চট্টগ্রাম: খোদ উপাচার্যের উপস্থিতিতেই তাঁর রুমে ঢুকে এক সহকারি অধ্যাপক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করলো ছাত্র নামধারী কিছু জঙ্গী।

পরে অবশ্য ওই শিক্ষককে অন্য শিক্ষকগণ ওই জঙ্গী মব এর হাত থেকে কোনভাবে সরিয়ে তাকে নিরাপদে তাঁর বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন।

এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের ক্যাম্পাসে। কুশল বরণ চক্রবর্তী সনাতনী জাগরণ জোটের অন্যতম সংগঠক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত ও পালি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শুক্রবার উপাচার্যের অফিসকক্ষে সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষকের পদোন্নতি সংক্রান্ত গঠিত বোর্ডের সদস্যদের সামনে পদোন্নতি প্রত্যাশি সহকারি অধ্যাপক ড. কুশল বরণ চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।

এ খবর জানতে পেরে ছাত্র নামধারী কিছু জঙ্গী যারা ইসলামী ছাত্র শিবির ও হিযবুত তাহরীর এর সদস্য তাঁরা হঠাৎ করেই উপাচার্যের অফিস কক্ষে ঢুকে কুশল চক্রবর্তীকে লক্ষ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

এসময় উপাচার্য মোহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারকে চুপ করে বসে থাকতে দেখা গেছে। অথচ তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। তিনি চাইলে এই চরম উদ্ধত ছাত্র নামধারী জঙ্গীদেরকে পুলিশ বা সেনাবাহিনীর হাতে সোপর্দ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি।

কারণ তিনি নিজেই ওই ছাত্র নামধারী জঙ্গীদের পক্ষের লোক হিসেবে বহুল পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়লে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো হয়।

একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে দাঁড়িওয়ালা এক উগ্র লোক গালি দিতে দিতে মারমুখী হয়ে কুশল বরণ চক্রবর্তীর দিকে তেঁড়ে গেছে। এসময় কুশল চক্রবর্তী তার আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য উঠে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে চাইলে তাকে কোন কথা বলতে দেয়া হয়নি।

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ও দু:খজনক বিষয় হলো, পুরো ঘটনার সময় উপাচার্য ইয়াহইয়া এই জঙ্গী মারমুখী মব কে সামলানোর কোন চেষ্টা করেননি।

পদোন্নতি সংক্রান্ত কমিটির কয়েকজন শিক্ষকের প্রচেষ্টায় সংস্কৃত বিভাগের সহকারি অধ্যাপক কুশল চক্রবর্তী এ যাত্রা বেঁচে যান।

এসময় ওই পদোন্নতি সংক্রান্ত বোর্ড এবং বোর্ডের কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু প্রশাসনিক ভবনের সামনে জনা পঞ্চাশেক শিক্ষার্থী নামধারী জঙ্গী তাদের হাতে কুশল চক্রবর্তীকে তুলে দেয়াসহ নানা দাবিতে অবরুদ্ধ করে রাখে।

সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ নামে একটি সংগঠনের সাথে যুক্ত শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তী বলেন, “পদোন্নতি বোর্ডে গিয়ে আমি জঘন্য একটা ঘটনার শিকার হয়েছি। তারা আমার সাথে মব সন্ত্রাস করেছে।

“আমি প্রশাসনিক ভবনের সামনে যখন সিএনজি থেকে নামি তখন কয়েকজন সেখানে স্লোগান দিচ্ছিল। সিএনজিতে বসা অবস্থায় আমি ভিসি ও প্রোভিসি স্যারকে ফোন দিই। উনারা ফোন না ধরায় আমি উপরে উঠি।”

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কুশল বরণ চক্রবর্তী বলেন, “সেখানে গিয়ে দেখি তারা আগে থেকেই ভিসি স্যারের রুমে আছে। তখন তারা আমাকে ঘিরে ধরে। আমি বলেছি, আসুন একসাথে কথা বলি। যত প্রশ্ন আছে আমি জবাব দিতে চাই।

“কিন্তু তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থাকে। আমার নামে কোন মামলা নেই। তারা ছাত্র কিনা আমি চিনি না। তবে তাদের আচরণ ছাত্রের মত মনে হয় না। আমি তাদের শান্ত হতে বলেছি। কিন্তু তারা আমার সাথে মব করে। আমাকে বের হতে দেয়নি।”

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *