ঢাকা: জনগণ বা জনগণের কোন নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়াই বাংলাদেশে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট অনুমোদন হলো।
আর এ বাজেট অনুমোদন করলো একটি অনির্বাচিত- অগণতান্ত্রিক-অসাংবিধানিক সরকার। যে সরকারের সাংবিধানিক কোন বৈধতাই নেই।
সেই অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের জন্য ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করলো।
যেহেতু কোন সংসদ নেই বর্তমান বাংলাদেশে তাই এই বাজেটের ভালো-মন্দ নিয়ে জনগনের প্রতিনিধি হয়ে আলোচনার কোন সুযোগই নেই।
তবে জাতির উদ্দেশ্যে উপস্থাপনের আগে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পেয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। বিকেলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে এ বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তার বাজেটের আকার হচ্ছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। অর্থ উপদেষ্টার ভাষ্যমতে, একটি টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘কিছুটা সংস্কারভিত্তিক’ এই বাজেটে উন্নয়নের সুফল সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
এর আগে সোমবার ২ জুন ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় এই বাজেটের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া এ বিশেষ সভা শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হয়েছে, বৈঠকে বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।
সেই সঙ্গে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ও অর্থবিল অনুমোদন করা হয়। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদসহ অন্য উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।
কথিত জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হবে ভিন্ন আঙ্গিকে।
অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতা রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয়।
প্রচলিত নিয়মানুযায়ী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব পাস হবে ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।
প্রসঙ্গত: সংসদ ছাড়া সবশেষ সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। সেদিনও ছিল সোমবার।
তখন সালেহউদ্দিন আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এবার তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্র্বতী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে নিজের প্রথম বাজেট দিতে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সামরিক থেকে গণতান্ত্রিক বিভিন্ন সরকারে ১৫ জন অর্থমন্ত্রী বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি (অর্থ উপদেষ্টা অথবা সামরিক আইন প্রশাসকসহ) ৫৩টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন এর আগে।
তিন মেয়াদে সর্বোচ্চ ১২টি করে বাজেট দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে দুই প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এবং আবুল মাল আবদুল মুহিতের।
আওয়ামী লীগের গত চার মেয়াদে সাড়ে ১৫ বছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা দশবার, আ হ ম মুস্তফা কামাল পাঁচবার এবং আবুল হাসান মাহমুদ আলী একবার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন।
নির্বাচিত সরকারের আমলের এসব বাজেট জাতীয় সংসদেই উপস্থাপন করা হয়। পরে মাসজুড়ে সেই প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা হত সংসদে।
জুন মাসের শেষ দিকে সংসদে পাস হত নতুন অর্থবছরের বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না।
উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে তা কার্যকর করা হবে।