ঢাকা: ‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে সঙ্গীতে…

প্রদীপ-শিখা সম কাঁপিছে প্রাণ মম…’

জাতীয় ক‌বি কাজী নজরুল ইসলামের গান‌টি‌কে স্মরণীয় ক‌রে রাখ‌তে, শিল্পী মুনমুন আহমে‌দের হাতের একটি ছবিকে অনূকরণ ক‌রে, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাস্কর্যবিদ মনিন্দ্র পাল তৈরী করেছিলেন “অঞ্জলি লহ মোর”।

সংস্কৃ‌তি বি‌দ্বেষী এক‌টি ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে খু‌শি কর‌তে সে‌ই ম্যুরালটিকে ভেঙে ফেলা হলো।

আসলে সুন্দর, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি কোনোকিছু এই মৌলবাদী গোষ্ঠী সহ্য করে না। ভাস্কর্য তো থাকবেই না দেশে।

৫ আগস্ট দেশে প্রশাসনিক পটপরিবর্তনের পর তৌহিদী জনতা ভাস্কর্যটির দুটি হাতের আঙুল ভেঙে দেয়।

এরপর থেকে প্রশাসনিকভাবে এটি ভেঙে ফেলার দাবি ওঠে। নতুন প্রশাসন মঙ্গলবার ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করে।

মুনমুন আহমেদ স্বয়ং তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন:

“অঞ্জলি লহ মোর”
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মূরাল।
যেটি আমার হাতের ছবি থেকে করা হয়েছিল। এটি ভাস্কর্যবিদ মনিন্দ্র পাল করেছিলেন। খুবই দুঃখজনক এই মুহূর্তে সেটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে’!

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন হওয়া ভাস্কর্যটি কবির একটি গানের নামানুসারে তৈরি হয়েছিল।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো আক্রান্ত হয়েছেনই এই দেশে, এবার বিদ্রোহী কবি নজরুলও আক্রান্ত জঙ্গী বাংলাদেশে।

একজন নারী দুহাত সংযুক্ত করে অঞ্জলি দিচ্ছে, ম্যুরালটি সেই ভাবনা বহন করতো।

যেটি দেশের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী, নৃত্যপরিচালক, নৃত্য প্রশিক্ষক ও অভিনেত্রী মুনমুন আহমেদের হাতের ছবি থেকে করেছিলেন ভাস্কর্যবিদ মনিন্দ্র পাল।

কী দোষ করলো এটি?

একজন জানতে চেয়েছেন, ‘কেন ভেঙে ফেলা হচ্ছে?’ সেই প্রশ্নের জবাবে মুনমুন লিখেছেন, ‘দেশে কোন ভাস্কর্য থাকতে দেয়া হবে না!’

ম্যুরালটি ভেঙে ফেলা হয়েছে ভাইস চ্যান্সেলরের নির্দেশে, জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতায়।

আর কতো? আর কতো বাড়াবাড়ি?

বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হাত দেবার সাহস করেনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী, মেজর ডালিমের মতো হত্যাকারী, সাহস করেনি সেনাশাসক জিয়াউর রহমান, এরশাদের মতো রাজনীতিবিদ, খালেদা জিয়া, ফখরুদ্দিন, মইনুদ্দিন কেউই।

কিন্তু সেই বাড়িটি ভেঙেছে ৭১ এর পরাজিত সন্তানেরা।

আজ সব কিছুতে হাত দেয়ার সাহস হয়ে গেছে।

একটি কথা না বললেই নয়, মুনমুন আহমেদ কিন্তু জুলাই ষড়যন্ত্রে সমর্থন দিয়েছিলেন। হয়তো না বুঝেই দিয়েছিলেন।

প্রোফাইল লাল করেছিলেন। তবে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া ও ভেঙে ফেলার পর তিনি প্রতিবাদ করেননি।

অথচ আজ মুনমুন আহমেদের কলজেতেই আঘাত করা হলো।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *