত্যার ঘটনা ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই ভয়াবহতা আমাদের একটি নির্মম সত্যের মুখোমুখি করে-এই দেশে নারীর শরীর এখনো যুদ্ধক্ষেত্র, শিশুরা এখনো শিকার।

বিচারহীনতার সংস্কৃতি, প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা, এবং সামাজিক লজ্জার কারণে অনেক ঘটনা সামনে আসে না। আর যেগুলো সামনে আসে, সেগুলোর বিচারও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অদৃশ্য হয়ে যায়।

এই সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অপ্রাপ্তি বেশি।

সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে যে ন্যায় বিচার, সুবিচার পাওয়ার কথা তাও পাওয়া যাচ্ছে না। দীর্ঘ সময় ধরে সংখ্যালঘুদের এভাবে চলতে হচ্ছে।

সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট ড. জে. কে. পল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না অভিযোগ করে সুব্রত চৌধুরী বলেন, মাঝেমধ্যে দুই-একজন ধরা পরলেও পরে বেরিয়ে যায়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, এই সরকারের সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব নেই।

রংপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা হলেও সরকারের বক্তব্য শুনতে পাওয়া যায় না, দুঃখও প্রকাশ করে না। বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক স্বাধীনতা বন্ধ করার জন্য, নেতৃত্বকে বন্ধ করার জন্য এগুলো করা হয়েছে।

এইচআরসিবিএম বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আহ্বায়ক আইনজীবী লাকি বাছাড়ের সঞ্চালনায় এই সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ, আইনজীবী মো. গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *